সম্পাদকীয়: সাধারণভাবে অংশগ্রহণমূলক বলতে সব দলের অংশগ্রহণ বোঝালেও দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নির্বাচনে মূলত প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অংশ নেওয়াকেই বলা হয়ে থাকে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে এ দুই দলের মতভিন্নতার কারণে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রশ্নে দেখা দিয়েছে অচলাবস্থা। বিএনপি বলে আসছে, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে অংশ নেবে না তারা।
অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের বিষয়ে অনড়। এ ইস্যুতে দুই প্রধান দলের মধ্যে দূরত্ব ক্রমেই বাড়ছে। অথচ নির্বাচন যেন অংশগ্রহণমূলক হয়, সে ব্যাপারে রয়েছে দেশি-বিদেশি চাপ। ইতোমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন না হলে পর্যবেক্ষক না পাঠানোর সতর্কবার্তা দিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য প্রভাবশালী দেশও বলছে, বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায় তারা। প্রশ্ন হলো, প্রধান দুই দল তাদের নিজ নিজ অবস্থানে অনড় থাকলে কীভাবে সেটা সম্ভব হবে?
দেশে স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির জন্য সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন জরুরি। অস্থিতিশীল পরিস্থিতি দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য তথা অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটতে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে আগামীতে আমাদের সামনে নানা চ্যালেঞ্জ আসবে। তাই আমরা মনে করি, এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হওয়া জরুরি। এ ব্যাপারে সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে শুভবুদ্ধির পরিচয় দিতে হবে।
দেশের রাজনীতি নির্ধারণ করবে এদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব-এটাই স্বাভাবিক। এ ব্যাপারে বিদেশিদের চাপ বাড়ছে, এটি দুর্ভাগ্যজনক। তবে অভ্যন্তরীণ যে চাপ, তা যুক্তিসংগত। এটি রাজনৈতিক দলগুলোর গণতান্ত্রিক অধিকার। সরকারের দিক থেকে এই চাপ মোকাবিলার উপায় হলো, তারা যেহেতু বলছেন সংবিধানের অধীনেই নির্বাচন হবে, তাই তাদেরকে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিকল্প এমন একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করতে হবে, যাতে বিরোধী দলগুলো নির্বাচনে অংশগ্রহণে উৎসাহবোধ করে। এই বিকল্প পদ্ধতিটি কী হতে পারে, তা ব্যাপকভিত্তিক আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করতে হবে। এ আলোচনা হতে পারে সরকারের নিজেদের মধ্যে এবং নির্বাচনের বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে।
Related
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।