ইন্টারনেটের আসক্তিতে সামাজিকতা ভুলতে বসেছে মানুষ
মাহফুজ আদনান :::
মানুষ সামাজিক জীব । সামাজিকতা বা পারস্পরিক সম্পর্ক ছাড়া কেউ সমাজে থাকতে পারে না । আর সমাজে বেচে থাকতে হলে সকলের সাথে সু সম্পর্ক না রাখলে সেক্ষেত্রে বেচে থেকে কি লাভ ? আজকাল ইন্টারনেটের ব্যবহার সহজ হয়ে গেছে । যে কোন বয়সের ছোট বড় সকলেই ইন্টারনেটে আসক্ত । ইন্টারনেটের আসক্তিতে সামাজিকতা ভুলতে বসেছে মানুষ ।
প্রযুক্তির সফল ব্যবহার মানুষের হাতে এনে দিয়েছে অভাবনীয় অর্জন। একই সঙ্গে পেছনের ব্যর্থতাকে বিদায় জানাতে এবং জটিল কাজগুলো সহজ করতে প্রযুক্তি নির্ভরতা বাড়ছে দিনের পর দিন। যে দেশের প্রযুক্তি যত উন্নত, সে দেশ অর্থনৈতিক দিক থেকেও তত উন্নত।
বিশ্ব এখন আছে ডিজিটাল যুগে। সবকিছুই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে ডিজিটাল পদ্ধতিতে। এ কারণে, বিশ্বের প্রায় সব অংশ সম্পৃক্ত হয়েছে ইন্টারনেটে। আর তাই বেড়ে চলেছে ইন্টারনেটের ব্যবহারকারীর সংখ্যা। এ ক্ষেত্রে গত ১০ বছরে অস্বাভাবিক হারে ইন্টারনেটের ব্যবহার বেড়েছে এশিয়ায়। এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি ইন্টারনেট ব্যবহার করেন চীনের নাগরিকেরা। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বৃদ্ধির হার ৮০ হাজার ৩৮৩ শতাংশ, বর্তমানে ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৯ কোটি ৫ লাখ।
তরুণদের আত্মহত্যার সাম্প্রতিক তথ্য ইন্টারনেটের সম্ভাব্য প্রভাবকে তুলে ধরেছে। যুবকরা মানসিক সমস্যা গুলো কাউকে শেয়ার না করে ইন্টারনেটে সমাধান খুঁজতে যায়, উল্টো ইন্টারনেট সাইটের মাধ্যমে তারা আত্মহত্যার প্রতি উৎসাহিত ও প্রভাবিত হতে থাকে। একটি গবেষণায় দেখা যায়, আত্নহত্যাকে আকর্ষনীয় করতে কিছু ইন্টারনেট সাইট, অনলাইন ব্যবস্থা রয়েছে। যেগুলোর মাধ্যমে যুবকদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা ইউরোপ আমেরিকা সহ পুরো বিশ্বে মহামারি আকার ধারন করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু উৎস-মূলত যারা প্রচুর মানসিক চাপে ভোগে তারা আত্মহত্যাকে মুক্তির পথ হিসেবে বেছে নেয়। আত্মহত্যাকে এতই আকর্ষনীয় ভাবে উপস্থাপন করা হয় যে- দৈনন্দিন জীবনের ছোট খাটো অভিমান, হতাশাকে কেন্দ্র করেও মানুষ আত্মহত্যার জন্য উৎসুক হয়ে যায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর মতে, প্রতিবছর আত্মহত্যার কারনে প্রায় ৮ লক্ষ মানুষ মারা যায় যা প্রায় প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন ব্যক্তি। প্রতি একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির আত্মহত্যার ফলে আরো ২০ জন অনুপ্রাণিত হয়। আর সামাজিকভাবে থাকতে হলে ইন্টারনেটের সীমিত ব্যবহার জরুরি । ঘরে বাইরে ইন্টারনেটের ব্যবহার সবকিছু সহজ করেছে ঠিকই । কিন্তু এর পরিমিত ব্যবহার প্রয়োজন । তা না হলে মানুষ অসামাজিক জীবে পরিণত হবে । একথা কেন বলা হয়েছে তার একটু ব্যাখ্যা দিই ইন্টারনেট আসক্তি এখন এমন পর্যায়ে পৌছেছে যেমন কেউ পারিবারিক আড্ডা বা মিটিং এ বসছেন এখন সবাই ফাকফোকরে আর আড্ডার মাঝখানে মোবাইলে ইউটিউব, ফেসবুক বা হোয়াটসআপে চ্যাটে ব্যস্ত । আজ থেকে বেশ কয়েকবছর পূর্বে যেভাবে প্রাণখুলে সবাই কথা বলতো এখর আর সে সময় নেই । সবাই যেন যন্ত্রমানব হয়ে গেছে । মোবাইল আর ইন্টারনেট আসক্তি মানুষের মেধা বা মনকে সংকুচিত করে ফেলছে । পারস্পরিক আড্ডা বা আনন্দ কমে যাচ্ছে । এটা ভবিষ্যতের জন্য অনেক বড় ধরনের
সংকট ডেকে আনছে সমাজে – রাষ্ট্রে এমনকি পারিবারিক জীবনে ।
লেখক : মাহফুজ আদনান, প্রকাশক ও প্রধান নির্বাহী, বাংলানিউজইউএসডটকম ।
Related
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।