ডেস্ক রিপোর্ট: জরুরি অবস্থার রোগী ব্যবস্থাপনায় দেশের শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের জ্ঞান ও দক্ষতা পর্যাপ্ত নয়। অথচ দেশের টারশিয়ারি পর্যায় বা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোর জরুরি বিভাগ প্রায় ক্ষেত্রেই শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের ওপর নির্ভরশীল। শিক্ষানবিশ চিকিৎসকরা হাসপাতালের অন্তর্বিভাগ, বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগে কাজ করেন। কিন্তু জরুরি চিকিৎসায় তাদের প্রশিক্ষণ অপর্যাপ্ত। বড় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোয় শিখন সুযোগ কিছুটা ভালো হলেও বেশির ভাগ হাসপাতালে তা নেই। পাঠ্যক্রম ও প্রশিক্ষণের দুর্বলতার কারণেই মূলত শিক্ষানবিশ চিকিৎসকরা জরুরি চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় দক্ষ হচ্ছেন না। বিষয়গুলো শেখানো হয় অনেকটা বিক্ষিপ্তভাবে। যারা কিছুটা দক্ষতা অর্জন করছেন তা সম্পূর্ণ নিজ তাগিদে করেছেন। সম্প্রতি এক গবেষণায় বিষয়টি উঠে এসেছে। বিগত ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়। এতে দেশের চারটি করে আটটি সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক, শিক্ষক, শিক্ষানবিশ চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীদের তথ্য নেয়া হয়েছে। আর তাতে দক্ষতা ও জ্ঞানের মূল্যায়ন করা হয়েছে চিকিৎসকদের নিজেদের মতামতের ভিত্তিতেই। স্বাস্থ্য বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, প্রকাশিত গবেষণায় পাঁচটি নির্দেশকের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে জরুরি অবস্থায় লাইফ সাপোর্ট, শ্বাসনালি ব্যবস্থাপনা ও জরুরি ফার্মাকোলজি, কার্ডিওপালমোনারি ব্যবস্থাপনা, সাধারণ জরুরি পরিস্থিতিতে ওষুধ ও ব্যবস্থাপত্র লেখার পদ্ধতিগত দক্ষতা। পাঁচটি নির্দেশকের প্রায় সবক’টিতে শিক্ষানবিশ চিকিৎসকের দক্ষতা ও জ্ঞান গড় বা মধ্যম পর্যায়েরও কম। গবেষণায় দক্ষতা মান নির্ধারণ করা হয়েছে ছয়টি পয়েন্টে- শূন্য (০), খুবই কম (১), কম (২), গড় বা মধ্যম (৩), ভালো (৪) ও খুবই ভালো (৫)। গবেষণায় বলা হয়েছে, হঠাৎ হৃদরোগের জটিলতা দেখা দিলে অ্যাডভান্স কার্ডিয়াক লাইফ সাপোর্ট (এসিএলএস), বেসিক লাইফ সাপোর্ট, কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন (সিপিআর) ও কার্ডিয়াক মনিটরের ব্যবস্থাপনায় শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের দক্ষতা গড় বা মধ্যম পর্যায়েরও নিচে। শ্বাসকষ্ট, দুর্ঘটনা, আগুনে পোড়া রোগীদের জরুরি চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে অ্যাডভান্স ট্রমা লাইফ সাপোর্ট (এটিএলএস), এয়ারওয়ে ব্যবস্থাপনা বা শ্বাসনালিতে বাধা প্রতিরোধ ও উপশম করার কৌশল, লোকাল অ্যানেস্থেসিয়া (শরীরের নির্ধারিত কোনো অংশকে অচেতন করা) প্রয়োগ, মুখ বা নাক দিয়ে শ্বাসনালিতে নল দেয়া বা এন্ডোট্র্যাকিয়াল ইনটিউবেশন, শ্বাসনালির অস্ত্রোপচার বা ট্র্যাকিওস্টমি ও ইন্টারকোস্টালের দক্ষতা কোনোটি মধ্যম পর্যায়ের নিচে; আবার কোনোটির গড় সীমারেখায়। জরুরি চিকিৎসা ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রয়োগ ব্যবস্থাপনা, ওষুধের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া, ব্যবস্থাপত্র লেখা- এসব ক্ষেত্রে শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের দক্ষতাও অন্য ব্যবস্থাপনাগুলোর দক্ষতার মধ্যে পার্থক্য দেখা যায়নি। একইভাবে অক্সিজেন ব্যবস্থাপনা, নেবুলাইজেশন ও প্রাথমিক স্পিøন্ট, ব্যান্ডেজের ক্ষেত্রেও তাদের দক্ষতা গড়পরতা। যদিও বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, তীব্রভাবে অসুস্থ ও আহতরাই মূলত জরুরি চিকিৎসার প্রত্যাশায় স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যায়। সারা বিশ্বে এমন জরুরি চিকিৎসা বিষয়টি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত। কেননা এ সময়ের চিকিৎসা রোগীর পুনরুদ্ধারের পথকে সুগম করে তোলে। সূত্র জানায়, ব্যাচেলর অব মেডিসিন, ব্যাচেলর অব সার্জারির (এমবিবিএস) পাঁচ বছরের পাঠ্যক্রম শেষে একজন শিক্ষার্থীকে এক বছরের জন্য সাময়িক নিবন্ধন দেয় বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি)। ওই সময় সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থী সুনির্দিষ্ট কলেজ হাসপাতালের রোগীকে চিকিৎসা দিতে পারেন। শিক্ষক ও জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকদের সঙ্গে থেকে প্রশিক্ষিত হন। এরপর এক বছরের ইন্টার্নশিপসহ পাঁচ বছরের এমবিবিএস ডিগ্রিকে আমলে নিয়ে সুনির্দিষ্ট নিয়মে চূড়ান্তভাবে চিকিৎসক নিবন্ধন দেয় বিএমডিসি। সূত্র আরো জানায়, সব দেশের জরুরি চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা এক নয়। ভৌগোলিক অবস্থাসহ বিভিন্ন কারণে জরুরি ব্যবস্থাপনায় ভিন্নতা রয়েছে। জরুরি বিভাগের অর্থোপেডিক, চক্ষু, নিউরো, সার্জারি, হৃদরোগ, গাইনি থেকে শুরু করে সব চিকিৎসককে প্রশিক্ষিত হওয়া জরুরি। কেননা সবকিছুরই জরুরি অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে। দুর্ঘটনা, অগ্নিকাণ্ড, ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প, বন্যা বা সুনামির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে চরমভাবে আহত রোগীদের হাসপাতালে জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন। সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাবের কারণেও জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। জরুরি চিকিৎসার সন্ধান করে শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগ, স্ট্রোকের রোগীরা। সবাইকে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার আওতায় আনতে পারলে জীবনের ঝুঁকি কমে যায়। এদিকে এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসাশিক্ষা) অধ্যাপক ডা. মো. কামরুল হাসান জানান, হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের প্রাধান্য রয়েছে। তবে তা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। যদিও জরুরি বিভাগ পুরোপুরি তাদের ওপর নির্ভর করে না। ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসারই রোগীর প্রথম ব্যবস্থাপনা করেন। উপজেলা পর্যায়ে জুনিয়র কনসালট্যান্ট কাজ করেন। জেলা ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও আরো দক্ষ চিকিৎসক রয়েছেন। এমবিবিএসের পাঠ্যক্রমে জরুরি চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার বিষয়টি ক্রিটিক্যাল কেয়ারে পড়ানো হয়। ক্রিটিক্যাল কেয়ারে কীভাবে রোগীর ব্যবস্থাপনা হবে, সেবা দেয়া হবে এসব সেখানে রয়েছে। তবে পাঠ্যক্রমকে আরো যুগোপযোগী করতে উদ্যোগ নিতে হবে। পরিবর্তনশীল অবস্থার কারণে চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আসে। স্বতন্ত্রভাবে জরুরি চিকিৎসাসেবাকে গুরুত্ব দেয়ার প্রয়োজন রয়েছে। তবে দেশে জনসংখ্যা অনুপাতে চিকিৎসকদের সংকট রয়েছে।
সুত্র:এফএনএস ডটকম
Related
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।