সম্পাদকীয়: সোমবার ছাত্র-জনতার বিজয়ের পর সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনুপস্থিতি লক্ষ করা যাচ্ছে। এতে বিভিন্ন স্থানে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। বস্তুত শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের খবর পাওয়ার পরপরই সোমবার
দুপুর থেকে পথে পথে শুরু হয় শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের বিজয়োল্লাস। এ সময় বিপুলসংখ্যক মানুষ গণভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও জাতীয় সংসদ ভবনে ঢুকে পড়েন। অনেকে সেখানে ভাঙচুর ও লুটপাটে অংশ নেন। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবনে। ভাঙচুর চালানো হয় প্রধান বিচারপতির বাসভবনে। হামলার শিকার হয় কয়েকটি গণমাধ্যম কার্যালয়। রাজধানীতে পুলিশ সদর দপ্তর এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশসহ পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনায় নির্বিচার হামলা চালানো হয়। সারা দেশে আওয়ামী লীগের কার্যালয় ও দলটির নেতাকর্মীদের ওপর আক্রমণের খবর পাওয়া গেছে। অনেক স্থানে সংখ্যালঘু
সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা চালানো হয়েছে। এ পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। এ ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধে সারা দেশে অবিলম্বে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা প্রয়োজন বলে মনে করি আমরা। ইতোমধ্যে সেনাপ্রধান, কোটা সংস্কার আন্দোলনের কয়েকজন সমন্বয়ক এবং আন্দোলনের সমর্থক বিশিষ্ট ব্যক্তিরা সব ধরনের প্রতিশোধপরায়ণতা ও অরাজকতা থেকে সবাইকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। আমরা মনে করি, এ ধরনের প্রতিশোধপরায়ণতা দেশে অরাজকতার জন্ম দিলে তা ছাত্র-জনতার বিজয়ের মাহাত্ম্যকে ম্লান করে দিতে পারে। কাজেই যে কোনো মূল্যে দেশে আইনের শাসন সমুন্নত রাখতে হবে।
রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থানের পর দেশে দ্রুত শান্তি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার প্রত্যাশা করছে মানুষ। একটি ইতিবাচক পরিবর্তনের অপেক্ষায় রয়েছেন সবাই। সারা বিশ্ব তাকিয়ে আছে বাংলাদেশের এ পরিবর্তনের দিকে। এ সময় হামলা, অগ্নিকাণ্ড, ভাঙচুর ও লুটপাটের দৃশ্য বহির্বিশ্বের কাছে কোনো ভালো অর্থ বহন করবে না, বরং ক্ষুণ্ন করবে দেশের ভাবমূর্তি। তাই দেশের কোথাও যেন সুযোগসন্ধানীরা আর এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটাতে না পারে, সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক ও সংযত থাকতে হবে।
মঙ্গলবার সারা দেশের সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, কলকারখানা, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণা দেওয়া হলেও সেসব স্থানে মানুষের উপস্থিতি ছিল কম। জানা যায়, গতকাল দুপুর ১২টার আগেই ভয়ে-আতঙ্কে সচিবালয় থেকে বের হয়ে যান সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বস্তুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরাপত্তা প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করায় মানুষের নিরাপত্তাবোধের অভাব বৃদ্ধি পাওয়াই এর কারণ।
Related
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।