অনলাইন ডেস্ক : গাজা যুদ্ধ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের নির্দেশনা মেনে না চলায় ইসরায়েলে বিধ্বংসী সমরাস্ত্র পাঠানো স্থগিত করতে চায় হোয়াইট হাউস। যদি তা সম্ভব না হয়, সেক্ষেত্রে সহায়তা বিলম্বে পাঠানোর ব্যাপারটিও ওয়াশিংটনের বিবেচনায় রয়েছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজ জানিয়েছে, কয়েক সপ্তাহ আগে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিমান প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম এবং যুদ্ধবিমান থেকে ছোড়ার উপযোগী শক্তিশালী বোমা চেয়েছে ইসরায়েল। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাতে কোনো সাড়া দেয়নি ওয়াশিংটন।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদর দপ্তর পেন্টাগনের অন্তত ৪ জন কর্মকর্তা এনবিসি নিউজকে এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘আমরা ইসরায়েলে বিধ্বংসী গোলাবারুদ এবং এ জাতীয় সমরাস্ত্র পাঠানো আপাতত স্থগিত করতে চাইছি। যদি তা সম্ভব না হয়, সেক্ষেত্রে এই সরবরাহ বিলম্বে পাঠানোর ব্যাপারটি আমাদের বিবেচনাধীনে রয়েছে।’
পেন্টাগনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ১৫৫ এমএম আর্টিলারি বোমা এবং রকেট হামলা থেকে যুদ্ধবিমানের সুরক্ষা নিশ্চিতে বিমান প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা। চিঠিটি এখনও পেন্টাগনের পর্যালোচনাধীনে রয়েছে এবং এ ইস্যুতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত হলো, বিমান সুরক্ষা সরঞ্জাম যথাসময়ে পাঠালেও আপাতত ১৫৫ এমএম আর্টিলারি বোমা পাঠানো হবে না।
‘আমরা এমনটা করতে চাই, কারণ যদি ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর হাতে আধুনিক বিধ্বংসী অস্ত্রের ঘাটতি থাকে, সেক্ষেত্রে গাজায় দৈনিক প্রাণহানির হার খানিকটা হলেও হ্রাস পাবে এবং সেখানে ত্রাণ ও মানবিক সহায়তা পাঠানোর পথ সুগম হবে, এনবিসিকে বলেন পেন্টাগনের এক কর্মকর্তা।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ইরেজ সীমান্তে অতর্কিত হামলা চালিয়ে সামরিক-বেসামরিক ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিকসহ ১ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করে হামাস যোদ্ধারা। সেই সঙ্গে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায় আরও ২৪০ জন ইসরায়েলি এবং অন্যান্য দেশের নাগরিককে।
বস্তুত, ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর গত ৭৫ বছরের ইতিহাসে সেদিন প্রথম একদিনে এতজন মানুষের হত্যা দেখেছে ইসরায়েল। অভূতপূর্ব সেই হামলার জবাবে সেদিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী এবং তার এক সপ্তাহ পর বিমান বাহিনীর সঙ্গে যোগ দেয় স্থল বাহিনীও।
ইসরায়েলি বাহিনীর লাগাতার বোমাবর্ষণে গত প্রায় সাড়ে চার মাসে গাজায় নিহত হয়েছেন ২৬ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি, আহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার এবং ইসরায়েলি বাহিনীর বোমাবর্ষণে ধসে যাওয়া বিভিন্ন ভবনের ধ্বংস্তূপের নীচে এখন ও চাপা পড়ে আছেন অন্তত কয়েক হাজার মানুষ।
গত ২৫ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঘোষিত এক মানবিক বিরতির সাত দিনে মোট ১০৮ জন জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। বাকি ১৩২ জন এখনও তাদের হাতে আটক রয়েছেন।
প্রসঙ্গত, গত ৭ অক্টোবরের হামলার জবাব দিতে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান শুরুর পর থেকে ইসরায়েলকে সামরিক, কূটনৈতিক, রাজনৈতিক এবং গোয়েন্দা সহায়তা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। সেই সঙ্গে এই যুদ্ধে গাজার বেসামরিকদের প্রাণহানি থামাতে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছে ওয়াশিংটন, এবং যুদ্ধ শেষে মধ্যপ্রাচ্যের আল আকসা অঞ্চলে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন নামের দু’টি পৃথক রাষ্ট্র স্থাপনের পক্ষেও দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে হোয়াইট হাউস।
কিন্তু ওয়াশিংটনের সেসব নির্দেশনা ও পরার্শের অধিকাংশই গ্রাহ্য করছে না ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা এবং প্রতিরক্ষা বাহিনী। উপরন্তু ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু কিছুদিন আগে মার্কিন সংবাদমাধ্যম এক্সিওসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ইসরায়েলের নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
সূত্র : আরটি নিউজ
Related
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।