ডেস্ক নিউজ: বাঙালি জাতির আত্মত্যাগের শ্রেষ্ঠতম অর্জন হলো স্বাধীনতা। আর সেই গৌরবময় স্মৃতির ইতিহাস অম্লান করে রেখেছে বিজয় দিবস। ’৭১-এর ২৬ মার্চ যে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে এ দেশের রক্তাক্ত অভ্যুদয় ঘটেছিল তার সফল পরিণতি পায় সে বছরেরই ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীকে পরাজিত করার মাধ্যমে। আজ মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালের আজকের দিনে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে আত্মসমর্পণ করেছিল পাকহানাদার বাহিনী। ঢাকার তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এ আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণের মাধ্যমে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয় আর এর মধ্য দিয়েই অভ্যুদয় ঘটে বাঙালির কাক্সিক্ষত স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশের। এ মুক্তিযুদ্ধের এবং বাংলার মানুষের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার তথা স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সফল নেতৃত্ব প্রদান করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
কোটি কোটি নিরস্ত্র বাঙালিকে তিনি স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করে তুলেছিলেন ৭ মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণাসংবলিত সেই অগ্নিঝরা ভাষণের মাধ্যমে। তার সঙ্গে ছিলেন এই লক্ষ্যে অবিচল গোটা বাংলার মুক্তিকামী মানুষ। তাদের সবাইকেই আমরা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। এ বিজয়ের অনুভূতি অকৃত্রিম, অনাবিল আনন্দের। অযুত লক্ষ মানুষের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমাদের বিজয়। বিজয়ের ৫২ বছর পূর্তিতে এই আত্মত্যাগের স্মরণে মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি এবং যেসব মহীয়সী নারী সম্ভ্রম হারিয়েছেন ও ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন, তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ছিল অধিকার আদায়ের সংগ্রাম। দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারতবর্ষ ভাগ হওয়ার মাধ্যমে ভারত ও পাকিস্তান সৃষ্টি হয়; পাকিস্তানের এই অংশ অর্থাৎ পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ নানাভাবে বঞ্চনার শিকার হয়। এ বঞ্চনা যে শুধু অর্থনৈতিক দিক দিয়ে তা নয়; বঞ্চনা শুরু হয় সাংস্কৃতিক, সামাজিক, শিক্ষাসহ সর্বদিক থেকে। বৈষম্যের সৃষ্টি হয় রাজনৈতিক অধিকার, চাকরিসহ রাষ্ট্রীয় সব সুযোগ-সুবিধার দিক থেকে। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বিকাশের পথগুলো রুদ্ধ করে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী তাদের নিজেদের মতো করে নিজেদের ভাগ্য গড়ার একক প্রচেষ্টা শুরু করে। পাকিস্তানের সব সম্ভাবনা, শক্তি নিজেদের জন্য কাজে লাগিয়ে পূর্ব পাকিস্তানিদের শোষণ করে। তৎকালীন পাকিস্তানের বাঙালিরা যে বঞ্চনা, যে কষ্ট, যে বৈষম্যের শিকার হয়েছিল এবং পশ্চিম পাকিস্তানিরা বাঙালির সব সম্ভাবনা ধ্বংসের যে উদাহরণ সৃষ্টি করেছিল তা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য বাংলাদেশের মানুষ একটি পথ খুঁজছিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু এই বিষয়টি উপলব্ধি করেছিলেন যে, পাকিস্তানিদের সঙ্গে থেকে এই দেশের, এই অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন কোনোদিন সম্ভব নয়। সেজন্যই তিনি বাংলাদেশের সাধারণ মানুষকে সংগঠিত করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত করেছিলেন। নিরস্ত্র বাঙালিকে সশস্ত্র পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিরোধ তৈরি করে মুক্তিযুদ্ধ শুরু করার নির্দেশ দিয়েছিলেন, যার ফলে ৯ মাসের সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে বিজয় অর্জিত হয়। ৩০ লাখ বাঙালি শহীদ হয়েছেন, ২ লাখ মা-বোন সম্ভ্রম হারিয়েছেন, অযুত লক্ষ বাঙালি তাদের সর্বস্ব দিয়ে অবর্ণনীয় নির্যাতন ভোগ করে শক্তি এবং সামর্থ্যরে সবটুকু উজাড় করে দিয়ে বাংলাদেশকে মুক্ত করেন।
স্বাধীনতার ৫২ বছরের এ পথপরিক্রমায় বিজয়ের স্বপ্ন পূরণে কত ঘাত-প্রতিঘাত মোকাবিলা করতে হচ্ছে, অমসৃণ পথে জাতিকে হাঁটতে হচ্ছে, বিভিন্ন সময় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, বিভিন্ন অনাকাক্সিক্ষত ঘটনায় তা এ দেশের প্রতিটি মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে। শক্ত হাতে দেশের হাল ধরে এগোতে হবে, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে ধারণ করে জাতির কল্যাণে।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।