চোখ ওঠায় আতঙ্ক নয় || ডাঃ মৌসুমী ভদ্র - BANGLANEWSUS.COM
  • নিউইয়র্ক, সকাল ৭:৪১, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ


 

চোখ ওঠায় আতঙ্ক নয় || ডাঃ মৌসুমী ভদ্র

newsup
প্রকাশিত অক্টোবর ৯, ২০২২
চোখ ওঠায় আতঙ্ক নয় || ডাঃ মৌসুমী ভদ্র

এই সময়ে দেশে অনেকেরই চোখ ওঠার সমস্যা দেখা যাচ্ছে। বাড়িতে বাড়িতে ছেলে-বুড়ো কেউই চোখ ওঠার এই সাময়িক যন্ত্রণা থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। চোখ ওঠাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় কনজাংটিভাইটিস। সচরাচর ভাইরাসের কারণে এটি হয় তবে ব্যাকটেরিয়া কিংবা এলার্জিজনিত কারণেও চোখ ওঠতে পারে।ভাইরাসজনিত কনজাংটিভাইটিস ছোঁয়াচে এবং খুব দ্রুত বিস্তার লাভ করে। ভাইরাস সংক্রমনে চোখের কনজাংটিভা নামক পর্দায় প্রদাহ সৃষ্টি হয়, এসময় আক্রান্ত স্থানে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমনেরও ঝুকি থাকে। সাধারণত সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে ঋতু পরিবর্তনের সময় কিংবা যখন বাতাসের আর্দ্রতা বেশি থাকে তখন চোখ ওঠার প্রাদুর্ভাব দেখা যায়।

চোখ ওঠা ছোঁয়াচে রোগ হওয়ায় একজন থেকে অন্যজনের সংস্পর্শে খুব দ্রুত এটি ছড়িয়ে থাকে। আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহার্য টাওয়েল, গামছা, রুমাল, বিছানা ইত্যাদি অন্যরা ব্যবহার করলে আক্রান্ত হওয়ার ঝুকি থাকে। আবার আক্রান্ত চোখ হাত দিয়ে স্পর্শ করে অন্য জিনিস স্পর্শ করলেও এই রোগ সংক্রমিত হতে পারে।
সাধারনত চোখের এই প্রদাহজনিত রোগ ৭-১০ দিন স্থায়ী হয়। তবে ব্যক্তিবিশেষে এই সময়কাল কম বা বেশি হতে পারে। চোখ ওঠা রোগে আক্রান্ত হলে কিছু উপসর্গ বা লক্ষণ দেখা যায়, যেমনঃ
১। চোখ লাল হয়ে যায়। প্রথমে এক চোখ ও পরে অন্য চোখ আক্রান্ত হয়।
২। চোখের পাতা খচখচ করে ও অস্বস্তিবোধ হয়। ক্রমে চোখের পাতা ফুলে যায়।
৩। চোখ থেকে ঘন হলুদাভ বা সবুজাভ হলুদ বর্ণের পদার্থ বের হয় যা পিচুটি বা কেতর নামে পরিচিত। অনেক সময় রাতে পিচুটি জমে শুকিয়ে গেলে সকালে ঘুম থেকে উঠার পর চোখের দুই পাতা লেগে থাকে।
৪। চোখ দিয়ে পানি পড়ে ও ব্যথা করতে পারে।
৫। আলোর দিকে তাকালে চোখে জ¦ালাপোড়া করতে পারে। নিচের দিকে তাকালে টনটন ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
এসব সাধারণ উপসর্গ ছাড়াও ব্যক্তিবিশেষে জ¦র, মাথাব্যথা বা অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিতে পারে। চোখ ওঠায় ভীত হওয়ার কিছু নেই, সাধারণত একটি নির্দিষ্ট সময় পর এমনিতেই রোগ সেরে যায়। তবুও এই সময়ে আমাদের কিছু কিছু বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে এবং সতর্কতার সাথে চলাফেরা করতে হবে।
১। আক্রান্ত চোখে যাতে ধুলাবালি, দূষণযুক্ত বাতাস ও পানি না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
২। হাত দিয়ে চোখ রগড়ানো যাবেনা।
৩। আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহার্য জিনিসপত্র যেমন- তোয়ালে, গামছা, কাপড়-চোপড়, বিছানা ইত্যাদি অন্যরা ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪। রোদে বা বাহিরে যাবার সময় অবশ্যই কালো চশমা পরিধান করতে হবে।
৫। সকালে ঘুম থেকে উঠার পর এবং চোখে পিচুটি জমলে হালকা নরম কাপড় ও বিশুদ্ধ পানি দিয়ে চোখ পরিষ্কার করতে হবে।
৬। চোখ ওঠা ছোঁয়াচে রোগ হওয়ায় যতটা সম্ভব ভিড় বা জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে।
৭। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক চোখের ড্রপ ব্যবহার করা যেতে পারে। চোখে চুলকানি থাকলে অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ঔষধ সেবন করতে হবে।
চোখ ওঠা একটি সংক্রামক রোগ হলেও এটি মারাত্মক কোনো রোগ নয়। তাই আতঙ্কিত হবার কিছু নেই। একটু সতর্ক থাকলে এবং নিয়ম মেনে চললে এই রোগ থেকে সহজেই রক্ষা পাওয়া যায়। কোনো জটিলতা দেখা দিলে অথবা রোগ বেশিদিন স্থায়ী হলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

লেখক; সহকারী অধ্যাপক
শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ, হবিগঞ্জ।

 

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।