অভিজ্ঞতা-৩ : জুরি হিসেবে স্নেয়ার্সব্রোক ক্রাউন কোর্টে পাঁচদিন - BANGLANEWSUS.COM
  • ২৫শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

 

অভিজ্ঞতা-৩ : জুরি হিসেবে স্নেয়ার্সব্রোক ক্রাউন কোর্টে পাঁচদিন

newsup
প্রকাশিত মে ১১, ২০২৩
অভিজ্ঞতা-৩ : জুরি হিসেবে স্নেয়ার্সব্রোক ক্রাউন কোর্টে পাঁচদিন
তাইসির মাহমুদ :
আদালতে বসে বিচারকের ডাকের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করাটা সম্ভবত সবচেয়ে বিরক্তিকর । আইনজীবীদের সেই তিক্ত অভিজ্ঞতা থাকারই কথা । কারণ তাঁরা নিয়মিত তাদের ক্লায়েন্টের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করতে আদালতে হাজির হয়ে থাকেন। বিচারক কখন এজলাসে ওঠেন, আর কখন ডাকেন তার কোনো নিশ্চয়তা থাকেনা । তাই সারাদিনই অপেক্ষায় থাকতে হয়। একজন আইনজীবীকে মামলার শুনানীর তারিখে সকাল ১০টা আগেই আদালতে পৌছতে হয়। কিন্তু দিনশেষে যদি বিকেল ৪টার দিকে এজলাস থেকে ডাক পড়ে তাহলে দীর্ঘ ছয় ঘণ্টাই অপেক্ষা করতে হয়। এই ছয়ঘণ্টা অপেক্ষার সময় খুবই কষ্টের ।
আমরা জুরুর হলে বসে অপেক্ষা করতে থাকলাম। প্রয়োজনেও বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ কখন ডাক পড়ে কেউ জানিনা। বইপড়া, খবরের কাগজে চোখ বুলানো, চা-খাওয়া আর মাঝে মাঝে ওয়াশরুমে যাওয়া আসা ছাড়া আমাদের আর কোনো গত্যন্তর নেই। একটি হলরুমে বিভিন্ন বয়স ও জাতীয়তার প্রায় ৮০ জন মানুষ বসে আছেন। কারো সাথে কারো পরিচয় নেই।
আমরা একটেবিলে ৬ জন বসা ছিলাম। আমার পাশেই একজন শ্বেতাঙ্গ নারী ছিলেন। তার হাব-ভাব দেখে আঁচ করতে পারলাম তিনিও ভীষণ কষ্টে আছেন । অপেক্ষার সময় পার হচ্ছেনা। একসময় ‘হ্যালো’ বলে আমার সাথে আলাপ জুড়ে দিলেন। সময় তো পার করতে হবে। আমিও সানন্দে তার আলাপচারিতায় সাড়া দিলাম। তিনি একটি সেকেন্ডারী স্কুলের টিচার। জীবনের প্রথম জুরি সার্ভিসে এসেছেন। তার কাছেও এটি এক নতুন অভিজ্ঞতা। তিনিও এক্সাইটেড। কিন্তু অপেক্ষার প্রহর কাটছেনা।
কথা বলতে বলতে ১টা বেজে গেলো। দুপুরের বিরতি ঘোষনা করা হলো । যারা সাথে প্যাক লাঞ্চ নিয়ে গেছেন তারা স্বস্থানে বসেই খাবার খেতে শুরু করলেন। কেউ কেউ কেন্ট্রিন থেকে খাবার কিনে আনলেন, যেহেতু ৫ পাউন্ড ৭১ পেন্স খাবারের জন্য বরাদ্দ আছে। তবে ঘর থেকে লাঞ্চ নিয়ে গেলেও কিন্তু খাবারের অ্যালাউন্স দেওয়া হয়।
দুপুরের বিরতি শেষে বিকেল ২টার মধ্যে আমরা ফের জুরুর রুমে ফিরে এলাম। বসে আছি। ছটফট করছি কখন ডাক পড়বে।
কিছুক্ষণ পরপর জুরুর ম্যানেজার গ্লাস বেস্টিত রিসেপশন ডেস্কের ভেতর থেকে এক নাগাড়ে লাউড-স্পিকারে নাম ডাকতে থাকেন। অনেকটা স্কুলের স্টুডেন্টস হাজিরার মতো।
তিনি যখন ডাকেন তখন এক একজন করে ওঠে দাঁড়িয়ে জুরুর ম্যানেজারের গ্লাসবেস্টিত ডেস্কের সম্মুখে দাঁড়ান । এরপর একজন ‘আশার’ (মামলার সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে কোর্টরুমে নিয়ে যাওয়া-ইত্যাদি কাজে নিয়োজিত অফিসার) আসেন । তিনি তাদের সকলকে জড়ো করেন। কিছু সময় ব্রিফ করেন । এরপর দলে দলে কোর্টরুমে নিয়ে যান।
আমরা সারাদিনই অপেক্ষা করলাম। কিন্তু ডাক পড়লোনা। অনেকটা ‘বিনা রশিতে বাঁধা’র মতো অবস্থা আমাদের । বিকেল ৪টায় আমাদের জানানো হলো, আপনারা আজকের মতো মুক্ত। যার যার বাসায় ফিরে যেতে পারেন । তবে কাল মঙ্গলবার সকাল দশটার মধ্যে কোর্টে এসে হাজির হতে হবে।
হল ত্যাগের আগে আরো কিছু নির্দেশনা দেওয়া হলো। বলা হলো, কোর্ট চলাকালিন সময়ে আমরা বিচার সংক্রান্ত ব্যাপারে কারো সাথে কোনো তথ্য শেয়ার করতে পারবোনা। এমনকি নিজের স্ত্রীর সঙ্গেও। করলে সেটা হবে দন্ডনীয় অপরাধ । (চলবে)

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।