সম্পাদকীয়: জাতীয় সংসদে দেশের শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপির তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। তাদের মোট ঋণের পরিমাণ ১৯ হাজার কোটি টাকারও বেশি।
এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ১৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি। যেহেতু ঋণখেলাপিদের কারণে সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতে চাপ সৃষ্টি হয়েছে, সেহেতু মানুষ আশা করে ঋণখেলাপিদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করা হবে এবং খেলাপি ঋণ আদায়ে কর্তৃপক্ষ আরও জোরালো পদক্ষেপ নেবে।
দেশে ব্যাংক খাতে দীর্ঘদিন ধরে নানা সমস্যা বিরাজ করছে। এসবের মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো খেলাপি ঋণ। মাত্রাতিরিক্ত খেলাপি ঋণ ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বস্তুত খেলাপি ঋণ শুধু ব্যাংক খাতে নয়, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতেই ঝুঁকি তৈরি করেছে। সামগ্রিক অর্থনীতির স্বার্থে এমন নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন জরুরি, যার মাধ্যমে ব্যাংকের ভালো গ্রাহকরা হবেন পুরস্কৃত এবং ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিরা হবেন তিরস্কৃত ও দণ্ডিত।
খেলাপি ঋণ আদায়ে কর্তৃপক্ষ নানারকম পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ঘোষণা করলেও বাস্তবতা হলো গত কয়েক দশকে খেলাপি ঋণ বেড়েছে জ্যামিতিক হারে। অভিযোগ রয়েছে, কিছু অসাধু ব্যাংকারের সঙ্গে প্রভাবশালী ঋণখেলাপিদের যোগসাজশ রয়েছে। প্রশ্ন হলো, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরদারি অব্যাহত থাকার পরও সংশ্লিষ্টরা কারসাজি করে পার পায় কী করে? খেলাপি ঋণ কেন জ্যামিতিক হারে বাড়ছে এ রহস্য উদ্ঘাটনে কর্তৃপক্ষকে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র এবং ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা বিস্তারিতভাবে জনগণের সামনে তুলে ধরা দরকার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যে ক্ষমতা আছে, তা সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে কিনা তা যাচাই করে দেখতে হবে। সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়েও যে খেলাপি ঋণ আদায়ে অগ্রগতি লক্ষ করা যায় না, তা অতীতে বহুবার প্রমাণিত হয়েছি। কর্তৃপক্ষের শিথিল মনোভাবের কারণেই ঋণখেলাপিরা ঋণ পরিশোধে তৎপর হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যাংক খাতে সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাবেই খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। ঋণখেলাপিদের কারণে যারা নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করেন, তারাও নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। সম্প্রতি কৃষকদের ঋণ আদায়ে কর্তৃপক্ষ যে মনোভাবের পরিচয় দিয়েছে, বড় ঋণখেলাপিদের বিষয়ে তেমন মনোভাবের পরিচয় কেন দেওয়া হচ্ছে না, তা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।