নিউইয়র্কে বাড়ছে হেইট ক্রাইম: আতঙ্ক বাংলাদেশী কমিউনিটিতে

Daily Ajker Sylhet

২১ আগ ২০১৬, ১১:৩৮ অপরাহ্ণ


images

ফয়জুল ইসলাম চৌধুরী নয়ন ::: বাংলাদেশী লোকজনের কাছে স্বপ্নের দেশ নামে খ্যাত যুক্তরাষ্ট্রে ক্রমাগত বেড়েই চলছে হেইট ক্রাইম। প্রতিদিনই যুক্তরাষ্ট্রের কোথাও না কোথাও বাংলাদেশী লোকজনের উপর হামলার খবর পাওয়া যায়। ফলে চরম আতংকে দিনযাপন করছেন বাংলাদেশী কমিউনিটির লোকজন। হামলাকারীদের গ্রেফতার এবং লোকজনের নিরাপত্তায় পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন রকম আশ্বাস দেয়া হলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই অপরাধীরা রয়ে যাচ্ছে ধরা ছোয়ার বাইরে। আবার কেউ কেউ গ্রেফতার হলেও আইনের বিভিন্ন ফাক ফোকর দিয়ে বেড়িয়ে আসছে অপরাধীরা। ফলে ক্রমাগত বেড়েই চলছে হামলার ঘটনা। গত ৫ আগষ্ট নিউইয়র্কের ওয়েষ্টচেষ্টার স্কয়ার সাবওয়ের নিকটে হেইট ক্রাইমের শিকার হন মোঃ আলী হায়দার (৪০)। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রাত প্রায় দশটায় মোঃ আলী হায়দার ও তার স্ত্রী বাসার নিকটে হাটছিলেন হঠাৎ করে চার যুবক কিছু বুঝে উঠার আগেই এলোপাতাড়ি কিল ঘুষি মেরে পালিয়ে যায়। এতে আলী হায়দার মারাত্বক আহত হন,পরে স্থানীয় লোকজন থাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রেরণ করেন। তিন দিন তাকে স্থানীয় হসপিটালে আইসিইউতে থাকতে হয়েছে।এ ঘটনায় পুলিশ একজনকে গ্রেফতার করেছে। এ হামলার ঘটনায় কমিউনিটি লিডার নিউইয়র্কের বিশিষ্ট আইনজীবি জনাব এন মজুমদার এর নেতৃত্বে এক বিক্ষোভ কর্মসুচি পালন করা হয়েছে। উক্ত বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বাঙালী কমিউনিটির শত শত লোকজন উপস্থিত ছিলেন। ভিকটিম আলী হায়দারের দেশের বাড়ি মুন্সীগঞ্জের বিক্রমপুর এলাকায়। আলী হায়দার ডানকিন ডোনাটে চাকরি করেন বলে তার পরিবার সূত্রে জানা যায়।
এর কিছুদিন পূর্বে জ্যামাইকায় আক্রমনের শিকার হন রজমান গাজী নামে অপর এক বাঙালী। এ হামলার ঘটনায় পুলিশ উল্টো গাজী রহমানকেই হয়রানি করে বলে অভিযোগ করা হয়। গত ২০ জুন সোমবার রাত প্রায় দশটায় ব্রঙ্কসের পার্কচেস্টার স্টারলিং বাংলাবাজার এভিনিউর স্টারলিং ফার্মেসীর সামনে ব্ল্যাক কার চালক সোহেল চৌধুরী (৪০) কে দু’জন কৃষ্ণাঙ্গ যুবক এলোপাতারি কিল ঘুষি মেরে মারাত্মক জখম করে। গত ১৬ জুন বৃহস্পতিবার রাত প্রায় সাড়ে দশটায় ব্রঙ্কসের পার্কচেস্টার ম্যাগ্রো এভিনিউর মসজিদে তারাবীর নামাজে যাওয়ার সময় অপর বাংলাদেশি আতিক আশরাফকে দুই কৃষ্ণাঙ্গ যুবক একই কায়দায় হামলা চালিয়ে মারাত্মক জখম করে। গত ২৩ এপ্রিল হামলার শিকার হন মো. সাইফুর রহমান। এরপর বাংলাদেশী কমিউনিটি অব নর্থ ব্রঙ্কসের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম খান ব্রঙ্কসে মারকাত্মভাবে প্রহৃত হন। গত ৬ ফেব্রুয়ারী ক্যাব চালক মো. আতাউর রহমান এবং জানুয়ারীতে ব্রঙ্কসে পায়জামা-পাঞ্জাবি পরিহিত মুয়াজ্জিন মজিবুর রহমান আক্রান্ত হন। সর্বশেষ,বাংলাদেশী অধ্যুষিত এলাকা নিউইয়র্কের কুইন্সের ওজন পার্ক আল ফুরকান মসজিদের ইমাম মাওলানা আলা উদ্দীন আকুন্জি এবং তার সাথে থাকা এক ব্যক্তি কৃষ্ণাজ্ঞের গুলিতে নিহত হয়েছেন। ১৩ আগষ্ট শনিবার নিউইয়র্ক সময় দুপুর দুইটার দিকে সিটির অজনপার্ক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে । জানা যায়, নিহত ইমাম আকুন্জি সালাতুজ জোহর পড়িয়ে একজন মুসল্লিগনের সাথে যখন বাসার দিকে ফিরছিলেন, ঠিক তখনই একজন কৃষ্ণাঙ্গ কোন কারণ ছাড়াই এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়লে সাথে সাথে ঘটনাস্থলেই ইমাম মারা যান এবং ইমামের সাথে থাকা গুলিবিদ্ধ আহত মুসল্লি তারা উদ্দিন হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত ইমাম মাওলানা আলা উদ্দীন আকুন্জির বাড়ী সিলেটের হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলায়। তিনি হবিগঞ্জ শহরের চৌধুরী বাজার জামে মসজিদের সাবেক ইমাম।নিহত মুসল্লি মুহাম্মাদ তারা উদ্দিন বাড়ী সিলেটের গোলাপগঞ্জের জাঙ্গাহাটা। এতসব ঘটনার পর বাংলাদেশি কমিউনিটিতে দিন দিন বেড়ে চলছে আতংক আর উৎকণ্ঠা । সকলেই উদ্বেগের মধ্যেই থাকেন সর্বত্র । কখন কার অঘটন ঘটে যায় । যদিও নিউইয়র্ক পুলিশ বাহিনিকে সিটি মেয়র বিল ডি ব্লাসিও বলে দিয়েছেন আরো বেশি নিরাপত্তা প্রদান করার জন্য । এরপরও যেন উদ্বেগ আর আতংক কাটছে না প্রতিটি পরিবারেই ।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।