সময় অসময়- ২৩
২৪ মে ২০২২, ০৮:৪০ পূর্বাহ্ণ

মীর লিয়াকত ::: আমার এক এফবি বন্ধু তার প্রায় সব লেখায় দেশ অঞ্চল এবং অঞ্চলের অবস্থান নিয়ে ইতিহাসভিত্তিক তথ্যাদি উপস্থাপন করেন, করেন মানে করতে ভালোবাসেন। এই প্রেক্ষিতে তাকে বিভিন্ন মাধ্যম ঘাটাঘাটি করতে হয় এবং এটাই স্বাভাবিক। কারন তা না হলে অথেনটিক তথ্য যথাস্থানে সংযোজন সম্ভব নয় এ কথা বলাই বাহুল্য। বন্ধটিুর ডাকনাম তানি। তো এই লেখাটায় আমি তানি’র লেখাকে সম্পৃক্ত করছি প্রসঙ্গক্রমে। আর পাশাপাশি তার প্রতি জানাই অকৃত্রিম কৃতজ্ঞতা। একটা দেশের যে যে ভালো সূচক থাকে তার সবগুলোতেই দক্ষিণ এশিয়ার থেকে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর ভালো। দক্ষিণ এশিয়ার সাথে তুলনা করলে পূর্ব দক্ষিণ এশিয়ার ১১ টা দেশ নিয়ে গঠিত ” আসিয়ান ” অঞ্চলের দেশগুলো অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে। জীবন ব্যবস্থা এবং অর্থনৈতিক সাফল্যের কথায় বলি ! সিঙ্গাপুর খুবই উচ্চ পর্যায়ে ধনী দেশ। ধ্রনাইও ভালো পর্যায়ের ধনী দেশ।মালয়েশিয়া মোটামুটি ধনী দেশ।থাইল্যান্ড মধ্যম আয়ের দেশ। আগামী বছর তারা উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি পাবে।
ইন্দোনেশিয়া মধ্যম আয়ের দেশ।ভিয়েতনাম এবং ফিলিপাইন আগামী বছরই মধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি লাভ করবে ওগঋ এবং ডড়ৎষফ ইধহশ থেকে আন্তর্জাতিক ভাবে। লাওস, কম্বোডিয়া ও পূর্ব তিমুর আমাদের বাংলাদেশের মতই নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ। শুধুমাত্র মায়ানমার গরীব দেশ। আন্তর্জাতিক সুখ সূচকে, শান্তপ্রিয় দেশ হিসেবে ও সভ্য দেশ হিসেবেও তারা দক্ষিণ এশিয়ার থেকে এগিয়ে। উন্নত জীবনযাত্রার মান, রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা, গড় আয়ু ও উন্নত চিকিৎসা,মাথাপিছুআয় দৈনিক ইনকাম, মানসম্মত খাবারের দিক দিয়ে তারা এগিয়ে। তাদের দারিদ্র্যতার হার দক্ষিণ এশিয়ার চেয়ে অনেক কম। এবার আসা যাক, উন্নত পরিবেশ ও বসবাসযোগ্যের শহরের দিক দিয়ে। পৃথিবীর আবাসযোগ্য সেরা ১০ টা শহরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছে আমাদের দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো এবং বায়ু দূষণ পরিবেশ দূষণ শহরের মধ্যেও দক্ষিণ এশিয়া শীর্ষে। পৃথিবীর অবসবাসযোগ্য ১০০ টা শহরের মধ্যে ৬৩ টিই ভারতের এবং আমাদের ঢাকা চট্টগ্রাম রয়েছে একদম প্রথম দিকে। (সুত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা)
এবার দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দিকে আসা যাক,সিঙ্গাপুর সিটি, কুয়ালালামপুর, ব্যাংকক এগুলো খুবই উচ্চ পর্যায়ের উন্নত মানের শহর।এছাড়া জার্কাতা,হ্যানয়,ম্যানিলাও অনেক উন্নত মানের শহর।তাদের উৎপাদন ক্ষমতা এবং রপ্তানির হারও দক্ষিণ এশিয়ার থেকে এগিয়ে। অনেক সময় দেখা যায় যে শস্য কৃষি পণ্যে উৎপাদনের দিক দিয়ে ভারত যদি ৩য় থাকে, তখন দেখা যায় যে ইন্দোনেশিয়া ৪র্থ,৫ম এ রকম স্হানে থাকে।কিন্ত জনসংখ্যার দিক দিয়ে দেখা যায় যে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সব দেশের জনসংখ্যা ভারতের জনসংখ্যার ৩ ভাগের ১ ভাগ হয়। বহিঃবিশ্বে সন্মান এবং মর্যাদার দিক দিয়েও তারা দক্ষিণ এশিয়ার থেকে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া এগিয়ে। সিঙ্গাপুর মালয়েশিয়া ব্রুনাই এই তিন দেশের মানুষ ভিসা ছাড়া পৃথিবীর ১৮০+ দেশে যেতে পারে যেকোনো সময়। যা এই দেশগুলোর মানুষের জন্য বিরাট একটা সাফল্য। বাদবাকি দেশগুলোর অবস্থাও অনেক ভালো দক্ষিণ এশিয়ার সার্কভুক্ত দেশগুলোর চেয়ে। আমাদের বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ আছে ৪৮ বিলিয়ন। এতেই আমরা কত গর্ববোধ করি। অন্যদিকে ভিয়েতনামের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ আছে ১০৪ বিলিয়ন, মালয়েশিয়ার আছে ১০৬ বিলিয়ন, ফিলিপাইন এর আছে ১০৭ বিলিয়ন। বাকি এই সংবাদটা শুনলে আপনি অবাক হয়ে যাবেন ! সিঙ্গাপুর থাইল্যান্ড ইন্দোনেশিয়া মিলে মোট বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ আছে ৮৮০ বিলিয়ন। হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন। বিশ্বাস হচ্ছে না ! বপড়হড়সু ড়ভ ইধহমষধফবংয, ঠরবঃহধস গধষধুংরধ চযরষরঢ়ঢ়রহবং ঝরহমধঢ়ড়ৎব লিখে সার্চ দেন পেয়ে যাবেন না। ওদের শিক্ষার মানও আমাদের থেকে অনেক অনেক এগিয়ে। সিঙ্গাপুর মালয়েশিয়া থাইল্যান্ডে অনেক নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় আছে। চিকিৎসা ব্যবস্থার দিক দিয়েও তারা অনেক এগিয়ে। সিঙ্গাপুর থাইল্যান্ড মালয়েশিয়ার চিকিৎসা ব্যবস্হা অনেক উন্নত। এই তিন দেশে অনেক ভালো মানের নামকরা মেডিকেল কলেজ ও মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় আছে। এবং সেখানে চিকিৎসা বিজ্ঞান নিয়ে ভালো মত গবেষণা হয়।অন্যদিকে দক্ষিণ এশিয়াতে শুধুমাত্র ভারতের চেন্নাইয়ে হাতে গোনা ২,১ টা উন্নত মানের মেডিকেল কলেজ আছে।আর বাদবাকি দেশের অবস্থা ভালো না একদমই। দক্ষিণ এশিয়ার একটা দেশের মন্ত্রী পরিষদের ৯ জনই একই পরিবারের মানুষ। ১ জন রাষ্ট্রপতি ১ জন প্রধানমন্ত্রী এবং বাকি ৭জনই নানা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ওই দেশটির রাষ্ট্রীয় অর্থনীতির লেনদেন এর ৭৫% ই হয় একই পরিবারের দ্বারা।যা দেশটির দুর্নীতিতে সহায়তা করেছে। কারণ আপনার পরিবারের এক ভাই যদি দুর্নীতি করে তাহলে কিন্ত আপনি আরেক ভাই সংসদে তার দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা সমালোচনা করা ইত্যাদি সহ বিচার চাইবেন না !
এভাবেই দেশটি এক ভাইয়ের চেয়ে অন্য ভাই কিভাবে বেশি দুর্নীতি করতে পারে তা নিয়ে প্রতিযোগিতা হত।প্রকৃত ভাবে পরিবারতন্ত্র বাদ দিয়ে ১০ জাতির, ১০ জেলার,১০ ধর্মের ১০ জনকে নিয়ে মন্ত্রী পরিষদ গঠন করা উঠিত,তাহলে এই ক্ষেত্রে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংসদে শক্তিশালী প্রতিবাদস্বরুপ আওয়াজ থাকে।সুশাসনও পাওয়া যায়। এখন ওই পরিবারতন্ত্র দেশটির বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ আছে মাত্র ২ বিলিয়ন। তাও সেটা সপ্তাহ খানিক আগেকার নিউজ।দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশেই অনেক সরকার অনেকদিন ক্ষমতায় থেকেছে। লি কুয়ান ইউ অনেকদিন ক্ষমতায়থাকার পরে তার ছেলে ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় গেলেও তার মন্ত্রী সভায় কোনো পরিবারতন্ত্র নেই। ১০ জেলার ১০ জাতির ১০ জনকে নিয়ে মন্ত্রী পরিষদ গঠিত।
মাহাথির বিন মুহাম্মাদ অনেকদিন ক্ষমতায় ছিলেন কিন্ত তার মন্ত্রী পরিষদেও কোনো পরিবারতন্ত্র ছিল না।মাহাথির এর নিজেদের ৩ জন মেয়ে এবং দত্তক নেয়া ৪ জন মেয়ে সহ মোট ৭ জন মেয়ে। তার মেয়েদের একজন অর্থনীতিবিদ,একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর,একজন ডাক্তার এবং একজন সাংবাদিক এবং লেখক। আর বাকি ৩ জনের বিষয়ে জানি না।ভিয়েতনাম সমাজতান্ত্রিক একনায়কতন্ত্র দেশ হলেও তাদের মন্ত্রী সভায় পরিবারতন্ত্র নেই,ইন্দোনেশিয়ার বর্তমান সরকারের আমলে অর্থনীতি অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে উডো আমীন এর মন্ত্রী পরিষদেও পরিবারতন্ত্র মুক্ত এবং তাদের অর্থমন্ত্রী একজন কখনো রাজনীতি না করা অর্থনীতিবিদ নারী। যিনি পূর্বে যথাসম্ভব জাতিসংঘের অর্থনৈতিক বিষয়ে কাজ করতেন।থাইল্যান্ডের বিষয়ে সঠিক তথ্যটা দিতে পারছি না। তাও মনে হয় পরিবারতন্ত্র নেই। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার কোনো দেশ ঋণগ্রস্ত আছে কি না জানি না ! তবে এটা ১০০% দিয়ে বলা যায় শুধুমাত্র মায়ানমার বাদে বাকি ১০ টা দেশের দেউলিয়া হওয়ার কোনো সম্ভবনা নেই।অন্য দিকে মালদ্বীপ বাদে দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশে অবস্থায় ভালো না।মালদ্বীপই শুধুমাত্র দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ১০০% ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত দেশ। এছাড়া তাদের গুড় আয়ু ৮০ বছর।দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র মোটামুটি ধনী দেশ। অনেকেই বলবেন ভুটান সুখি দেশ?এটা একটা ডাহা মিথ্যা কথা। আন্তর্জাতিক সুখ সূচকে পৃথিবীর ৭০ টা দেশের মধ্যেও তাদের নাম নেই। তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ, মানুষের মুজুরি খুবই কম।তাদের অর্থনীতির ৯৫%ই ভারতের উপর নির্ভরশীল সেজন্য ভুটানে নিজেদের মুদ্রার চেয়ে ভারতীয় মুদ্রার জনপ্রিয়তা এবং প্রচলন বেশি। এছাড়া ভুটানের মানুষদের ব্যাক্তিস্বাধীনতা এবং মুক্ত গণতন্ত্র সূচকেও খুবই খারাপ।
বর্তমানে প্রায় সকল ক্ষেত্রেই সার্কভুক্ত দক্ষিণ এশিয়ার চেয়ে অ্যাসিয়ান ভুক্ত পূর্ব দক্ষিণ এশিয়ার অবস্থা ভালো। অথচ ১০০ বছর পূর্বেও তাদের অবস্থা ভারতবর্ষের দেশগুলোর চেয়ে অনেক অনেক খারাপ ছিল।ভারতবর্ষে যখন শিল্প কলকারখানায় এবং ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি গঠিত হয়।তখন দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশের মানুষ জানতই এগুলো কি? কারণ তখন তারা শুধু মাছ ধরা ছাড়া কিছু পারত না। স্কুল কলেজ তো দূরের বিষয়। কিন্ত তখন দক্ষিণ এশিয়া চাষাবাদসহ সব দিক দিয়ে এগিয়ে।
ভারতবর্ষের অনেক স্কুল কলেজই ১৭০০, ১৮০০ শতকে অথচ সিঙ্গাপুরে মালয়েশিয়ার সব স্কুল কলেজই ১৯০০ শতকের পরে তৈরি। মুক্ত গণতান্ত্রিক দিক দিয়েও ওরা আমাদের চেয়ে তুলনামূলক ভালো আছে। মালয়েশিয়া ৩৯ নম্বরে পূর্ব তিমুর ৪৩ নম্বরে।ইন্দোনেশিয়া ৫২ নম্বরে।সিঙ্গাপুর ৫৯ নম্বরে। অন্যদিকে তুলনামূলক ভাবে ভারত ছাড়া বাদবাকি কোনো দেশের গণতন্ত্র সূচকই ভালো নেই।
– মীর লিয়াকত :: সব্যসাচী লেখক ও সংস্কৃতিজন