ডেস্ক রিপোর্ট: ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। পৃথিবীর আর কোনো দেশে এমন বৈচিত্র্যময় ঋতুর সমাবেশ সম্ভবত আর নেই। আর তাই তো কবি বলেছেন, এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি, সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি। পাহাড়, নদী, বন, জঙ্গল, ঝরনাধারা, ফল, ফসল এবং পাখিদের কলকাকলিতে চির রূপ মাধুর্যে ‘দুগ্ধ স্রোতরূপী’ বাংলাদেশ। এর প্রতি পরতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে পাহাড়, নদী ও হাওরের নির্মল উজ্জ্বলতা। হাওরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ জলরাশি এক অপরূপ মহিমায় পর্যটকদের আকৃষ্ট করে।
দ্বীপের মতো করে গড়ে ওঠা ঘরবাড়িগুলো বর্ষাকালে যেমন চোখজুড়ানো দৃশ্যপট তৈরি করে, তেমনি শীতের কুয়াশায় আচ্ছন্ন হাওরাঞ্চলে পাখ-পাখালিদের কলতান কিংবা শুস্ক মৌসুমের পড়ন্ত বিকেলের মিষ্টি রোদের ছড়াছড়ি হাওরকে মন জুড়ানো রূপ দেয়। গত কয়েক বছরে হাওর পর্যটনে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এর মাধ্যমে হাওর এলাকায় গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো। ফলে আর্থসামাজিক উন্নতি হয়েছে এবং হচ্ছে হাওর এলাকায়। তাছাড়া হাওর এলাকায় বর্তমানে যেসব অবকাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে, তা পর্যটন বিকাশে সহায়ক।
বিশেষত মিঠামইন হাওর এলাকায় প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট নির্মাণ এবং রূপালি জ্যোৎস্নায় টাঙ্গুয়ার হাওরে নৌকায় ভেসে বেড়ানোর মতো আকর্ষণ থাকায় দেশীয় পর্যটকের আনাগোনা বেড়েছে। দেশীয় পর্যটকের পাশাপাশি বিদেশি পর্যটকের পছন্দের তালিকায় বর্তমানে এ গ্রামীণ পরিবেশ। এর কারণ হিসেবে গ্রামে কৃষকদের ধান কাটার দৃশ্য, সংস্কৃতি, গ্রামবাংলার মেঠো পথ, সবুজ প্রকৃতি, গ্রাম্য পশুপাখি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।২০৩০ সালের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে রেখে গ্রামীণ পরিবেশসহ আরও অসংখ্য প্রাকৃতিক আকর্ষণের উন্নয়ন বাংলাদেশের আগামী পর্যটনের উন্নয়নে ফলপ্রসূ ভূমিকা রাখতে পারে।
বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশের জেলাগুলোর মধ্যে সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, সিলেট, কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া- এই সাত জেলার ৭ লাখ ৮৪ হাজার হেক্টর জলাভূমিতে ৪২৩টি হাওর নিয়ে হাওরাঞ্চল গঠিত। এর মধ্যে সুনামগঞ্জে সর্বোচ্চ ১৩৩টি, কিশোরগঞ্জে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১২২টি, নেত্রকোনায় ৮০টি, সিলেটে ৪৩টি, হবিগঞ্জে ৩৮টি, মৌলভীবাজারে চারটি এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিনটি হাওর রয়েছে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি জেলার ৪৮টি উপজেলা নিয়ে গঠিত বিস্তীর্ণ এ হাওরাঞ্চলের আয়তন প্রায় ২৪ হাজার বর্গকিলোমিটার।
এই বিশাল অঞ্চলে পর্যটনের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। বর্ষাকালে হাওরের কোলঘেঁষে থাকা সীমান্ত নদী, পাহাড়, বনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, নানা প্রজাতির বনজ, জলজ প্রাণী আর হাওরপাড়ের বসবাসকারী মানুষের জীবন-জীবিকার নৈসর্গিক সৌন্দর্যের মুগ্ধতা ছড়িয়ে পড়ে পর্যটকদের মনে। শীতের মৌসুমে হাজার হাজার দেশি-বিদেশি পাখির মিলনমেলা ও সবুজের সমারোহ চোখ জুড়ানো সৌন্দর্যে প্রাণ ছুঁয়ে যায় পর্যটকদের
সুনামগঞ্জ জেলার হাওরগুলোর আছে মনোমুগ্ধকর নাম যেমন- টাগুয়ার হাওর, শনির হাওর, মাটিয়ান হাওর, দেখার হাওর, হালির হাওর, কড়চা হাওর, পাকনা হাওর, ধলা পাকনা হাওর, আঙ্গরখালি হাওর, খচ্চর হাওর, নখলা হাওর, সানুয়াডাকুয়া হাওর, শৈল চকরা হাওর, হৈশাম হাওর, বড় হাওর, হালিয়ার হাওর, চন্দ্রসোনার থাল হাওর, ডিঙ্গাপুতা হাওর প্রভৃতি।
টাগুয়ার হাওরসহ আশপাশের পর্যটন এলাকায় পর্যটকদের মানসম্মত খাওয়া-দাওয়া ও বাসস্থানের সুযোগ না থাকায় বিশাল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও পর্যটক আকর্ষণ করা যাচ্ছে না। সমস্যা সমাধানে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে হোটেল-মোটেল স্থাপন করা যেতে পারে। এ ছাড়া ট্যুরিস্ট গাইড তৈরি করা যেতে পারে। ইকো ট্যুরিজমও হতে পারে হাওরাঞ্চলের বিকল্প কর্মসংস্থান ও রাজস্ব আয়ের অন্যতম খাত।
ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জের দূরত্ব মাত্র ৯০ কিলোমিটার। এ জেলা হাওর-বাঁওড়ের জেলা নামে অধিক পরিচিত। এখানেও হাওর ঘিরে তৈরি হয়েছে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা; যা স্থানীয় জীবনমান উন্নয়নেও প্রভাব রাখছে।
Related
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।