সময় অসময় ২৭ - BANGLANEWSUS.COM
  • নিউইয়র্ক, সকাল ৬:৫৫, ৩রা অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ


 

সময় অসময় ২৭

newsup
প্রকাশিত মার্চ ২৫, ২০২৩
সময় অসময় ২৭

মীর লিয়াকত : সংবাদপত্রে প্রকাশিত সম্পাদকীয় সব সংবাদপত্রের জন্যেই সবচে গুরুত্বপূর্ণ। এক কথায় ঐদিনের বা এ সপ্তাহের ঐ পত্রিকার মূল বক্তব্যই সম্পাদকীয় । সাধারণ পাঠকরা নিউজ ভিউজ বেশি পড়লেও দিন বদলেছে আজকাল। দেশে প্রচুর সংবাদপত্র প্রকাশিত হওয়ায় এবং সময়ের প্রয়োজনে এখন সাধারণ পাঠকরাও সম্পাদকীয় মন্তব্য পড়েন এবং তা নিয়ে আলোচনা করেন। দরিদ্রতম এ দেশের জন্য এটি গুরুত্ববহ। এমনি একটি আলোচনা শুনলাম কদিন আগে সিলেট যাবার সড়কপথে সাদীপুর ব্রীজের কাছে। অপেক্ষারত ছিলাম ফের্রী প্রচনড ভিড়ের জন্য দেরি হয়েছিল ঘণ্টাখানেক। দৈনিক জালালাবাদের ‘চরিত্র দেশে বিদেশে’ পাঠ হলো। আগ্রহ নিয়ে দু তিনজন তরুণ শুনলেন। পাঠ শেষে নিজেদের মধ্যে ওদের আলোচনা ভালোই লাগল পাশে দাঁড়িয়ে শুনতে। তরুণ যুবকরা পথ চলতে একটুখানি অবসরে সংবাদপত্র দেশ নিয়ে আলোচনা করে মন্তব্য করেন।

আজকের এ বিতর্কিত সমাজে তরুণদের কাছ থেকে এটা কম বড় পাওয়া নয়। দৈনিক জালালাবাদের ঐ সম্পাদকীয়টিও ছিল চমৎকার। আলোচনায় সরস অনেক ঘটনাই এলো। বিদেশের রেস্টুরেন্টে ৩৫ লক্ষ টাকার ব্যাগ পেয়েও ব্যাগের মালিককে ফেরৎ দিয়েছে বাংলাদেশী প্রবাসী। তরুণরা স্বতঃস্ফুর্তভাবে প্রশংসা করলেও ওদের মধ্যেই একজন তার মতান্তর জানালো। এতো টাকা পেয়ে ‘বাঙালি’ ছেড়ে দেবে বিশ্বাস হয় না। এসব সম্পাদকীয় কিংবা খবর ভ‚য়া মিথ্যা। তরুণের কথায়ও যুক্তি আছে।

বর্তমানে আমাদের দেশে যে পরিস্থিতি তাতে ৩৫ লক্ষ ফেলে দেয়া কেন দুই চার পাঁচশর জন্য প্রাণও কেড়ে নেয়া হচ্ছে। সবাই আলোচনা করল। শেষ পর্যন্ত বেঁকে বসা তরুণও মতৈক্যে পৌছল। তার শুরু হলো অন্যান্য প্রাসঙ্গিক গল্প। যুবকের এক নানী শীতের দিনে পাতা জ্বালাতে গিয়ে নাকি পলিথিন ব্যাগ ভর্তি লক্ষ টাকার সোনা পেয়ে অনেক খবর নিয়ে মালিককে পৌঁছে দিয়েছেন। কোথায় এক রিকশাওয়ালার নাকি বিদেশের ভিসা লাগানো ডাক টিকিটের পাসপোর্ট ও নগদ তিন লাখ টাকা গাটের কড়ি খরচ করে মালিককে খুঁজে ফেরৎ দিতে গিয়ে মালিক দশ হাজার টাকা বখশিশ দিতে চাইলে নেয়নি।

আসলেই এটা মহানুভবতা। মানুষ যখন শ্রেষ্ঠ জীব তার শ্রেষ্ঠত্ব তো তার চরিত্রে। কিন্তু প্রশ্ন হলো বাঙারি বিদেশে। যে দৃষ্টান্তের সৃষ্টি করলো সেই দৃষ্টান্ত তো দেশেও অনেকে করতে পারেন। সম্পদকীয়তেই বলা হয়েছে এমন ঘটনা নিউইয়র্কেও ঘটেছে। ঘটেছে বিদেশেই বেশি। তার কারণ সেখানকার দেশের পরিচালনা পদ্ধতি, পারিপার্শ্বিক অবস্থান বৈশিষ্ট্যগুলিকে উন্নত রাখতে সহায়তা করে। স্থান পায় না হীনমন্যতা। দেশের পারিপার্শ্বিকাত ভিন্ন। এখানে আছেন তাদের সাথে আমাদের পরিচালকদের ফারাক আকাশচুম্বী। সম্পাদকীয়তেই বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করে।
‘চরিত্র দেশে বিদেশের’ ক্ষেত্রে এ পর্যায়ে আামার একটি শোনা গল্প মনে পড়ে গেল। পেলামই যখন সুযোগ বলে ফেলা যাক। ছেলেটি মেধাবী। পড়াশুনায় শিক্ষকদের কাছে প্রিয়পাত্র। রেলপথে হেঁটে কয়েক ক্রোশ দূর থেকে তাকে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করতে হয়। এভাবেই একদিন স্কুলে আসার পথে একটি কালো রংয়ের ব্যাগ কুড়িয়ে পেলে ডাবল ট্রেন থেকে সম্ভবতঃ ব্যাগটি পড়ে গেছে। ব্যাগটি না খুলেই সে স্কুলে নিয়ে এসে একজন শিক্ষককে দিয়ে ঘটনা খুলে বলে। কুড়িয়ে পাওয়া জিনিস আনার জন্য ছেলেটি বকাও খেল শিক্ষকদের কাছে। সেখানেই উপস্থিত একজন গণ্যমান্য প্রভাবশালী ব্যক্তি ব্যাগটি স্টেশনে পৌঁছে দেবেন বলে নিয়ে এলেন।

একই রিক্শায় সেই শিক্ষকও সাথে গেলেন। কৌতুহল বশত রিক্শায় বসে ব্যাগ খুলে তাদের চোখ চড়ক গাছ। দু’একটা ব্যবহার করা কাপড়ের সাথে পাচঁশ টাকার প্রায় শতাধিক বান্ডিল । অমনি গণ্যমান্য ভদ্রলোক বললেন, এটা নাকি জি আরপি থানায় জমা দিতে হবে। এতো টাকার ব্যাপার এবং উৎকট ঝামেলা। এড়ানোর জন্য শিক্ষক সেই ব্যাগের ব্যাপরে জিজ্ঞেস করলেন। ভদ্রলোক তো হাসতে হাসতে দম ফাটার অবস্থা। হাসতে হাসতেই বললেন আরে ভাই আজকার কি এতো টাকা এভাবে ফেলে যায়? সব নোটই ছিল জাল। টাকা জালকারী কোন চক্র সম্ভবতঃ বিপদ দেখে ফেলে দিয়েছিল। জিআরপি থানায় এ জাল টাকা ধরা পড়ে। আর আমি ভাই দেখলাম উৎকট ঝামেলায় জড়িয়ে লাভ কি। তাই আর ওমুখো হইনি।

ঘটনার ২য় পর্বও ওখানেই শেষ। তারপর তৃতীয় পর্ব। শিক্ষক নিজে নোটগুলো দেখেছন ঐ নোট জাল হবার কথা নয়। একটা সন্দেহ তার মনে উঁকি দেয়। তিনি ফোন করলেন জিআরপি থানায় নিজের পরিচয় গোপন রেখে। জিআরপি অফিসার বললেন, এ ধরনের খবরই তিনি জানেন না। স্পষ্টই শিক্ষক বুঝলেন, এতোগুলো টাকা নির্বিঘ্নেই সেই গণ্যমান্য ভদ্রলোক মেরে দিয়েছেন।

বছর ঘুররতে না ঘুরতেই তার চকচকে গাড়ি নতুন বাড়ি দেখে সেই শিক্ষকের বোঝার আর কিছুই বাকি থাকলো না। তবে সবচেয়ে ঐ শিক্ষক একটা ব্যাপারে বিস্মিত হলেন বিরাট ব্যস্ততায় সর্বদাই যেন থাকতে ভালোবাসেন সেই ভদ্রলোক। পারতপক্ষে কখনও সেই শিক্ষকের সাথে কথাই বলেন না। নিরীহ সহজ সরল শিক্ষক সবই বুঝলেন। বুঝলেন কারণ তিনি মানুষ গড়ার কারিগর। সমাজে এসব গণ্যমান্য নামধারী প্রভাবশালীরাই গোটা দেশের দুষ্টগ্রহ। চরিত্রবল বলতে তাদের কিছুই নেই। অর্থের জন্য করতে পারে না এমন কোন কাজই তাদের জন্য নেই। আবার এরাই সমাজকে রক্ষণাবেক্ষণের ‘অভিনয়’ করেন। সমাজ এদেরই সমীহ করে। এদের নিয়েই সমাজ গর্ব করে। কোন চরিত্রের প্রয়োজন হয় না। কারণ সমাজ তো এদের চরিত্র নিয়ে কথা বলার সাহস পায় না।

লেখক : মীর লিয়াকত, সব্যসাচী লেখক ।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।