ডেস্ক রিপোর্ট: জিলকদ মাসকে আরবিতে আসলে ‘জুলকাআদাহ’ বলা হয়। এর অর্থ হলো-বসা, স্থিত হওয়া কিংবা বিশ্রাম গ্রহণ করা। কারণ এ মাসের আগের চার মাস যেমন ইবাদত-বন্দেগির মাস, তেমনি এর পরের মাসে মুসলিম উম্মাহর বিশেষ ইবাদত হজের মাস। জিলকদ মাস আসার আগে মুমিন মুসলমান রজব মাস থেকে শুরু করে শাওয়াল মাস পর্যন্ত ইবাদত-বন্দেগিতে ব্যস্ত থাকেন। আবার তার পরের মাসেই হজ পালনকারীরা যেমন হজ ও ওমরাহ করবেন, তেমনি যারা রোজা পালন করবেন, তারা জিলহজ মাসের প্রথম ৯ দিন রোজা পালন করবেন। তাই মাসটি মুমিন মুসলমানের জন্য একটু বিশ্রাম নেওয়ার মাস। রজবকে বলা হয় আল্লাহর মাস। এ মাসে ইবাদতের ভূমি কর্ষণের মাস, বেশি বেশি নফল ইবাদতের মাস। শাবান হলো রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাস। এ মাসে ইবাদতের বীজ বপন করা হয়। এ মাসেই রয়েছে মর্যাদার রাত নিসফ শাবান বা শবে বরাত। আর রমজান হলো উম্মতের মাস, ফসল তোলার মাস, ফরজ রোজা, তারাবির নামাজ, কিয়ামুল্লাইলের মাস। এটি কুরআন নাজিলের মাস এবং ইবাদতুতিলাওয়াতের মাস হিসেবে প্রসিদ্ধ। রমজান-পরবর্তী শাওয়াল মাস হলো ঈদুল ফিতর, সদাকাতুল ফিতর ও নির্ধারিত সুন্নাতি আমল ছয় রোজার মাস। ঠিক এভাবেই আগের চার মাসের মতো জিলকদ মাসের পরের দুই মাসও (জিলহজ মাস ও মহররম মাস) ইবাদতে ব্যস্ততার মাস। সুতরাং এই জিলকদ মাসে মুমিন মুসলমান একটু বিশ্রাম গ্রহণ করেন। যে কারণে এ মাসের নাম জুলকাআদাহ বা জিলকদ তথা বিশ্রামের মাস রাখা হয়েছে। ইসলামের ইতিহাসে বিভিন্ন কারণে এ মাস অনেক গুরুত্বপূর্ণ। প্রিয়নবি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবনে যে কয়টি ওমরাহ করেছেন, তার সব কটি করেছেন এই জিলকদ মাসে। এ মাসেই সংগঠিত হয়েছিল হুদায়বিয়ার সন্ধি ও বাইয়াতে রিদওয়ান। তবে এ মাসে নির্দিষ্ট কোনো ফরজ ওয়াজিব ও সুন্নাত ইবাদত ও আমল নেই। মুসলিম উম্মাহ যেন ইবাদতের মাসগুলো অতিবাহিত করে সামনে হজ ও রোজার প্রস্তুতি নেওয়ার পথে কোনো যুদ্ধবিগ্রহ তথা বাদানুবাদ যেন বিশ্রামের ঘাটতি না হয়; সে কারণেই এই মাসে সব ধরনের আক্রমণ ও পালটা আক্রমণ নিষিদ্ধ করে হারাম মাস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। উল্লেখ্য, আরবের লোকেরা তৎকালীন জিলকদ মাসে বাণিজ্য থেকে ফিরে আসত, যুদ্ধ থেকে ফিরে আসত এবং বিশ্রাম গ্রহণ করত। তাছাড়া ঋতুর পরিবর্তনে এই সময়টায় স্থানীয় আরবের লোকজনের হাতে তেমন কোনো কাজও থাকত না। আরব সংস্কৃতি অনুযায়ী তারা এই মাসে যুদ্ধবিগ্রহ থেকে বিরত থাকত এবং অন্য অপরাধ (মদপান) থেকেও বিরত থাকত। এসব কারণেও এই মাসকে জিলকদ বলা হয়। (লিসানুল আরব, ইবনে মানজুর)। রজব-শাবান মাসে নফল রোজা, রমজান জুড়ে ফরজ রোজা, সন্ধ্যা ও ভোররাতে তারাবিহ-তাহাজ্জুদ ও সাহরি গ্রহণ এবং শাওয়ালে ছয় রোজা রাখার পর জিলকদ মাসে বিশ্রাম নিয়ে পরবর্তী মাসের রোজা ও হজ-কুরবানির প্রস্তুতি গ্রহণের মাস এটি। এই মাস জুড়ে বিশ্রামের পাশাপাশি এই মাসেও অন্যান্য আরবি মাসের মতো নিয়মিত আমলগুলো করা যেতে পারে। তাহলো- ১. এ মাসের ১, ১০, ২০, ২৯ ও ৩০ তারিখ রোজা পালন করা। ২. জিলকদ মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ (২৫-২৭ জুন) আইয়ামে বিজের রোজা পালন করা। ৩. সোম ও বৃহস্পতিবারের সাপ্তাহিক সুন্নাত রোজা পালন করা। (তা হলো ১৭, ২১, ২৪ ও ২৮ জুন এবং ০১, ০৫, ০৮, ১২, ১৫ ও ১৯ জুলাই)। ৪. কুরআন তেলাওয়াত করা এবং সালাতুত তাসবিহর আদায় করা। ৫. সম্ভব হলে ওমরাহ পালন করা। ৬. হজের পরিপূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করা। ৭. কুরবানির প্রস্তুতি গ্রহণ করা। জিলকদ মাসের স্মরণীয় যত ঘটনা: ১. জিলকদ মাসে যে কোনো যুদ্ধবিগ্রহকেই নিষিদ্ধ করেছে ইসলাম। ২. এ মাসেই বাইয়াতে রেদওয়ান অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ৩. জিলকদ :হুদায়বিয়ার সন্ধি, হজরত আলি ও ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহুমার বিবাহ সংঘটিত হয়। ৪. ৮ জিলকদ :মুসলমানদের জন্য জীবনে একবার হজ পালন ফরজ, ইমাম দারাকিতুনি রাহমাতুল্লাহি আলাইহির ইন্তেকাল। ৫. ১৭ জিলকদ :খন্দকের যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়। ৬. ২৫ জিলকদ :হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম ও হজরত ঈসা আলাইহিস সালামের জন্ম। পবিত্র কাবা শরিফ পৃথিবীতে প্রথম ভিত্তি স্থাপিত হয় বলে জানা যায়। এ ছাড়া রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ২৫ জিলকদ বিদায় হজের জন্য মদিনা থেকে মক্কা অভিমুখে রওনা করেন। ৭. সপ্তম হিজরির জিলকদ মাসে প্রিয়নবি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রথম ওমরাহ পালন করেছিলেন।
Related
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।