টিপু সুলতান, কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহ :: ভোরের সূর্য ওঠার আগেই অপেক্ষা শুরু হয় হাজার হাজার গাঙ শালিকের। ব্যস্ততম মহাসড়কের পাশে,টিনের চালে,গাছের ডালে দলে দলে আসতে শুরু করে পাখিরা। কিচির মিচির শব্দে চারপাশে ভিন্ন রকমের আবহ তৈরি হয়। তাদের অপেক্ষার অবসান শেষ হয় জয়ন্ত ঘোষের হোটেল খুললে। প্রতিদিন সকালে এই পাখিদের জন্য খাবার নিয়ে হাজির হন তিনি। এমনিই এক পাখি প্রেমীর খোঁজ মিলেছে জয়ন্ত ঘোষ যেন এই পাখিদের বন্ধু। পেশায় তিনি একজন হোটেলের মালিক। উপজেলার গাড়াগঞ্জ বাজারে অবস্থিত ঘোষ সুইটসের মালিক মিলন ঘোষের ছেলে জয়ন্ত ঘোষ। শুনতে অবাক লাগলেও দীর্ঘ ২০ বছরের বেশি সময় ধরে এই হোটেল থেকে গাঙ শালিকদের খাবার দেওয়া হয়। জয়ন্ত খাবার দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আশপাশের গাছ, ছাদ থেকে হাজার হাজার পাখি ঝাঁকে ঝাঁকে চলে আসে। এ সময় এত পাখির খাওয়া দেখতে দাঁড়িয়ে যায় পথচারীরাও।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভোরের আলো ফোটার আগেই গাঙ শালিকের দল অপেক্ষা করতে থাকে জয়ন্তের জন্য। জয়ন্ত হোটেলে বেঁচে যাওয়া ভাত, পরেটা, রুটি, পুরি কেটে প্রস্তুত করে রাখেন আগের রাতে। পরের দিনি ভোর সকালে সেই খাবার পাখিদের খেতে দেন। কিচির মিচির শব্দে রীতিমতো যুদ্ধ শুরু হয় শালিক দলের মধ্যে। এমন ঘটনা চলতে থাকে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী। সাধারণ মানুষও চলতি পথে এমন দৃশ্য দেখে না থেমে যান। তারাও উপভোগ করেন এ দৃশ্য। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আবার হারিয়ে যায় হাজার হাজার শালিকের দল। ব্যবসায়ী হাফিজ উদ্দীন বলেন, পাখিকে ভালোবাসে বলেই পাখি গুলো এখানে ছুটে আছে। এখানকার মানুষ সবাই পাখি ভক্ত। পাখি গুলো এখান থেকে কোথাও সরে না। ১৫/২০ বছর ধরে পাখি গুলোর আগমন ঘটেছে। শুধু শালিক পাখি না, এখানে কাক, চড়ইসহ বেশ কিছু ধরনের পাখি আসে। এখানকার মানুষ পাখি গুলোকে অনেক ভালোবাসে। জয়ন্ত দাদার দুইটা হোটেল থেকে প্রতিদিন সকালে খাবার খাওয়ানোর পরও বাজারের অন্যান্য ব্যবসায়ীরা সারাদিনই কিছু না কিছু খেতে দেয়। তবে সরকারি ভাবে পাখি গুলোকে খাবারের ব্যবস্থা করতে পারলে ভালো হতো। এই শালিক পাখির কারণে গাড়াগঞ্জ বাজারকে এখন শালিক নগর নামকরণ করা উচিৎ।স্থানীয় সম্রাট হোসেন বলেন, এমন দৃশ্য খুব কমই দেখতে পাই। পাখির প্রতি মানুষের এই ভালোবাসা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। ব্যস্ততম এ বাজারে মানুষের কোলাহলের সঙ্গে পাখির এমন বন্ধুত্ব সবাইকে অবাক করে। আগে পাখিগুলো সকালে খাবার খেয়ে চলে যেত। বর্তমানে পাখিগুলো স্থায়ীভাবে থাকতে শুরু করেছে।
মুদি ব্যবসায়ী জাহিদুল ইসলাম বলেন, ২০ বছরের বেশি সময় ধরে পাখি গুলো দেখে আসছি। ভোর সকালে হোটেল খুলতেই কোথা থেকে যেন চলে আসে। খাবার শেষে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ওরা কোথায় যেন হারিয়ে যায়। পাখি গুলো মানুষের কোন ক্ষতি করে না। অনেক মানুষ সকালে পাখিগুলো দেখতে আসে। কেউ ভাজা দেয়, চাল দেয়, মুড়ি দেয়। তবে ওদের সবথেকে প্রিয় খাবার ভাজা। এখন প্রায় সারদিনই পাখির কলকাকলিতে বাজার মুখরিত থাকে।
জয়ন্ত ঘোষের বাবা মিলন ঘোষ বলেন, প্রায় ২০ বছর ধরে পাখিদের খাবার দিয়ে আসছি। দিনে দিনে পাখির সংখ্যা বাড়ছে। আমরা আমাদের সাধ্য অনুযায়ী খাবার দিয়ে থাকি। প্রতিদিন সকালে হোটেলের দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে পাখিগুলো মুহূর্তের মধ্যে ছুটে আসে। আবার খাবার খাওয়া শেষ হলে মুহূর্তের মধ্যে হারিয়ে যায়। বাজারের মুনষগুলো অনেক ভালো, পাখি গুলোকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছে। বনবিভাগ থেকে এই পাখিগুলো রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারলে অনেক ভালো হতো।
গাড়াগঞ্জ বাজারের ঘোষ সুইটসের স্বত্বাধিকারী জয়ন্ত ঘোষ জানান, আমার বাবা-চাচারা ২০ বছরের ওপর এ পাখির খেদমত করে আসছে। এখন আমি আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। একসময় পাখি কম আসলেও এখন পাখির সংখ্যা বাড়ছে। হাজারো পাখির মিলনমেলা দেখতে ভালোই লাগে। আরও বলেন, হোটেলে সারাদিন বেচাকেনা শেষে রাতে যে খাবার বেঁচে থাকে সেগুলো কেটে পাখির খাবারের জন্য প্রস্তুত করে রাখি। পরের দিন সকালে এসেই সেগুলো পাখিদের দেওয়া হয়। আবার কখনো কখনো খাবার কম পড়ে গেলে সকালে নতুন করে ভেজে দেওয়া হয়। প্রতিদিন দুই-তিন গামলা খাবার দেওয়া হয়। একই ভাবে আমার বাবা-দাদারা দিয়ে গেছে। আমিও দিয়ে যাচ্ছি। একই ভাবে প্রতিদিন খাবার দেওয়া হয়। পাখিগুলো আমাদের কোন সমস্যা করে না।
0000
SAD
0
Related
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।