ঝোঁক বাড়ছে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষায় - BANGLANEWSUS.COM
  • নিউইয়র্ক, রাত ৪:০৩, ৩০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ


 

ঝোঁক বাড়ছে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষায়

newsup
প্রকাশিত এপ্রিল ১৬, ২০২৪
ঝোঁক বাড়ছে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষায়

নিউজ ডেস্ক: ছয় বছরের মুম রহমান। ঢাকার একটি বেসরকারি স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। তার বাবা লুৎফর রহমান ভাবছেন, আগামী জুন/জুলাই মাসে মেয়েকে সাধারণ মাধ্যম থেকে ইংরেজি মাধ্যমে ভর্তি করাবেন। তাঁর মতে, সবার কথা—ইংরেজি মাধ্যমে পড়ালে সন্তানের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল।

একই ভাবনা এখনো স্কুলে পা না রাখা চার বছর বয়সী স্নিগ্ধা ইসলামের মা তাসলিমা ইসলামেরও। লুৎফর রহমান ও তাসলিমা ইসলামের মতো অনেক অভিভাবকই এখন সন্তানের পড়াশোনার জন্য ইংরেজি মাধ্যমে ঝুঁকছেন। ব্যয়বহুল হলেও এই প্রবণতা বাড়ছে। বাংলাদেশ ইংলিশ মিডিয়াম অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় তিন লাখ। অবশ্য বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) খসড়া তথ্য অনুযায়ী, এমন শিক্ষার্থী ২৮ হাজারের বেশি।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার প্রতি অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়ার পেছনে রয়েছে চাকরির নিশ্চয়তা, বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ, বিত্তের আশায় বিদেশ পাড়ি, আন্তর্জাতিক ভাষায় দক্ষতা অর্জন, সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধিসহ নানা কারণ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও ইতিহাসবিদ সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, শুদ্ধ করে ইংরেজি বলতে ও লিখতে পারার পারদর্শিতা সব সময় গুরুত্বপূর্ণ। আবার ইংরেজি মাধ্যমের কারিকুলামের সঙ্গে উন্নত বিশ্বের কারিকুলামের মিল থাকায় এখানকার শিক্ষার্থীদের বিদেশে উচ্চশিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ অনেক বেশি। এ ছাড়া জাতীয় শিক্ষাক্রম নিয়ে বছরের পর বছর নানামুখী পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বিতর্ক ইংরেজি মাধ্যমের প্রতি পরিবারগুলোর আগ্রহী হয়ে ওঠার অন্যতম কারণ।

ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষা দুই ভাগে বিভক্ত। এগুলো হলো ইউনিভার্সিটি অব কেমব্রিজ ও ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন বা এডেক্সেল। এই দুটি বোর্ডের অধীনে ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলগুলো।

এডেক্সেলের শিক্ষাবর্ষ শুরু হয় মে-জুন এবং কেমব্রিজের শিক্ষাবর্ষ শুরু হয় অক্টোবর-নভেম্বর ও মে-জুনে। বাংলাদেশে ইংরেজি মাধ্যমের সব পরীক্ষা নেয় এবং ফলাফল তৈরি করে ব্রিটিশ কাউন্সিল।

ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলগুলোতে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ‘অর্ডিনারি লেভেল’, সংক্ষেপে ‘ও’ লেভেল এবং নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি ‘অ্যাডভান্স’ লেভেল, সংক্ষেপে ‘এ’ লেভেল। পড়াশোনার পুরোটাই হয় ইংরেজি ভাষায়। কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট শ্রেণির জাতীয় শিক্ষাক্রমের বাংলা ও ধর্ম বইও পড়ানো হয়।

ব্যানবেইসের ‘বাংলাদেশ শিক্ষা পরিসংখ্যান-২০২৩ ’-এর খসড়া প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ১২৩টি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়াশোনা করছে ২৮ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী, যা চার বছর আগে ছিল ২৬ হাজারের বেশি।

অবশ্য সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাস্তবের সঙ্গে এ পরিসংখ্যানের কোনো মিল নেই। করোনা মহামারির সময়ে শিক্ষার্থী কিছু কমলেও এখন আবার বাড়ছে।

বাংলাদেশ ইংলিশ মিডিয়াম অ্যাসোসিয়েশনের সমন্বয়ক কাজী তায়েফ সাহাদাত বলেন, ব্যানবেইসের হিসাবে সারা দেশের প্রকৃত চিত্র উঠে আসেনি। কারণ, তাদের জরিপে শুধু নিবন্ধিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো তথ্য দেয়। তাঁদের হিসাবে দেশে ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা তিন শর বেশি (কিন্ডারগার্টেন স্কুল এই হিসাবের বাইরে)। এগুলোতে শিক্ষার্থী প্রায় তিন লাখ।

বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন বলছে, দেশে প্রায় সাড়ে চার হাজার ইংরেজি মাধ্যমের কিন্ডারগার্টেন স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় দুই লাখ।

অভিযোগ রয়েছে, নজরদারির অভাবে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলোতে ভর্তি ও টিউশন ফি হিসেবে মাত্রাতিরিক্ত টাকা নেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল প্যারেন্টস ফোরামের সভাপতি এ কে এম আশরাফুল হক বলেন, বেশির ভাগ ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের টিউশন ফি লাগামছাড়া। এ বিষয়ে সরকারের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া।

বাংলাদেশ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল প্যারেন্টস ফোরামের তথ্য বলছে, ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলোতে মাসিক টিউশন ফি ৮ হাজার থেকে শুরু করে ৫০ হাজার টাকা, ভর্তি ফি ১০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত। তবে কিছু স্কুলে মাসিক টিউশন ফি ৮০ হাজার থেকে শুরু করে আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত। ভর্তি ফি ৫০ হাজার থেকে শুরু করে আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত। আবার কোনো স্কুলে ভর্তি ফি ২ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। এ ছাড়া অনেক স্কুল ডেভেলপমেন্ট ফি, ইউটিলিটি ফি, বিবিধ ফিসহ বিভিন্ন নামে ফি আদায় করছে।

সার্বিক বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনায় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিবন্ধন নীতিমালা-২০১৭ রয়েছে। বিধিমালায় টিউশন ফি নির্ধারণে একটি কমিটি গঠনের বিধান রয়েছে। এ বিধান যেন সঠিকভাবে কার্যকর করা যায়, এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।