ডেস্ক নিউজ: নারায়ণগঞ্জের সর্বত্রই মেলে ইতিহাস-ঐতিহ্যের ছাপ। জেলার প্রাণকেন্দ্র রূপগঞ্জে ইতিহাসের নীরব সাক্ষী প্রাচীন স্থাপত্যশৈলীর অনন্য নিদর্শন মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ি তেমনই একটি ঐতিহাসিক স্থান। শীতলক্ষ্যার কোল ঘেঁষা সবুজ-শ্যামল গ্রাম মুড়াপাড়ায় জমিদার বাড়িটি আজও কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
দৃষ্টিনন্দন এই জমিদার বাড়ি ভ্রমণপিপাসুদের আকর্ষণ করছে। ঐতিহাসিক স্থাপনাটি পর্যটকদের কাছে খুবই পছন্দের। ফলে বারো মাসজুড়েই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অসংখ্য ভ্রমণপিপাসু ছুটে আসেন। পাশাপাশি বিদেশ থেকেও অসংখ্য পর্যটক ও দর্শনার্থী ছুটে আসেন। ঢাকা থেকে মাত্র ৩০ মিনিটের পথ। ইট, পাথর আর কোলাহলপূর্ণ রাজধানীর খুব কাছে রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের কিছুটা পশ্চিমে এ ঐতিহাসিক বাড়ির অবস্থান।
জানা যায়, রামরতন ব্যানার্জী ছিলেন নাটোরের রাজার এক বিশ্বস্ত কর্মচারী। তার সততার পুরস্কার হিসেবে তিনি মুড়াপাড়া এলাকায় বেশকিছু জায়গীর লাভ করেন। ১৮৮৯ সালে রামরতন ব্যানার্জী এখানে জমিদারি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৯৯ সালে তার ছেলে বিজয় চন্দ্র ব্যানার্জী পৈত্রিকসূত্রে জমিদারি পেয়ে তা অনেকাংশে প্রসার করেন।
রামরতন ব্যানার্জী এর কাজ শেষ করে যেতে পারেননি। কাজ শেষ করেন তার নাতি জগদীশ চন্দ্র ব্যানার্জী। ১৯০৯ সালে জগদীশ চন্দ্র ব্যানার্জি এ বাড়ির কাজ সম্পন্ন করেন। তিনি এলাকার ক্ষমতাধর জমিদার হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। জগদীশ চন্দ্র ব্যানার্জী ছিলেন বিজয় চন্দ্র ব্যানার্জীর বড় ছেলে এবং রামরতন ব্যানার্জীর নাতি। আশুতোশ নামে তার আরও এক ভাই ছিলেন। বাবার বড় ছেলে হওয়ার সুবাদে জমিদার হন জগদীশ চন্দ্র ব্যানার্জী।
৪০ একর জমিতে ৯৫টি কক্ষ বিশিষ্ট বিশালাকার দৃষ্টিনন্দন জমিদার বাড়িটি তৈরি করা হয়েছিল। প্রাচীন জমিদারদের রাজকার্যসহ বিভিন্ন কাজে এসব কক্ষ ব্যবহার করা হতো। আনন্দ উল্লাসের জন্য ছিল নাচঘর, পূজা-অর্চনার জন্য মন্দির, রাজকার্য পরিচালনার জন্য রাজকক্ষ, অতিথিশালা, কাচারি ঘর, বৈঠকখানা ইত্যাদি।
সদর দরজার সামনে দিয়ে বয়ে গেছে শীতলক্ষ্যা নদী। সে সময় যোগাযোগের অন্যতম প্রধান মাধ্যম ছিল নৌ-পথ। সে কথা মাথায় রেখেই বোধহয় বাড়িটি নদীর তীর ঘেঁষে নির্মাণ করা হয়েছিল। উত্তর-দক্ষিণে লম্বা দুই তলা একটি দালানকে কেন্দ্র করে বিশাল আয়তনের এই বাড়ি। হাতের বামে দুটি মন্দির। তার পেছনেই বিশাল আম বাগান। প্রান্তর পেরিয়ে গেলে বাঁধানো চারটি ঘাট বিশিষ্ট একটি পুকুর।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।