সময় অসময় – ২৫

Daily Ajker Sylhet

newsup

০৬ সেপ্টে ২০২২, ১০:৫৪ পূর্বাহ্ণ


সময় অসময় – ২৫

মীর লিয়াকত :: হালে বিশ্ব জুড়ে সময় বড় দুঃসময়। মানুষ এখন যেন জ্ঞান আহরন করতে তেমন আগ্রহ বোধ করে না বলেই মনে হয়। আগ্রহ বোধ মানে মানুষ এ বিষয়ে সময়ই পায় না। এখন যেন প্রতিযোগিতার সময়।
বই জ্ঞান আহরনের সবচেয়ে সেরা মাধ্যম। এ কথা চিরসত্য যে বই স্মৃতি শক্তি বাড়ায়, মনোযোগি করতে বড় সহায়তা দেয় আর এটা যুগ যুগ ধরে। শিশুকাল থেকেই এই অভ্যাস গড়ে তুলতে অভিভাবকদের দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। এতে শিশুকাল থেকেই শিশুদের পাঠে মনোযোগ সুদৃঢ় হয়। শিশুদের আজেবাজ দিকে মনোযোগ দিতে সুযোগ পায় না।
“লেখাপড়া করে যে গাড়িঘোড়া চড়ে সে” এই পংক্তি শুনে বড় হয়েছি আমরা। কার্যক্ষেত্রে এই কথাটা কতটা সত্যি, এই নিয়ে নানা মুণির নানা মত রয়েছে। তবে বই পড়ার গুণকে কেবল গাড়িঘোড়ায়. আটকে রাখলে চলবে না। মানসিকভাবে আমাদের উন্নত করে তোলে বই। বইয়ের মাধ্যমেই নানা অজানা বিষয়ের সঙ্গে আমাদের পরিচয় হয়। বইয়ের মাধ্যমেই বাস্তবের পৃথিবীকে একটু অন্য চোখে, অন্য ইশারায় দেখার সৌভাগ্য হয়। তাই বই পড়া হল সবসময়ই একটি ভালো অভ্যাস। এটি হতে পারে সবার একটা বড় সম্পদ। এই সম্পত্তির উপর কারও কোনও ভাগ নেই। আপনার সঙ্গেই এই সম্পত্তি থাকবে আজীবন! বর্তমান চিকিৎসাবিজ্ঞান আবার বই পড়ার আরও নানা ভালো দিক খুঁজতে ব্যস্ত। এই বিজ্ঞান বলছে, বই পড়লে মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ থাকা যায়। বই পড়ার ভালো দিক আপনার জীবনের নানাবিধ উন্নতি হয়।
বই পড়া যে স্মৃতিশক্তি বাড়ায় এটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বই পড়লে কি স্মার্ট হওয়া যায়? নিশ্চয়ই সম্ভব। কারণ বিভিন্ন গবেষণা বলছে, বই পড়লে আমাদের মনে রাখার ক্ষমতা অনেকটাই বাড়ে। কারণ বই পড়ার মাধ্যমে মস্তিষ্কের যেই অংশটি স্মৃতি ধরে রাখার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, সেই অংশটি বিশেষভাবে হয়ে যায় সক্রিয়। তাই বই পড়লে মনে রাখার ক্ষমতা অনেকটাই বাড়ে। বই পড়লে পরিমিত ঘুম আসতে সাহায্য করে। নিশ্চই সবার ক্ষেত্রে ঘটেছে এই ঘটনা! এক্ষেত্রে বিজ্ঞান বলছে, বই পড়ার সময় এমন কিছু হর্মোন শরীরে বের হয় যা ঘুম আনতে পারে। তাই রাতে শান্তিতে ঘুমাতে চাইলে একবার বইটা হাতের কাছে টেনে নিন, আপনাআপনি চোখ বন্ধ হয়ে আসবে।
দুশ্চিন্তা কমায় বই পড়া। এখনকার জীবনযাত্রায় সকলেরই দুশ্চিন্তা থাকে। তবে বর্তমান বিজ্ঞান বলছে, বই পড়ার সময় মাথায় এমন কিছু ভালো হর্মোন বেরয় যা দুশ্চিন্তা কমানোর ক্ষেত্রে হাতিয়ার হতে পারে। তাই আর চিন্তা নেই। বয়স বাড়তে থাকলে অনেক সমস্যা দেখা দেয় সবার ক্ষেত্রে। বই পড়া বয়সকালের সমস্যা থেকে দূরে রাখে। বয়সকালেও যাঁদের নিয়মিত বই পড়ার অভ্যাস রয়েছে তাঁরা বয়সের গ্রাস থেকে অনেকটাই দূরে থাকতে পারেন। তাঁদের ভুলে যাওয়ার সমস্যা অন্যান্য মানুষের তুলনায় হয় কম। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, এই মানুষগুলির অ্যালঝাইমাসের্র মতো রোগের আশঙ্কাও অনেকটাই কমে। বই পড়া বাড়াতে পারে আয়ু। একটু বেশি সময় পৃথিবীতে কাটাতে চাইলে আপনার সঙ্গী হতে পারে বই।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, বইয়ের সঙ্গে সময় কাটানো মানুষ অন্যদের তুলনায় একটু বেশি বাঁচেন। বই পড়লে জ্ঞান-বুদ্ধি বাড়বে সে বিষয় তো কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু আপনাদের কি জানা আছে শরীর সুস্থ রাখতেও এই অভ্যাস দারুনভাবে সাহায্য করে থাকে। তাই তো নিয়মিত এক ঘন্টা করে বই পড়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। আসলে বই পড়ার সময় আমাদের মস্তিষ্কের অন্দরে বেশ কিছু পরিবর্তন হতে শুরু করে, যার প্রভাবে একাধিক রোগ দূরে পালাতে বাধ্য হয়। সেই সঙ্গে মেলে আরও অনেক উপকারিতাও। বই পড়লে শরীর সুস্থ থাকে। যে কারণে বই পরলে তার সুফল শরীরের উপরও পরে।
পরিসংখ্যান বলছে আজকের বিজ্ঞানযুগে যেসব রোগে নতুন প্রজন্ম বেশি মাত্রায় ভুগছে, তার বেশিরভাগের সঙ্গেই মানসিক চাপের সরাসরি যোগ রয়েছে। আর বই পড়ার অভ্যাস এমন ধরনের সমস্যাকে কমাতে দারুন কাজে আসে। কীভাবে এমনটা হয়? একাধিক কেস স্টাডিতে একথা প্রমাণিত হয়েছে যে বই পড়ার সময় মন খুব শান্ত হয়ে যায়, যেমনটা প্রাণায়ম করার সময় হয়ে থাকে। ফলে মানসিক চাপ কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে হার্টের রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, স্ট্রোক প্রভৃতি মারণ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়। তাই তো ঘুমতে যাওয়ার আগে প্রতিদিন এক ঘন্টা পছন্দের যে কোনও বই পড়ার অভ্যাস করলে দেখা যাবে হাতে-নাতে সুফল পাওয়া যাবে। এ ছাড়া বই পড়া মনোযোগ ক্ষমতারও উন্নতি ঘটে। কর্মক্ষেত্রে হোক কী পড়াশোনায়, যে কোনও ফিল্ডে উন্নতি করতে গেলে মনোযোগ সহকারে সেই কাজটি করা একান্ত প্রয়োজন। না হলে যতই শ্রম করা হোক না কেন কাঙ্খিত ফল মিলতে অনেক সময় লেগে যায়। আর এক্ষেত্রে আপনাকে সাহায্য করতে পারে বই। কারণ প্রতিদিন বই পড়লে ব্রেনের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ফলে উন্নতি ঘটে মনোযোগ ক্ষমতারও। প্রসঙ্গত, যারা অ্যাটেনশান ডেফিসিয়েন্সি সিনড্রমে ভুগছেন তারা আজ থেকেই বই পড়া শুরু করুন। দেখবেন অল্প দিনেই পরিস্থিতি একেবারে বদলে যাবে।
বই পড়ার সময় ব্রেনের মধ্যে থাকা হাজারো নিউরন বেশি বেশি করে কাজ করতে শুরু করে দেয়। ফলে সার্বিকভাবে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। আর এমনটা হলে একদিকে যেমন বুদ্ধির বিকাশ ঘটে, তেমনি নানা ধরনের ব্রেন ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়।
বই পড়া মানসিক শান্তির সন্ধান মেলে। সারা দিন কাজের পর বেশির ভাগ মানুষই মন-মেজাজ ভাল করতে টিভি দেখে থাকেন। কিন্তু তাতে কি সত্যিই মন শান্ত হয়? গবেষণা তো উল্টো কথা বলছে। বিজ্ঞানের কথা যদি শোনেন, তাহলে মন এবং মস্তিষ্কের ক্লান্তি দূর করতে টেলিভেশনের পরিবর্তে বইয়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতান। দেখবেন বেশি উপকার পাবেন। তাছাড়া টিভি দেখলে শরীরের কোনও উপকার হয় না, যা বই পড়লে হয়। বই পড়ার কারনে বিশ্লেষণ ক্ষমতার উন্নতি ঘটে, এটা বহুল ক্ষেত্রে প্রমানিত। কর্পোরেট অফিসে যারা চাকরি করেন, তারা ভালই জানেন অ্যানালিটিকাল পাওয়ার যাদের বেশি থাকে, তাদের কর্মক্ষেত্রে সাফল্যলাভ করার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। বই পড়ার কারনে ওজন কমে। এটাও প্রমানিত।
একেবারেই সঠিক! বই পড়লে বাস্তবিকই শরীরের অতিরিক্ত মেদ ঝরে যায়। কীভাবে এমনটা সম্ভব হয়, তাই ভাবছেন নিশ্চয়? আসলে একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে বই পড়ার সময় ব্রেনের মারাত্মক লেভেলে এক্সারসাইজ হয়। যার প্রভাবে মেটাবলিজ রেটও বাড়তে শুরু করে। আর যেমনটা অপনাদের সকলেই জানা আছে যে হজম ক্ষমতার যত উন্নতি ঘটে, তত মেদ ঝরার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়। ফলে ওজন কমতে শুরু করে। বুদ্ধির বিকাশ ঘটে বই পড়ায়। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত বই পড়ার অভ্যাস করলে ব্রেনের কর্মক্ষমতা বাড়তে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই মস্তিষ্কের একটি বিশেষ অংশের ক্ষমতা এতটা বৃদ্ধি পায় যে বুদ্ধির ধারও বারতে শুরু করে। বই তাই এতাটাই সবার বন্ধু। বই হোক সবার নিত্যসঙ্গী!


মীর লিয়াকত : সব্যসাচী লেখক ও সংস্কৃতিজন

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।