ডেস্ক রিপোর্ট: বিদ্যমান গ্যাস সঙ্কটে দেশের শিল্পোদ্যোক্তারা বিকল্প জ্বালানি হিসাবে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ব্যবহার বাড়াচ্ছে। তবে ডলার সংকটে এলপিজির কাঁচামাল ও মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। কারণ এলপিজি খাতের কাঁচামাল থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় মূলধনি যন্ত্রপাতির (ক্যাপিটাল মেশিনারিজ) পুরোটাই আমদানিনির্ভর। কিন্তু ডলার সংকটের কারণে এসব পণ্য আমদানিতে যথাসময়ে ঋণপত্র (এলসি) খুলতে জটিলতা তৈরি হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, পণ্য দেশে আসার পরও এলসির দায় নিষ্পত্তি করতে সময়ক্ষেপণ হচ্ছে। ফলে পণ্য খালাসে গুনতে হচ্ছে জরিমানা। মূলত প্রোপেন ও বিউটেনের সংমিশ্রণে তৈরি হয় এলপিজি। আর এসব পণ্য আমদানি করতে হয়। এলপিজি বাজারজাতে ট্যাংক, ভ্যাপোরাইজার, ভালভ, রেগুলেটর ও প্রেসার মিটারসহ নানা যন্ত্রাংশও বিদেশ থেকে আনতে হয়। আর এসব পণ্য আমদানি করতে চাহিদা অনুযায়ী ডলার মিলছে না। তাছাড়া ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হওয়ায় আমদানিকারকরা ‘ডেফার্ট পেমেন্ট সিস্টেমেও’ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, ফলে এলপিজির বাজারে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। শিল্পখাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের বাজারে এলপিজি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মতে, দেশে এলপিজির বার্ষিক চাহিদা প্রায় ১৪ লাখ টন। আবাসিক খাতে এর সিংহভাগ ব্যবহার হয়। তবে শিল্প খাতেও ব্যবহার বাড়ছে। বর্তমানে শিল্পে বার্ষিক এলপিজির চাহিদা ১ লাখ ৮০ হাজার টনের মতো। যেসব খাতে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার হচ্ছে, তার মধ্যে অন্তত ১০টি খাতে এলপিজির ব্যবহার বাড়ছে। এ তালিকায় রয়েছে নিট কম্পোজিট ফ্যাক্টরি, ডায়িং, স্পিনিং, প্যাকেজিং, সিরামিক, এগ্রো, বেভারেজ, ফিড, ফার্মাসিউটিক্যালস ও এসফল্ট প্লান্ট। এগুলোর মধ্যে অনেক কোম্পানি এলপিজির কারিগরি ব্যবস্থা প্রতিস্থাপনেও কাজ করছে। সূত্র জানায়, বসুন্ধরা গ্রুপ আবাসিক খাতে সবচেয়ে বেশি এলপিজি সরবরাহ করে। তবে শিল্প খাতে সবচেয়ে বেশি সরবরাহ করে ওমেরা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড। তারা মাসে চার-পাঁচ হাজার টন সরবরাহ করে। বসুন্ধরা ও ব্রাদার্স এলপিজি সরবরাহ করে তিন-চার হাজার টন করে। এর বাইরে বিএম এনার্জি এক থেকে দেড় হাজার টন, জেএমআই এক থেকে দেড় হাজার টন, যমুনা এক হাজার টন এবং ফ্রেশ এলপিজি ও ওরিয়ন ৩০০-৪০০ টন এলপিজি সরবরাহ করে। তবে বসুন্ধরা এলপি গ্যাস লিমিটেড দাবি করেছে, শিল্প খাতে তাদের গ্যাসের চাহিদা ১৮-২০ হাজার টন। বর্তমানে শিল্পে এলপি গ্যাসের চাহিদা বাড়ছে। কিন্তু শিল্প খাতে যারা এলপি গ্যাস সরবরাহ করে, তারা কাঁচামাল আমদানিতে এলসি খুলতে পারছে না। মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতেও জটিলতা রয়েছে। এসব সংকট দ্রুত কাটিয়ে উঠতে পারলে শিল্প খাতে বড় ধরনের চাহিদা তৈরি করা যাবে। সূত্র আরো জানায়, গত পাঁচ বছরে শিল্প খাতে এলপিজির ব্যবহার ৩ থেকে বেড়ে ১৫ শতাংশ হয়েছে। গত দুই বছরের তথ্য বলছে, এ খাতে প্রবৃদ্ধি ২০০ শতাংশের বেশি। এখন শিল্প খাতে বছরে প্রায় তিন লাখ টন এলপিজি সরবরাহ হচ্ছে। আগামী পাঁচ বছরে এটি দ্বিগুণ হতে পারে। কারণ অনেকে কারখানার নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ বাড়াতে এলপিজি সিস্টেম গড়ে তুলছেন। তবে প্রাকৃতিক গ্যাসের কাছাকাছি দাম আনা গেলে শিল্প খাতে এলপিজির চাহিদা ব্যাপক হারে বাড়াবে। আর আমদানি শুল্ক ও মূসক কমানো গেলে এ খাতে সাশ্রয়ী মূল্যে এলপিজি সরবরাহ সম্ভব। এদিকে এলপিজির কারিগরি সিস্টেম প্রতিস্থাপন ও সরবরাহকারী ব্রাদার্স এলপিজি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. সাদ্দাম হোসেন জানান, আবাসিক খাতের মতো শিল্প খাতে এলপি গ্যাস ব্যবহারে বড় সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তবে এ বাজার প্রসারিত হওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হলো প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ আমদানিতে চাহিদা অনুযায়ী ডলার না পাওয়া। এলপি গ্যাসের ক্যাপিটাল মেশিনারিজ পুরোটাই আমদানিনির্ভর। ডলার সংকটের কারণে ঠিকমতো ঋণপত্র (এলসি) খোলা যায় না। আবার ঠিক সময়ে এলসি সেটলমেন্ট না হওয়ায় পণ্য বন্দরে আটকে থাকলে জরিমানা গুনতে হচ্ছে। এসব প্রতিবন্ধকতা কাটানো গেলে এ খাতেও বড় বাজার তৈরি করা যাবে। অন্যদিকে এলপিজির চাহিদা বিষয়ে বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমইএ) জেনারেল সেক্রেটারি ইরফান উদ্দিন জানান, সিরামিক ইন্ডাস্ট্রি বেশি মূল্য দিয়েও নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ পাঁচ্ছে না। কারখানা চালাতে অনেকেই এখন এলপিজি সংযোগ নিচ্ছেন। প্রাকৃতিক গ্যাসের তুলনায় এতে খরচ বেশি। কিন্তু নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি পাওয়ার ক্ষেত্রে এলপিজি নির্ভরযোগ্য। তবে এখানে কারিগরি সক্ষমতা বাড়াতে বড় বিনিয়োগ করতে হচ্ছে। প্রাকৃতিক গ্যাসের সঙ্গে মূল্যের ব্যবধান কমে এলে এলপিজির বাজার আরো বড় হতে পারে।
সুত্র:এফএনএস ডটকম
Related
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।