বিশেষ প্রতিবেদন: শিক্ষার্থী ভর্তিতে দুর্নীতি, অ্যাডহক কমিটির মাধ্যমে ৬৯ জন শিক্ষক নিয়োগ, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগে অনিয়মসহ নানা কারণে দীর্ঘ দিন থেকে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি চলছে রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে। নতুন করে যুক্ত হয়েছে ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ। আর এই পরিস্থিতির মধ্যেই ১৬৯ জন ছাত্রী ভর্তির দুর্নীতির চিত্র সামনে এসেছে।
এত কিছু ঘটে গেলেও প্রতিষ্ঠানটির শৃঙ্খলা রক্ষায় গভর্নিং বডি কোনও ভূমিকা পালন করছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন,ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটিতে গভর্নিং বডির দুর্নীতি, অযোগ্যতা এবং অধ্যক্ষের গাফিলতির কারণে বিশৃঙ্খলা থামছে না। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের আজিমপুর দিবা শাখায় সিনিয়র শিক্ষক মোহাম্মদ মুরাদ হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও নিপীড়নের লিখিত অভিযোগ করা হয় গত ৭ ফেব্রুয়ারি। পরদিন ৮ ফেব্রুয়ারি তদন্ত কমিটি গঠন করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী জানান, কমিটিকে ৭ কর্ম দিবস সময় দেওয়া হয়েছিল প্রতিবেদন দাখিলের জন্য।
মমতাজ বেগমকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত গঠন করা হয়। কমিটির অন্য দুই সদস্য হচ্ছেন শিক্ষক ড. ফারহানা খানম এবং শামসুন আরা সুলতানা। তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয় গত ২২ ফেব্রুয়ারি। অভিযোগ উঠে যৌন হয়রানির অভিযোগের পর এ বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেন না অধ্যক্ষ বা গভর্নিং বডি। এই পরিস্থিতির মধ্যে গত শুক্রবার যৌন হয়রানির অভিযোগ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হলে তড়িঘড়ি করে অভিযুক্ত শিক্ষক মোহাম্মদ মুরাদ হোসেন সরকারকে অধ্যক্ষের কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই কাজটি দায়সারা গোছের। কারণ তদন্ত কমিটি সময়মতো প্রতিবেদন দাখিল করেনি। আর পরে দাখিল করলেও কোনও ব্যবস্থা না নিয়ে চুপচাপ ছিল গভর্নিং বডি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও ভাইরাল না হলে কিছুই হতো না। তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘মোট ৭৭ জন ছাত্রীর মধ্যে ৬০ জন ছাত্রী শিক্ষক মুরাদের পক্ষে ইতিবাচক মন্তব্য করেন। আর ১৭ জন ছাত্রী নেতিবাচক মন্তব্য করেন।’ ছাত্রীদের কাছে লিখিত প্রশ্ন সরবরাহ করে এসব মন্তব্য নিয়েছে তদন্ত কমিটি। যৌন হয়রানি ও নিপীড়নের কথা উল্লেখ করেছে ১৭ জন ছাত্রী।
অভিযোগ রয়েছে, ভয়ে অনেক ছাত্রী লিখিত প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, তদন্ত কমিটি ১৭ জন ছাত্রীর কাছে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ পাওয়ার পর আরও ৬০ জন ছাত্রীর কাছ থেকে বক্তব্য নিয়েছে যারা ভুক্তভোগী নন। এমনকি তারা জানেই না ওই শিক্ষকের আচরণ সম্পর্কে। অভিযুক্ত শিক্ষককে বাঁচাতে এভাবে তদন্ত করা হয়েছে। তাছাড়া তদন্ত কমিটি সুপারিশ করেছে শিক্ষককে কোনও শাস্তি না দিয়ে অধ্যক্ষর কার্যালয়ে সংযুক্ত করতে।
Related
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।