যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টনে প্রবল ঝড়ের আঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
১৭ মে ২০২৪, ০২:৫০ অপরাহ্ণ

ডেস্ক রিপোর্ট: যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের বৃহত্তম শহর হিউস্টন এলাকায় শক্তিশালী ঝড়ের আঘাতে অন্তত ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে গোটা শহরে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়াসহ সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাতে ঝড়টির আঘাতে এসব ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন হিউস্টনের মেয়র জন হুইটমায়ার। ২০০৮ সালে হিউস্টনের কাছে আঘাত হানা ক্যাটাগরি-২ মাত্রার হারিকেনের কথা উল্লেখ করে বৃহস্পতিবার রাতে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে মেয়র বলেন, ‘ঝড়টি ঘণ্টায় ১০০ মাইল বেগে বয়ে গেছে। এটি শহরের কেন্দে যথেষ্ট ক্ষতি করেছে।’ হারিকেন আইকের যেভাবে কৃষি ও অবকাঠামো ধ্বংস করেছিল তার সঙ্গে এই ঝড়টির ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণের তুলনা করেন মেয়র। হিউস্টনের দমকল বাহিনীর প্রধান স্যামুয়েল পেনা সাংবাদিকদের বলেন, ‘নিহত চারজনের মধ্যে অন্তত দু’জন উপড়ে পড়া গাছের আঘাতে মারা যান। বাতাসে উল্টে যাওয়া ক্রেনের আঘাতে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।’ঝড়ে গোটা এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গাছপালা ও বিদ্যুতের লাইন উপড়ে পড়েছে এবং হিউস্টন ও এর শহরের কেন্দ্রের অনেক এলাকায় রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়েছে। হিউস্টন শহরের কেন্দ্রস্থলে বেশ কয়েকটি অফিস ভবনের জানালা ভেঙ্গে গেছে। হিউস্টন এলাকার কয়েকশ স্কুল শুক্রবারের সব ক্লাস বাতিল করেছে। টেক্সাসের বৃহত্তম হিউস্টন ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্কুল ডিস্ট্রিক্ট (এইচআইএসডি) শুক্রবার তাদের সব স্কুল বন্ধ ঘোষণা করেছে। ডিস্ট্রিক্ট এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘হিউস্টন জুড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কারণে, এইচআইএসডি হিউস্টন শহরের সঙ্গে সমন্বয় করেছে এবং শুক্রবার (১৭ মে) সমস্ত ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করছে। আগামী সোমবার (২০ মে) থেকে স্কুল যথারীতি চলবে।’মেয়র হুইটমায়ার বলেছেন, ‘হিউস্টনের রাস্তায় গাছ পড়ে রয়েছে। শহররের সমস্ত রাস্তায় কাচ রয়েছে, সড়কের বাতি জ্বলছে না।’ মেয়র বাসিন্দাদের ‘বাড়িতে থাকার’ আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেছেন, শহরে নিয়োজিত কর্মীরা জরুরি সেবার জন্য ‘ব্যাকলগ’৯১১ এর মাধ্যমে কাজ করছে। তাদের মধ্যে অনেকগুলো গ্যাস লিক বা তার ছিড়ে পড়ে রয়েছে বলে জানতে পেরেছে। স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, হিউস্টনে বৈরী আবহাওয়ার কারণে একটি ভবনের একাংশ ধসে পড়েছে। এর আগে হিউস্টনের ন্যাশনাল আবহাওয়া সেবা বিভাগ বৃহস্পতিবার সকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সতর্ক করে বলেছে ‘এই ঝড়ের কবলে কেউ থাকলে এখনই আশ্রয় নিন। নিচ তলায় অবস্থান নিন।’ সন্ধ্যায় হিউস্টন অঞ্চলের বিভিন্ন অংশে আকস্মিক বন্যা এবং তীব্র বজ্রপাতের বিষয়ে সতর্কতা জারি করা হয়েছিল। ইউটিলিটি ট্র্যাকার পাওয়ারআউটেজ.ইউএস জানিয়েছে, স্থানীয় সময় রাত ১১টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত টেক্সাসের প্রায় ৯ লাখ ২৪ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় ছিলেন। এর মধ্যে হিউস্টনের বেশিরভাগ অংশ নিয়ে গঠিত হ্যারিস কাউন্টি ও এর আশেপাশে আট লাখেরও বেশি গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। বিদ্যুৎ কোম্পানি সেন্টারপয়েন্ট এনার্জির মুখপাত্র লোগান অ্যান্ডারসন বলেন, ‘হিউস্টন এলাকায় বর্তমানে ব্যাপক লোডশেডিং চলছে, ঝড় শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা আমাদের সিস্টেমের ক্ষতির পরিমাণ জানতে পারব না।’হিউস্টনের মেয়র বলেন, ‘আমি সবাইকে ধৈর্য ধরতে বলছি, প্রতিবেশীদের দিকে নজর রাখতে বলছি। ‘এই বিদ্যুৎ পুনরুদ্ধার করতে ২৪ ঘণ্টা সময় লাগবে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৪৮ ঘণ্টা সময়ের প্রয়োজন হবে।’চলতি মাসের শুরুর দিকে কয়েক দফা বজ্রপাতের কারণে হিউস্টন এলাকাসহ টেক্সাসের পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। এর ফলে বাধ্যতামূলকভাবে স্কুল বন্ধ করে দেওয়াসহ বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।