ডেস্ক রিপোর্ট: সকালের বৃষ্টি থেমে গেছে। আমাদের সুনামগঞ্জ শহরে ঢুকতে হয়নি। আমরা চলে গেলাম তাহিরপুর উপজেলায়। ঘাটে নৌকা আগে থেকেই ঠিক করা। আষাঢ়ের প্রথম দিন থেকেই টানা বৃষ্টির দেখা পেয়ে আসছিলাম। সেদিনও আকাশে মেঘ ছিল। আবার রোদও। এমন আবহাওয়া দেখে আমরা খুশি। হাওর যাপনে গন্তব্য সুনামগঞ্জ জেলার টাঙ্গুয়ার হাওর। ভূপ্রকৃতির কারণেই অন্য সব জেলার চেয়ে কিছুটা হলেও সুনামগঞ্জ আলাদা। আপনি যদি গানের ভক্ত হন, তাহলে প্রকৃতি ও গান দুটিই উপভোগ করতে পারবেন সুনামগঞ্জে। হাওরকেন্দ্রিক এ অঞ্চল কত শত বাউলের জন্ম দিয়েছে!
ঘাটের আশপাশে অনেক বিলাসবহুল নৌকা দেখতে পেলাম। ভ্রমণে বেশ আরামদায়ক। থাকা-খাওয়ার সুব্যবস্থা রয়েছে। বিভিন্ন ইভেন্ট অফার করে প্যাকেজের মাধ্যমে ট্যুরিস্টদের তারা ঘুরিয়ে আনে। আমরা নিজেরা গিয়েছি। কোনো ট্যুর এজেন্সির মাধ্যমে নয়। নিজেদের পছন্দের একটা ট্র্যাডিশনাল নৌকা ভাড়া নিলাম। ইচ্ছা, আমরা সারাদিন টাঙ্গুয়ার হাওর ঘুরব। দুপুরে টেকেরঘাট যাব। শহীদ সিরাজ লেক ঘুরে আবার ফিরে আসব তাহিরপুর।
তাহিরপুর বাজার। তখন সকাল ৯টা। সিলেট থেকে যেতে ২ ঘণ্টা সময় লেগেছে। বাজার ঘুরে মাঝারি সাইজের একটি রুই মাছ কেনা হলো। দুপুরের খাবারের জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছুই কেনা হয়। আমার আবার চাপিলা ও পাবদা মাছের প্রতি লোভ বেশি। একদম টাটকা পাওয়া গেল। নৌকাতেই রান্নাবান্নার মানুষ থাকে। তাঁরা ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।
সকাল সাড়ে ৯টায় নৌকা ছাড়ে। টাঙ্গুয়ার হাওর জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ। ২০০০ সালে সুন্দরবনের পর টাঙ্গুয়ার হাওরকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ রামসার সাইটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
অনেক আগে একবার যাওয়া হয়েছিল। এবার গিয়ে মনে হলো, টাঙ্গুয়ার হাওরকে ঘিরে পর্যটকের আগ্রহ অনেক বেড়েছে। বেসরকারিভাবে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে বর্ষা থেকে শরতে অসংখ্য পর্যটক ভিড় জমান।
আমাদের নৌকা চলছে। রোদ ওঠে। বাতাস থাকায় তাপমাত্রা সহনীয়। চারদিকে জলরাশি। স্বচ্ছ জলে নিজের প্রতিবিম্ব দেখি। মেঘের ছায়ায় কখনও সবুজ আবার মেঘ সরে গেলে নীল। দূরের গ্রামগুলো ছোট হতে থাকে। ঘণ্টা দুই পরে আমরা আবিষ্কার করলাম চারদিকে শুধু পানি। মনে হচ্ছে পাহাড় এর শেষ ঠিকানা। মেঘালয়ের একটা অংশ চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে।
বর্ষায় টাঙ্গুয়ার এক রূপ; শীতে আরেক রূপ। বর্ষায় থইথই পানি। বাতাসের বেগ একটু বাড়ল। হাওরের ঢেউ দেখি। আবহাওয়া খারাপ থাকলে সেটি আফালে রূপ নিত। হাওরের ঝড়কে স্থানীয় ভাষায় আফাল বলে। আমাদের নৌকা এগোতে থাকে। হিজলের ডালে, বনে পাখিদের কদাচিৎ দেখা মেলে। বক, বালিহাঁস, মাছরাঙাও চোখে ঝিলিক দিয়ে গেল। স্বচ্ছ জলরাশি আর পাহাড় দেখতে দেখতে আমাদের নৌকা চলে গেল ওয়াচ টাওয়ারে। হিজল-করচবাগ ও জলাবনে ঘেরা। জলাবনের কাছে নৌকার স্টার্ট বন্ধ করলেন মাঝি। ট্যুরিস্টদের কারণে বেশ কোলাহলপূর্ণ জায়গাটা। ছোট ছোট ডিঙি নৌকা ঘুরে বেড়াচ্ছে। তারা ডাক দেয়। তাদের ছোট ডিঙিতে চড়তে বলে। বেশিরভাগ কিশোর মাঝি। তারা গানও জানে। ২০-৫০ টাকা দিলেই তারা দারুণ খুশি।
Related
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।