ডেস্ক রিপোর্ট: পাহাড় আমাকে টানেনা, টানে সমুদ্র। অবশ্য পাহাড়ে খুব একটা যাওয়া হয়নি। সে জন্যই হয়তো পাহাড়ের প্রতি প্রেম কম। পরিবারের পরিকল্পনায় এই আমি এবার পাহাড় দেখতে যাচ্ছি। তাও আবার দেশে নয়, ভারতের সিকিম। যাত্রাপথে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় প্রিয় কবিতাটা বার বার মনে পড়ল-
না আমার পাহাড় কেনার শখ ছিল না। নিজস্ব নদীও নেই। আছে সামান্য একটা পুকুর। সেখানেও আগাছায় ভরে আছে। তবে শখ ছিল সমুদ্রের তীরঘেঁষে ছোট্ট একটা ঘর বানিয়ে থাকার। যে ঘরে গাঘেঁষে আছড়ে পড়বে বিশাল ঢেউ। আমি ঘুমিয়ে থাকব, ঢেউ নৃত্যে ঝংকার তুলে আমার ঘুম ভাঙাবে। পাশে থাকা প্রিয়তমাও ঢেউয়ে জেগে যাবে। আমি তখন বলব, চল সমুদ্রে নামি। আমরা নেমে পড়ব। সেই আমি ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট থেকে পাহাড় দেখার উদ্দেশ্যে উঠলাম ঢাকা টু নিউ জলপাইগুড়ি মিতালি এক্সপ্রেসে। সঙ্গে স্ত্রী হুমায়রা নুসরাত, তিন বছরের সন্তান পিহু, বন্ধু অপূর্ণ রুবেল, তাঁর স্ত্রী তানিয়া ভাবি ও ছেলে সাধ্য। গন্তব্য ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিকিম রাজ্যের পাহাড়ি অঞ্চল পেলিং।
ভ্রমণের দিন রাত ৮টা ৫০ মিনিটে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে মিতালি এক্সপ্রেসে উঠে নিউজলপাইগুড়ি নামি পরদিন সকাল ১০টায়। নাশতা সেরে ঠিক করে নিই পেলিংয়ে যাওয়ার গাড়ি। বোলেরো বা টাটা সুমোয় এনজেপি থেকে পেলিং যেতে জনপ্রতি ভাড়া লাগে ৩ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ রুপির মতো। শিলিগুড়ি এসএনটি বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসেও যাওয়া যায়। বাসে লাগে মাথাপিছু ২৫০ রুপির মতো। আমরা গাড়ি নিলাম ১৪ হাজার রুপি দিয়ে। শর্ত ছিল, জলপাইগুড়ি থেকে পেলিংয়ে নিয়ে দু’দিন দর্শনীয় জায়গা ঘুরিয়ে দেখাবে; পরে শিলিগুড়ি নামিয়ে দিয়ে যাবে গাড়ি। ড্রাইভারের নাম সঞ্জয়। বেশ ফুরফুরে মেজাজের লোক। পুরো পেলিং ট্যুরে তিনি আমাদের গাইডের কাজটিও করেছেন।
পেলিংয়ে যাওয়ার পথে তিস্তা বাজার বা জোরথাংয়ে বিকেলের দিকে সেরে নিই দুপুরের খাবার। বলে নেওয়া ভালো, এখানকার হোটেলগুলোর খাবারের পরিবেশন সুন্দর। কিন্তু খেতে গেলে কী একটা উটকো গন্ধ লাগে। স্বাদ খুব একটা ভালো নয়।
পেলিংয়ে যাত্রাপথে অপার সৌন্দর্য মুগ্ধ করে দেবে যে কাউকে। গাড়িতে ঘুমও এসে যেতে পারে। আবার মাঝেমধ্যে চোখ মেলে দেখবেন অপার শান্তির কোনো পথে ছুটছেন। চারদিকে বিশাল বিশাল পাহাড়। পাহাড়ি পথ বেয়ে সাপের মতো উঁচুতে উঠে যাচ্ছে রাস্তা। গা শিরশির করে উঠবে। পেলিংয়ের মূল শহরে পৌঁছতে রাত ৯টা বেজে গেল। টানা জার্নির ফলে শরীর তখন বিছানা খুঁজছিল। দ্রুত হোটেল ঠিক করে উঠে পড়ি তাতে। অফ সিজন হওয়ায় কম ভাড়ায় হোটেল পাই। রুম ভাড়া এক হাজার রুপি। পরদিন সকালে বারান্দায় দাঁড়িয়ে মুগ্ধ হই। হাত বাড়ালেই যেন ছোঁয়া যাচ্ছিল পাহাড়। তার ওপর দিয়ে মেঘের ছড়াছড়ি। এখান থেকেই স্বপ্নের মতো সুন্দর কাঞ্চনজঙ্ঘাকে দেখা যায়। তবে আমরা দেখিনি। মেঘে ঢাকা ছিল কাঞ্চনজঙ্ঘা। নাশতা সেরে শুরু হয় পেলিং দেখা। চলে যাই কাঞ্চনজঙ্ঘা ফলস, খেচিপেরি লেকে। আরেকটু দূরের সিংসোর ও অরেঞ্জ গার্ডেনে। পুরো দিন ঘুরতে ঘুরতে শরীর তখন ক্লান্ত। হোটেলে গিয়ে দিই আয়েশি ঘুম।
পরের দিন সকালে চলে যাই পেলিং স্কাইওয়াকে। বলে রাখা ভালো, কয়েক শত ফুট ওপরে স্বচ্ছ কাচের রাস্তায় হাঁটার জন্য মনে সাহস থাকা চাই। যাদের উচ্চতাভীতি আছে, তাদের এ শহরে না আসাই ভালো। পাহাড়চূড়ায় বড় বড় স্টিলের পাতের ওপর স্বচ্ছ কাচের তৈরি পথে যখন হাঁটবেন, তখন আপনার রক্তচাপ বেড়ে যাবে, স্নায়ুতে উঠবে রোমাঞ্চের শিহরণ। আর সে রোমাঞ্চ ছড়িয়ে পড়বে আপনার নিউরনে। আপনি চমকে উঠতে বাধ্য হবেন। পাহাড়-বন-আকাশ ছাড়াও স্কাই ওয়াক এ শহরের অন্যতম আকর্ষণের জায়গা।
স্কাই ওয়ার্ক দেখে বেলা ১০টার দিকে হোটেলে ফিরেই শিলিগুড়ির উদ্দেশে যাত্রা। পথে দেখে নিই বার্ড গার্ডেন। যদিও আমরা এখানে যেতে চাইনি। ড্রাইভার রঞ্জিত বললেন, ‘ঘুরে যান সাব, এটা না দেখে গেলে পরে মিস করবেন।’ দেখার পর মনে হলো না দেখলে সত্যিই পেলিং ট্যুর অসম্পূর্ণ থাকত …
ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট থেকে মিতালি এক্সপ্রেস ট্রেনে করে যেতে হবে নিউজলপাইগুড়ি। মিতালি এক্সপ্রেসে জনপ্রতি এসি বার্থে ভ্যাট ছাড়া ভাড়া ৪ হাজার ৮৪০ টাকা, এসি সিট ৩ হাজার ৬৩০ টাকা এবং এসি চেয়ার ২ হাজার ৪২০ টাকা। এনপিজি থেকে বোলেরো বা টাটা সুমোয় নামক যানবাহন করে পেলিং যেতে হবে। এতে জনপ্রতি ভাড়া পড়বে ৩ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ রুপি। শিলিগুড়ি এসএনটি বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসেও যাওয়া যায়। বাসে লাগে মাথা পিছু ৩০০ বা ৩৫০ রুপি।
Related
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।