নিউজ ডেস্ক: মালদ্বীপে দীর্ঘদিন ধরে থাকা ভারতের প্রভাব কমাতে ‘ইন্ডিয়া আউট’ স্লোগান দিয়ে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হন চীনপন্থি মোহামেদ মুইজ্জু। নির্বাচনে তার প্রধান প্রচারণা ছিল পূর্ববর্তী সরকারের নেওয়া ‘ভারত প্রথম’নীতির অবসান ঘটানো। সেই মুইজ্জুর দল পিপলস ন্যাশনাল কংগ্রেস (পিএনসি) দেশটির সংসদ নির্বাচনে বড় জয় পেয়েছে। ফলে মালদ্বীপের রাজনৈতিক পরিসরে মুইজ্জুর হাত আরও শক্ত হলো।
মালদ্বীপের পার্লামেন্ট নির্বাচনে বিপুল ভোটে জিতেছে প্রেসিডেন্ট মোহামেদ মুইজ্জুর দল পিপলস ন্যাশনাল কংগ্রেস (পিএনসি)। সাময়িক ফল অনুযায়ী, ৯৩ সদস্যের প্রতিনিধি পরিষদে মুইজ্জুর দল পিপলস ন্যাশনাল কংগ্রেস (পিএনসি) পেয়েছে ৬৬টা আসন। এ নির্বাচনের ফলাফলে মালদ্বীপ সরকার ভারত থেকে আরও দূরে সরে বেইজিং ঘনিষ্ঠ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এমনিতেই সেই দেশে পরিকাঠামোগত উন্নয়নে হাত লাগিয়েছে চীনা সংস্থা। ভারতের সেনাকর্মীদের সরানো হয়েছে সেখান থেকে। এই আবহে দিল্লি এবং মালের মধ্যে দূরত্ব আরও বাড়তে পারে ভবিষ্যতে।
মালদ্বীপের বিশ্লেষক ও ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার লেকচারার আজিম জহির বলেছেন, মুইজ্জুর জন্য এটা একটা উল্লেখযোগ্য প্রাপ্তি। এ জয়ের ফলে রাজনৈতিক প্রাতিষ্ঠানিক দৃষ্টিকোণ থেকে এবার মুইজ্জু সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করবেন। তাত্ত্বিক দিক থেকে বিচার বিভাগকেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন তিনি। কারণ সংসদে পর্যাপ্ত আসন তাদের।
এর আগের সংসদীয় নির্বাচনে মুইজ্জুর দলের ঝুলিতে গিয়েছিল মাত্র ৮টি আসন। ফলে বিগত কয়েক মাস ধরে সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল ভারতপন্থি এমডিপি। তাই মুইজ্জুর বিভিন্ন সিদ্ধান্ত প্রণয়নে বাধা দিচ্ছিল তারা। তবে এবার সংসদেও মুইজ্জুর দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করায় তার নীতি কার্যকর করার ক্ষেত্রে কোনো বাধা থাকবে না।
আগে স্বাস্থ্য, খাদ্যের মতো অত্যাবশ্যক ইস্যুতে ভারতের ওপর নির্ভরশীল ছিল মালদ্বীপ। তবে সেই নির্ভরশীলতা কমাতে বিগত দিনে তুরস্কের সঙ্গে চুক্তি করেছে দেশটি। তুরস্ক থেকে ড্রোনও কিনেছে মালদ্বীপ। সমুদ্রে নজরদারি চালানোর জন্য সেই চুক্তি করা হয়েছে। চিকিৎসার জন্য জরুরি উদ্ধার কাজে শ্রীলঙ্কার সঙ্গেও সম্প্রতি চুক্তিবদ্ধ হয়েছে মালদ্বীপ। এই আবহে সংসদীয় নির্বাচনে মুইজ্জুর দলের বড় জয়ের ফলে ভারত থেকে আরও দূরে সরতে পারে ভারত মহাসাগরের এই দ্বীপরাষ্ট্র।
পিএনসির বড় জয়ে শোচনীয় অবস্থা হয়েছে ভারতপন্থী মালদ্বীপ ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এমডিপি)। গত নির্বাচনে যেখানে তারা ৬৫টি আসনে জিতেছিল, এবার তারা সেখানে ১০টির মতো আসনে জয়লাভ করে।
মোহামেদ মুইজ্জু ক্ষমতায় এসেছিলেন গত বছর শেষের দিকে। প্রেসিডেন্ট পদে আসীন হওয়ার পর এখনো তিনি দিল্লি সফরে যাননি।
মালদ্বীপে থাকা ভারতীয় সেনাদের দেশে ফেরত পাঠানোর প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন তিনি। সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ভারতীয় সেনাদের মালদ্বীপ থেকে চলে যাওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। ওই দেশে দিল্লির প্রভাব কমানোই এর কারণ হিসেবে মনে করা হয়।
ইতোমধ্যে ভারতীয় সামরিক কর্মীদের দুটি ব্যাচ মালদ্বীপ ছেড়ে গিয়েছে এবং তাদের পরিবর্তে নিয়োগ করা হয়েছে ভারতের বেসামরিক প্রযুক্তিগত কর্মীদের। বাকি সেনারা ১০ মে’র মধ্যে মালদ্বীপ থেকে চলে যাবেন বলে জানা গিয়েছে।
মালদ্বীপে উদ্ধার ও পুনরুদ্ধার কাজের জন্য দুটি হেলিকপ্টার এবং একটি বিমান রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার জন্য মালদ্বীপে প্রায় ৮৫ জন ভারতীয় সামরিক কর্মী ছিলেন। বছর কয়েক আগে দিল্লির তরফে এ বিমান অনুদান হিসাবে দেওয়া হয়েছিল।
ভারতীয় সেনা ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্তের কারণে দিল্লির সঙ্গে মালের সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে। দুই দেশের সম্পর্কে এই টালমাটাল পরিস্থিতিকে বেইজিং কাজে লাগাতে আগ্রহী বলেই মনে করা হয়।
প্রসঙ্গত, মোহামেদ মুইজ্জু জানুয়ারি মাসে রাষ্ট্রীয় সফরে বেইজিংয়ে গিয়েছিলেন। সে সময় বিনিয়োগের জন্য চীনের সঙ্গে বেশ কয়েকটি চুক্তিও স্বাক্ষর করেছেন। মার্চ মাসে বিনামূল্যে অস্ত্রের (প্রাণঘাতী নয় এমন) জন্য চীনের সঙ্গে একটি ‘সামরিক সহায়তা’চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল মালে। সেই চুক্তি অনুযায়ী মালদ্বীপের সুরক্ষা বাহিনীকে চীনের প্রশিক্ষণ দেওয়ারও কথা। এর আগে ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মালদ্বীপের সামরিক বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিত।
বিশ্লেষক জহির বলেন, এখন একটি ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি তৈরি করার আরও অবকাশ রয়েছে। কিন্তু দিল্লি যদি সম্পর্ককে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে না পারে এবং তাকে (প্রেসিডেন্ট মুইজ্জুকে) সাহায্য করতে অসম্মতি জানায়, তাহলে অবশ্যই মালে বেইজিংয়ের ওপর আরও বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়বে।
রোববারের পার্লামেন্ট নির্বাচনের ফলাফলের আনুষ্ঠানিক অনুমোদন পেতে এক সপ্তাহ সময় লাগবে বলে মনে করা হচ্ছে।
মালদ্বীপের নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, রোববার ভোট পড়েছে প্রায় ৭৩ শতাংশ, তবে এ সংখ্যা ২০১৯ সালের পড়া ভোটের (৮২ শতাংশের) চেয়ে কম।
ভোটের ফলাফলের পর এমডিপির একজন জ্যেষ্ঠ নেতা মুইজ্জুকে অভিনন্দন জানান।
দলটির চেয়ারপারসন ফাইয়াজ ইসমাইল সামাজিক মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন- ‘এমডিপির সংসদ সদস্যরা আমাদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের উন্নতির জন্য দায়িত্বশীল বিরোধী দল হিসেবে সরকারের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত।’
Related
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।