ডেস্ক নিউজ: দুনিয়াতে সুখময় সংসারকে জান্নাতের সঙ্গে তুলনা করা হয়। আর অশান্তি ও কলহ-বিবাদে জড়িত পরিবার জাহান্নাম সমতুল্য। পারিবারিক জীবনে সুখ-শান্তি ও কল্যাণের জন্য স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সুসম্পর্ক ও ভালোবাসার বিকল্প নেই। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশিত পথ ও পদ্ধতির অনুসরণেই মিলবে এ শান্তি ও কল্যাণ। সংসার জীবনে সুখের জন্য স্বামী-স্ত্রী দু’জনেরই রয়েছে বিশেষ করণীয় ও দায়িত্ব। সেসব দায়িত্ব ও করণীয়গুলো কী?
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসের আলোকে স্ত্রী ও সংসারের প্রতি রয়েছে স্বামীর অনেক দায়িত্ব। সুন্নাহ মোতাবেক এসব দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারলেই সংসার জীবনে আসবে শান্তি। পরকালীন জীবনে মিলবে মুক্তি। তাহলো-
১. দ্বীনদার স্ত্রী গ্রহণ করা
পারিবারিক জীবনে শান্তির জন্য দ্বীনদার নারীর বিকল্প নেই। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে বিয়ে করার ইচ্ছা করে, সে যেন দ্বীনকে প্রাধান্য দেয়। অন্য হাদিসে এসেছে, চারটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রেখে মেয়েদের বিয়ে করা হয়- সম্পদ, বংশমর্যাদা, সৌন্দর্য ও দ্বীনদারি। সুতরাং তুমি দ্বীনদারিকেই প্রাধান্য দেবে নতুবা তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। (বুখারি)
২. ভালোবাসা মুখে প্রকাশ করা
স্ত্রীর প্রতি স্বামীর মনে থাকা ভালোবাসা বাস্তবে দেখানো ও মুখে প্রকাশ করা। হাদিসে এসেছে-
হজরত খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহা সম্পর্কে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমার মনে তার প্রতি ভালোবাসা ঢেলে দেওয়া হয়েছে।’ (মুসলিম)
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বলেছেন, ‘সবার চেয়ে আয়েশা আমার কাছে এমন প্রিয়, যেমন সব খাবারের মধ্যে সারিদ (আরবের বিশেষ এক ধরনের খাদ্য) আমার কাছে বেশি প্রিয়।’ (বুখারি) তাই স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসার কথা মুখে প্রকাশ করুন।
৩. স্ত্রীর সামনে নিজেকে পরিপাটি রাখা
পুরুষরা যেমন তাদের সঙ্গিনীকে সুন্দরভাবে দেখতে পছন্দ করে। ঠিক একইভাবে স্ত্রীরাও তাদের সঙ্গীকে সুন্দরভাবে দেখতে পছন্দ করে। হাদিসে পাকে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আমি আমার স্ত্রীদের জন্য এমনই পরিপাটি থাকা পছন্দ করি, যেমন আমি তাদের ক্ষেত্রে সাজগোজ করে থাকতে পছন্দ করি।’ (বায়হাকি ১৪৭২৮)
৪. স্ত্রীর প্রতি আন্তরিক থাকা
সব সময় স্ত্রীর সঙ্গে আন্তরিকতাপূর্ণ আচরণ করতে হবে। হাদিসে পাকে এসেছে-
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভালোবেসে কখনো কখনো আমার নাম হুমায়রা বা লাল গোলাপ বলে ডাকতেন।’ (ইবনে মাজাহ) তিনি আরও বলেন, পাত্রের যে অংশে আমি মুখ রেখে পানি পান করতাম তিনি সেখানেই মুখ লাগিয়ে পানি পান করতে পছন্দ করতেন।’ (মুসলিম)
৫. স্ত্রীর সঙ্গে উত্তম আচরণ করা
পারিবারিক সুখ-শান্তির অন্যতম চাবিকাঠি নিজ স্ত্রীর সঙ্গে উত্তম আচরণ করা। তার পাওনাগুলো পরিপূর্ণভাবে আদায় করা। তার অধিকার বুঝিয়ে দেওয়া। তার নিত্যদিনের শারীরিক ও মানসিক চাহিদা পুরণ করা। হাদিসে পাকে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেই ভালো যে তার পরিবারের কাছে ভালো। আর আমি আমার পরিবারের কাছে তোমাদের চেয়ে উত্তম।’ (তিরমিজি)
৬. স্ত্রীর মনোরঞ্জন করা
পারিবারিক সুখ-শান্তির জন্য স্বামী তার স্ত্রীর মনোরঞ্জনে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা করবে। এটি প্রত্যেক স্বামীর জন্য অপরিহার্য। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ স্ত্রীদের সঙ্গে বিনোদনমূলক আচরণ করেতেন। হাদিসে পাকে এসেছে-
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা এক সফরে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে ছিলেন। তিনি বলেন, আমি তার সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা করে তার আগে চলে গেলাম। এরপর আমি মোটা হয়ে যাওয়ার পর (অন্য আরেক সফরে) তার সঙ্গে আবারও দৌড় প্রতিযোগিতা করলাম, এবার তিনি (রাসুলুল্লাহ) আমাকে পেছনে ফেলে দিয়ে বিজয়ী হলেন। তিনি বলেন, এ বিজয় সেই বিজয়ের বদলা।’ (আবু দাউদ)
৭. একের কাজে অপরের সহযোগিতা
সুখী পারিবারিক জীবনের জন্য সুযোগ পেলেই পারিবারের লোকদের কাজে সহায়তা করতে হবে। নবিজিও তা করতেন। হাদিসে পাকে এসেছে-
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, নবিজি কি পরিবারের লোকদের তাদের ঘরোয়া কাজে সহযোগিতা করতেন? তিনি বললেন- হ্যাঁ, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘরের লোকদের তাদের কাজে সহযোগিতা করতেন এবং নামাজের সময় হলে নামাজের জন্য বের হয়ে যেতেন।’ (বুখারি)
Related
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।