সম্পাদকীয়: শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান মুসলিম লীগ (পিএমএল-এন)-এর শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বে জোট সরকার গঠন হতে চলেছে। পিএমএল-এন ও পাকিস্তান পিপলস পার্টি(পিপিপি)সহ আরও কয়েকটি ক্ষুদ্র দল এ জোটের অংশীদার। দুবছর আগে এ দলগুলোই সংসদে অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে ইমরান খানকে উৎখাত করে শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বেই জোট সরকার গঠন করেছিল। কথিত আছে, ইমরান খানের উৎখাতের নেপথ্যে তৎকালীন পাকিস্তান সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়া সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন। বিরোধী দলগুলোর সমন্বয়ে গঠিত পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (পিডিএম) নামের জোট,২০২২ সালের এপ্রিলে ইমরান খানকে উৎখাতের ওই তৎপরতা চালিয়েছিল। সে সময় জোটের প্রধান ছিলেন পাকিস্তান জমিয়তে উলেমা-ই-ইসলামের আমির মাওলানা ফজলুর রেহমান। সম্প্রতি পাকিস্তানের এক বেসরকারি টেলিভিশন চ্যালেনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে
মাওলানা ফজলুর রেহমান জানিয়েছেন, তৎকালীন পাকিস্তান সেনাপ্রধান বাজওয়ার নির্দেশেই সংসদে ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করতে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়েছিল। পাকিস্তানের ইন্টার সার্ভিস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই)-এর প্রধান তৎকালীন লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফাইজ হামিদ ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য জেনারেল বাজওয়ার নির্দেশটি ফজলুর রেহমানের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন। ইমরানকে ক্ষমতাচ্যুতির পদ্ধতিও তখন তিনি ফজলুর রেহমানকে জানিয়ে দিয়েছিলেন।এর আগে অবশ্য আইএসআই, ইমরান সরকারের অংশীদার, বেলুচিস্তান আওয়ামী পার্টি,মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট-পাকিস্তানসহ অন্যান্য দলকে জোট থেকে সরিয়ে নেওয়ার কাজটি সম্পন্ন করে ফেলেছিল। আইএসআই প্রধান জেনারেল হামিদ ফজলুর রেহমানকে বলেছিলেন, ‘পিটিআইবিরোধীরা এখন পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠ; কাজেই সরকারবিরোধী জোট এখন যা চায় তাই করতে পারে এবং যা কিছু করার তা পার্লামেন্টের ভেতরই করতে হবে। রাজপথে কিছু হবে না।’ জেনারেল বাজওয়ার নির্দেশনাটি ছিল বেশ স্পষ্ট ও অর্থবহ, কী করতে হবে মাওলানা ফজলুর রেহমানের বুঝতে বাকি রইল না। তিনি পিএমএল-এন নেতা শাহবাজ শরিফ ও পিপিপির চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টোসহ জোটের অন্য নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেন এবং সংসদের অনাস্থা প্রস্তাব এনে ইমরান
খানকে ক্ষমতাচ্যুত করার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। ৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানে একযোগে চারটি প্রাদেশিকসহ জাতীয় পরিষদ নির্বাচন
অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। পাকিস্তান সুপ্রিমকোর্টের মাধ্যমে ইমরান খানের পিটিআইকে এ নির্বাচনে অংশগ্রহণে নিষিদ্ধ করা হয়। এমনকি তার দলের নির্বাচন প্রতীক ‘ক্রিকেট ব্যাট’ বরাদ্দ করাও হয়নি। তারপরও পিটিআইয়ের নেতানেত্রীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। জাতীয় পরিষদের ২৬৬ আসনের মধ্যে ২৬৫ আসনে ভোট হয়। নির্বাচনে কোনো একক দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। ২৬৫টির মধ্যে ইমরানের পিটিআইসমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৯৩ আসনে জয়লাভ করেন। নওয়াজ শরিফের পিএমএল-এন ৭৫ ও বিলওয়ালের পিপিপি ৫৪ আসন পেয়েছে। অন্যান্য দল পেয়েছে বাকি আসনগুলো। এত প্রতিকূলতা ও চারদিকের নানাবিধ বৈরিতা মোকাবিলা করে ইমরানের দল এতগুলো আসন পাবে তা কেউ কল্পনাও করতে
পারেনি। অপরদিকে সেনাবাহিনীর আশীর্বাদ নিয়েও নওয়াজ শরিফের পিএমএল-এন পিছিয়ে পড়বে, তা অনেকের ধারণার বাইরেই ছিল। তবে এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৮ সালের নির্বাচনের তুলনায় পিএমএল-এন ও পিপিপির জনপ্রিয়তা প্রায় ১০
শতাংশ বেড়েছে। সে হিসাবে ইমরানের দলের জনপ্রিয়তা গত নির্বাচনের চেয়ে এবারের ভোটে কিছুটা কমেছে।
শাহবাজ শরিফকে মেয়াদ পূর্ণ করতে হলে সে দেশের সেনাবাহিনীকে তোয়াজ করেই দেশ চালাতে হবে; তা না হলে তাকেও একই ভাগ্যবরণ করতে হবে। শাহবাজ শরিফ যতদিনই ক্ষমতায় থাকুন, তা যে খুব বেশি শান্তিপূর্ণ হবে তা বলা যাচ্ছে না। সংখ্যাগরিষ্ঠ হিসাবে পিটিআইয়ের বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সংসদে বিরোধীদলের আসনে বসে শাহবাজ শরিফকে কিছুতেই ছাড় দেবেন না। সংসদের বাইরেও শাহবাজ শরিফকে শক্ত প্রতিপক্ষ মোকাবিলা করতে হবে। দুর্বল ও ভঙ্গুর সরকার ব্যবস্থা নিয়ে তা সামাল দিতে ব্যর্থ হলে, শাহবাজ শরিফকে সেনাবাহিনী ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়তে হবে। সে ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর সহায়তা ছাড়া তার পক্ষে দেশ চালানো কঠিন হয়ে পড়বে।
Related
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।