জহির মিয়া ::মানুষের আচরণ মানুষের মনের আয়না । ভিতরের চিন্তা চেতনা এবং আবেগের বহিঃপ্রকাশ ঘটে মানুষের আচরণেও কথায় । ভালবাসা একটা নৈর্ব্যক্তিক বিষয় যা ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না, কিন্তু অন্তরে প্রচন্ডভাবে পোষে রাখা যায় ।
ভালবাসা অন্তরের অলিগলিতে ভরপুর হলে আচরণে এর বিশাল প্রকাশ লক্ষ্য করা যায় । যদি তুচ্চ তাচ্ছিল্য আর অবহেলা প্রদর্শনই ভালবাসার একমাত্র বহিঃপ্রকাশ হয় তাহলে সেখানে কপটতা আর ছলনা ছাড়া কিছুই না ।
যে লোকটা অন্তরে আপনাকে পোষে রাখবে সে আপনার একটুখানি হলেও ভাল আচরণ, ভাল দৃষ্টিভঙ্গি প্রত্যাশা করে এবং সে চায় আপনিও তার একটু খুঁজ খবর নেন । যদি শুধু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সময় কাটানোই ভালবাসার একমাত্র বহিঃপ্রকাশ হয়ে থাকে, তাহলে এটা আসলে ফ্যাশন আর সময়ের বাজে খরচা ছাড়া কিছুই না।
যে মানুষটাকে একনজর দেখার জন্য ছটপট করছেন তাকে সামনে পেয়েও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখতে হবে , পাশাপাশি হাটা চলার সময় তার সাথেই ফোনে কথা বলতে হবে ? এটা তাহলে হাস্যকর সম্পর্ক ছাড়া কিছুই না। শুধু যাত্রাপথের সময় কাটানোর সম্পর্ককে আর যাই হোক সুস্থ সম্পর্ক বলে না ।
কোন খরব না নিয়ে , কিম্বা খবর নিতে চাওয়া লোকটা যখন নক করবে তখন তাকে বাজে কথা বলে মনটাকে বিষিয়ে দেয়া , তাকে যাচ্ছে তাই কথা বলে কষ্ট দেয়া এটাকে কোনভাবেই সম্পর্কের কষ্টিপাথরে যাচাই করে সত্য বলে ধরে নেয়া যায় না ।
সম্পর্কের মানুষের পছন্দ অপছন্দের মূল্যকে হাতের তুড়িতে উড়িয়ে দিয়ে সন্দেহজনক পথেই যাত্রা করার মানে সম্পর্ক নয় । আপনাকে মন প্রাণ উজার করে অনুভব করার জন্য তাকে আপনি ব্যক্তিত্বহীন বলতে পারেন না ।
আপনার পছন্দের মানুষের অপন্দের প্রসঙ্গই যদি আপনার সবচেয়ে প্রিয় প্রসঙ্গ হয় সম্পর্ক সেখানে মুখ থুবড়ে পড়ে ।
আপনার আপন লোকটি যদি আপনার কাছে আসতে চায় তখন যদি চরমভাবে আপনি তাকে ফিরিয়ে দেন তাহলে সেটা চরম ভুল হবে । সত্যিকারের সম্পর্ক যে কোন প্রতিকূলতার মাঝেও টিকে থাকে , যদি নিঃস্বার্থ ও খাঁটি সম্পর্ক হয় ।
আপনার সময়ে অসময়ে বিপদে সংকটে যে লোকটা আপনার পাশে থাকে, তার অবদান আপনি অস্বীকার করে কোন ধরনের ইমানদার সাজতে চান সেটা কি একবার ভাববেন না ?
হয়তো সে মুখফুটে তার অবদানের কথা, পাশে থাকার কথা কোন দিন বলবে না , তার মানে এই সুযোগে আপনি সেটাকে অস্বীকার করবেন ? মোটেও সেটা ভাল সম্পর্কের জন্য কাম্য নয় ।
যদি একচেটিয়া কারো ভালবাসা পেতে চান আর সেটা যদি ধরেই নেন যে আপনি পেতেই থাকবেন তাহলে চরম ভুল । আপনাকে বুঝতে হবে সে কি চায় । একবার ভাবুন তো তার সাথে নিকট অতীতে কোন ভাল আচরণ করেছেন কি না ? নক করলে সাড়া দিয়েছেন কি না ? তার যোগাযোগে আপনি কোন ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন কি না ? যদি উত্তর`না` হয়ে থাকে তাহলে সম্পর্ক দাফন করার জন্য আপনি ই দায়ী ।
আর যদি, সময় কাটানো কিম্বা স্বার্থের জন্য সম্পর্ক স্থাপন করে থাকেন তাহলে স্বার্থ যখন ফুরিয়ে যাবে কিম্বা অন্য কোন লোকের দ্বারা যদি আপনার স্বার্থসিদ্ধির কোন সুযোগ আসবে তখন আপনি আপনার পাতানো সম্পর্কের যবনিকাপাত করে অবলিলায় অন্য প্রান্তে চলে যাবেন । তখন একবার আপনার মনেও হবে না ঐ লোকটার কথা । কারণ সম্পর্ক স্থাপনের আগে ভাবুন সে আপনার প্রয়োজন না প্রিয়জন । যদি প্রয়োজন হয়ে থাকে, আপনি আপনার প্রয়োজনে যে কারো সাথে আবারো সম্পর্কে জড়াবেন এটা নিশ্চিত ।
কোন কাজে যে কোন জনের সাথে যোগাযোগ হতেই পারে, তবে সেটা হবে স্বচ্ছ ও নির্মল । যদি কাজ আদায়ের জন্য কারোর মাঝে একেবারেই ডুবে যান তবে আপনি আপনার সম্পর্কের লোকের সাথে আর ইমানদার থাকতে পারলেন না । এটা একসময় আপনাকে নেশার মত পেয়ে বসবে । যখন যার কাছে কাজ তখনই সন্দেহজনক সম্পর্কে নিজেকে ডুবিয়ে দেয়া এ এক নেশার মত হয়ে উঠবে। তখন কে কি বলবে সেটা আর খেয়াল থাকবে না , সম্পর্ক সেখানে তুচ্চ হয়ে দাঁড়াবে সেখানে কার্যসিদ্ধিটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ।
সম্পর্ক আর স্বার্থ দুই মেরুর বাসিন্দা । আপনি যদি স্বার্থহীনভাবে, নিঃশর্তভাবে ভালবাসতে পারেন তাহলেই সেটা টেকসই হবে । তা না হলে নাটক নাটক খেলাতে আপনিও যেমন শান্তি পাবেন না অন্য লোকটার জীবনকেও নরক বানিয়ে ছাড়বেন।
@ ইউ আর সি ইন্সট্রাক্টর,হবিগঞ্জ সদর উপজেলা
Related
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।