ডেস্ক নিউজ: মানুষ জীবন-জীবিকার তাগিদে বিভিন্ন ধরনের পেশা ও কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়। নবি-রাসুলসহ দুনিয়ার প্রায় সব মানুষই জীবন-জীবিকার তাগিদে কোনো না কোনো পেশার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করা অন্যতম ইবাদত। সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে দায়িত্ব পালন করার গুরুত্বও অপরিসীম। এর প্রতি রয়েছে ইসলামের সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা। তাহলো-
১. আমানতদারিতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করা
দায়িত্ব মহান আল্লাহ তাআলার দেওয়া বড় নিয়ামত ও আমানত। প্রত্যেক দায়িত্বশীলের কর্তব্য এই নিয়ামতের শুকরিয়া করা এবং আমানতের হক আদায় করা । আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের আমানতগুলো হকদারদের কাছে পৌঁছে দিতে আদেশ দিচ্ছেন।…’ (সুরা নিসা: ৫৮)
২. দায়িত্বে অবহেলা করা খেয়ানত
দায়িত্বে অবহেলা করা আমানতের খেয়ানত। আর খেয়ানত হলো মুনাফিকি। একজন দায়িত্বশীল কখনো মুনাফিক হতে পারে না। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘মুনাফিকের আলামত তিনটি। এক. মিথ্যা বলা, দুই. ওয়াদা ভঙ্গ করা এবং তিন. আমানতের খেয়ানত করা।’ (বুখারি)।
৩. কাজের চুক্তি অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করা আবশ্যক
কোনো ব্যক্তিকে কাজের দায়িত্ব দেওয়ার সময় বেশ কিছু শর্ত দিয়ে নিযুক্ত করা হয়। তাই দায়িত্ব পালনের সময় সেসব শর্ত পূরণ করা একজন আদর্শ দায়িত্বশীল ব্যক্তির জন্য আবশ্যক। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘হে মুমিনগণ, তোমরা অঙ্গীকারগুলো পূর্ণ করো।’ (সুরা মায়িদা: ১)। মহানবী (সা.) বলেন, ‘যার মধ্যে ওয়াদা রক্ষা নেই, তার ধর্ম নেই।’ (আহমদ)।
৪. দায়িত্ব পালন করা জীবনের পরীক্ষা
যথাযথ দায়িত্ব পালন করা মানুষের জীবনে এক বিরাট পরীক্ষা। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যখন কোনো ব্যক্তি কোনো দায়িত্বের জন্য নির্বাচিত হয়, তখন সে তরবারি ছাড়াই কোরবানি হয়।’ (আহমদ)।
হাদিসের ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিসগণ বলেন, ‘দায়িত্ব দিয়ে ব্যক্তির কর্মদক্ষতা, ন্যায়পরায়ণতা, বিচক্ষণতা ইত্যাদি পরীক্ষা করা হয়। যদি কেউ সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করে, তবে সে কর্মক্ষেত্র ও সমাজে যেমন নিন্দিত হয়, তেমনি আল্লাহর কাছেও জবাবদিহির মুখোমুখি হবে। তখন মনে হবে, দায়িত্ব নেওয়ার চেয়ে না নেওয়াই ভালো ছিল। তাই হাদিসে দায়িত্ব গ্রহণকে তরবারি ছাড়া জবাইয়ের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।
৫. দায়িত্ব পালনে ফুটে ওঠে দেশপ্রেম
দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করার মাধ্যমে প্রকৃত দেশপ্রেম প্রকাশিত হয়। এমন অনেকেই আছে যে, শুধু ফটোসেশন, সামাজিক অনুষ্ঠান কিংবা মিছিল-মিটিংয়ের সামনে অবস্থান করে দেশপ্রেম প্রকাশ করতে চায়। সেটি প্রকৃত দেশপ্রেম নয়; বরং যার যা দায়িত্ব তা যদি যৌক্তিক ও সঠিকভাবে পালন করা হয়, তবে দেশের উন্নতি এক ধাপ ত্বরান্বিত হবে। তার দায়িত্ব পালনেই ফুটে ওঠে সঠিক দেশপ্রেম।
৬. দায়িত্ব পালনে থাকবে পরকালের জবাবদিহিতা
যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করতে না পারলে পরকালে আল্লাহ তাআলার কাছে জবাবদিহি করতে হবে। নিবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ওহে! তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। তোমরা প্রত্যেকে তোমাদের দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। নেতা একজন দায়িত্বশীল, তাঁকে তাঁর অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। পুরুষ পরিবারের অভিভাবক। তাকে এ-সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। নারী তার স্বামীর ঘরের দায়িত্বশীল। তাকে এ-সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। চাকর তার মনিবের সম্পদের রক্ষক, তাকে এ-সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।’ (বুখারি)
৭. দায়িত্ব অবহেলা করার শাস্তি
যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন না করে অবহেলা করলে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। হাদিসে পাকে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমরা যখন কাউকে দায়িত্ব দিই, তখন সে যদি এক টুকরো সুতা বা তার চেয়েও ছোট জিনিস খেয়ানত করে, তবে কেয়ামতের দিন সে খেয়ানতের বোঝা মাথায় নিয়ে উঠবে।’ (মুসলিম)
৮. সঠিক দায়িত্ব পালন করা ইবাদত
কর্ম বা দায়িত্ব পালন শুধু জীবিকা অর্জনের মাধ্যম নয়, বরং এটি সদকায়ে জারিয়ার অন্তর্ভুক্ত। দায়িত্ব পালনকালে বা কর্মে থাকা অবস্থায় যদি আল্লাহর সন্তুষ্টি ও মানবসেবার নিয়ত থাকে তবে এ দায়িত্ব পালন বা কর্ম সদকায়ে জারিয়া হিসেবে গণ্য হবে। হাদিসে পাকে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মানুষ মারা গেলে তিন ধরনের আমল ছাড়া সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। সদকায়ে জারিয়া, উপকারী জ্ঞান ও সুসন্তান, যে তার জন্য দোয়া করে।’ (মুসলিম)
Related
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।