দেশে তীব্র সঙ্কটেও গ্যাসের সরবরাহ সহসা বাড়ছে না - BANGLANEWSUS.COM
  • নিউইয়র্ক, সকাল ৬:১৮, ১৪ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ


 

দেশে তীব্র সঙ্কটেও গ্যাসের সরবরাহ সহসা বাড়ছে না

banglanewsus.com
প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৪
দেশে তীব্র সঙ্কটেও গ্যাসের সরবরাহ সহসা বাড়ছে না

দেশে তীব্র গ্যাস সঙ্কট বিরাজ করলেও সহসা বাড়ছে তা সরবরাহ। দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৪০০ কোটি ঘনফুট। এর বিপরীতে সরবরাহ হচ্ছে ২৬৬ কোটি ২০ লাখ ঘনফুট। তবে দুটি এলএনজি টার্মিনাল চালু থাকলে গড় সরবরাহ থাকে ২৯০ কোটি ঘনফুটের কিছু বেশি। পেট্রোবাংলা ও জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তারা চাহিদা ও সরবরাহের বড় এ ঘাটতি অচিরেই নিরসনের কোনো লক্ষণ নেই। বরং জাতীয় গ্রিডে প্রতিদিন যে পরিমাণ গ্য্যাস সরবরাহ হচ্ছে, সেটিই এখন ধরে রাখার চেষ্টা চলছে। স্থানীয় গ্যাস উৎপাদন যাতে কোনোভাবেই কমে না যায়, সে বিষয়টিতেই পেট্রোবাংলা নজর দিচ্ছে সবচেয়ে বেশি। আর স্পট মার্কেট থেকেও গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণ এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) কার্গো কেনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। পেট্রোবাংলা সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চলতি বছর পেট্রোবাংলা ২৫টি এলএনজি কার্গো কেনার পরিকল্পনা করেছে। এ ছাড়া দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় গত বছরের মতো এবারো আসবে ৫৬টি কার্গো। এ দিয়েই চলতি বছর গ্যাস সরবরাহ কার্যক্রম নিরবচ্ছিন্ন রাখার পরিকল্পনা সংস্থাটির। যদিও স্পট মার্কেট থেকে পরিকল্পনা অনুযায়ী কার্গো আমদানির বিষয়টি দাম ওঠানামার ওপর নির্ভর করছে। স্থানীয় গ্যাস ও এলএনজি সরবরাহ কার্যক্রম নিয়ে চলতি বছরের জন্য একটি প্রক্ষেপণ করেছে পেট্রোবাংলা। দু’ধাপের গ্যাস সরবরাহ প্রাক্কলনের প্রথমটি চলতি ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাসের। তাতে গড় সরবরাহ ধরা হয়েছে দৈনিক ২৭৯ কোটি থেকে ২৮৭ কোটি ৫০ লাখ ঘনফুট পর্যন্ত। এ সময়ে দীর্ঘমেয়াদি এলএনজি চুক্তির আওতায় দুটি দেশ কাতার ও ওমান থেকে কার্গো আসবে ২০টি এবং স্পট থেকে কেনা হবে ১০টি। জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দ্বিতীয় ধাপের প্রাক্কলনে ২৭৯ কোটি থেকে ২৮৭ কোটি ৫০ লাখ ঘনফুট গ্যাস সরবরাহের কথা বলা হয়েছে। এ সময় দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি থেকে ২৫টি এবং স্পট মার্কেট থেকে কার্গো কেনার প্রাক্কলন করা হয়েছে ১২টি। সূত্র জানায়, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত জাতীয় গ্রিডে স্থানীয় গ্যাসের যে সরবরাহ ছিল, গত বছরের একই সময়ে তা ১৮ কোটি ৪০ লাখ ঘনফুট কমেছে। তবে চলতি বছর স্থানীয় গ্যাস সরবরাহ গত বছরের মতোই রয়েছে। যতটুকু সরবরাহ কমেছে স্থানীয় কূপগুলো থেকে বাড়তি কিছু যুক্তও হয়েছে। দু’একটি কূপ সংস্কারের মাধ্যমে আরো গ্যাস যুক্ত হতে পারে। এ ছাড়া দাম সাশ্রয়ী থাকলে এলএনজি আমদানি বাড়িয়েও সরবরাহ কার্যক্রম ঠিক রাখা হবে। পেট্রোবাংলার দেশে স্থানীয় উৎপাদন ও এলএনজি আমদানি মিলিয়ে দৈনিক ২৮০-২৯০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহের সক্ষমতা রয়েছে। এর মধ্যে স্থানীয় গ্যাসক্ষেত্রগুলো দৈনিক ২১০-২২০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করে। বাকি গ্যাস আসে দুটি এলএনজি টার্মিনাল দিয়ে। এর বাইরে গ্যাসের বড় কোনো সরবরাহ সহসা আসবে কিনা সে বিষয়টি নিয়ে কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি। তবে ২০২৬ সাল নাগাদ দীর্ঘমেয়াদি এলএনজি চুক্তি বৃদ্ধি এবং এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ শেষে গ্যাস সরবরাহ বাড়ার ইঙ্গিত রয়েছে সরকারের। তার আগে দৈনিক ৩০০ কোটি ঘনফুটের চেয়ে বাড়তি সরবরাহ যে সম্ভব নয় তা স্বীকারও করেছেন পেট্রোবাংলার একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। সূত্র আরো জানায়, স্থানীয় গ্যাসের বাইরে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর পথ হিসেবে এলএনজি আমদানিতেই মনোযোগ দেয়া হচ্ছে। এর বাইরে স্থানীয়ভাবে ৪৬টি গ্যাস কূপ খননের কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া কাতার ও ওমানের সঙ্গে এলএনজির নতুন চুক্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে গত বছরের জুনে ওমানের ওকিউ ট্রেডিং লিমিটেডের (ওকিউটি) কাছ থেকে বছরে দশমিক ২৫ মিলিয়ন থেকে দেড় মিলিয়ন টন এলএনজি পাবে পেট্রোবাংলা। নতুন এ চুক্তির আওতায় ২০২৬ সাল থেকে ওমানের গ্যাস দেয়ার প্রতিশ্রুতি রয়েছে। এ ছাড়া ১৫ বছর মেয়াদি নতুন চুক্তির আওতায় ২০২৬ সালে কাতার এনার্জি ট্রেডিং এলএনসির গ্যাস সরবরাহ শুরু হবে। এলএনজি আমদানি বাড়ানোর অংশ হিসেবে জিটুজি চুক্তির বাইরে বেসরকারি খাতে এলএনজি সরবরাহের জন্যও চুক্তি করেছে সরকার। সে অনুযায়ী মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জি বাংলাদেশ লিমিটেড ২০২৬ সাল থেকে ১৫ বছর এলএনজি সরবরাহ করবে। দেশে গ্যাস সংকট কাটাতে ১৫ বছর পেট্রোবাংলাকে এলএনজি সরবরাহ করবে সামিট গ্রুপ। ২০২৬ সালের অক্টোবর থেকে বছরে ১৫ লাখ টন এলএনজি সরবরাহ করবে তারা। গ্যাসের এসব আমদানি কার্যক্রম সামনে রেখে গত বছরের ১৪ জুন সামিট গ্রুপর নতুন একটি এলএনজি টার্মিনাল অনুমোদন দেয় অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহ সক্ষমতার এ টার্মিনাল নির্মাণ হবে কক্সবাজারের মহেশখালীতে। এ ছাড়া এক্সিলারেট এনার্জিরও পায়রায় এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ অনুমোদন অপেক্ষায় রয়েছে। এদিকে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এলএনজি আমদানির এ কার্যক্রমে বিপুল পরিমাণ অর্থের বিষয় রয়েছে। সে সময়ে জ্বালানি তেলের দামের ওপর নির্ভর করে নির্ধারিত হবে এলএনজি দাম। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের চড়া দাম থাকলে চড়া দামেই সরকারকে এলএনজি কিনতে হবে। তাছাড়া ২০২৬ সালের মধ্যে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের যে সময়সীমা বলা হচ্ছে, সেটিও ওই সময়ের মধ্যে করা যাবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। যদিও দেশে গ্যাসের সরবরাহ সংকট কাটাতে এলএনজি চুক্তি করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে একটা নির্দিষ্ট সময় বলা হচ্ছে। স্থানীয় গ্যাস কূপগুলো থেকে পর্যাপ্ত সরবরাহ আসছে না। পর্যায়ক্রমে গ্যাসক্ষেত্রগুলোর উৎপাদন কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে এ বিষয়ে পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মাইনস) প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান জানান, স্থানীয় গ্যাসের মজুদ কমে আসছে। ফলে কূপগুলো থেকে ক্রমান্বয়ে উৎপাদন কমবে এটিই স্বাভাবিক। তবে সামগ্রিকভাবে গ্যাস সরবরাহ কিন্তু ঠিক আছে। এলএনজির দাম এখন স্পট মার্কেটে কম। চলতি বছর মোট ২৫টি কার্গো আমদানির পরিকল্পনা করা হয়েছে। যদিও আমদানির বিষয়টি মূল্যের ওঠানামার ওপর নির্ভর করছে।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।