ডেস্ক রিপোর্ট: বয়স ও উচ্চতার তুলনায় বাড়তি ওজন যেমন স্বাস্থ্যকর নয়, তেমনি কম ওজনও কাম্য নয়। ওজন অতিরিক্ত কম থাকলে পুষ্টিহীনতায় ভোগা, দুর্বল লাগা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যাওয়াসহ নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ে। তবে ওজন বাড়াতে গিয়ে অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার, চর্বিযুক্ত খাবার বা অস্বাস্থ্যকর তেল খাওয়া এড়িয়ে চলতে হবে। চর্বি বেড়ে ওজন বেড়ে যাওয়া ভালো ফল বয়ে আনে না। ওজন বাড়াতে চাইলে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৫০০ ক্যালোরি গ্রহণ করার লক্ষ্য থাকা উচিত। এর বেশি খেলে আরও দ্রুত বাড়বে ওজন। তবে দ্রুত ওজন বাড়ানোর চেয়ে ধীরে বাড়ানো স্বাস্থ্যকর। যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজের চিকিৎসক ও সহায় হেলথ এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ডা. তাসনিম জারা একটি ভিডিওতে স্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন বাড়ানোর কিছু পরামর্শ দিয়েছেন।
সকালের খাবার
ওজন বাড়াতে চাইলে সকালের নাস্তায় রাখতে পারেন দুধ, কলা, ডিম ও খেজুর। আমাদের শরীরের যত ধরনের পুষ্টি দরকার তার প্রায় সবগুলোই পাওয়া যায় দুধে। প্রচুর ক্যালসিয়াম রয়েছে এতে। ভিটামিন বি ১২ আছে যা আমাদের রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে। যেকোনো খাবারের সঙ্গে চট করে খেয়ে ফেলা যায় দুধ। কলায় ভিটামিন বি ৬ আছে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়া এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার পাওয়া যায় যা হজমে সহায়ক। কলা পাওয়া যায় সারাবছরই। সকালের নাস্তায় একটি বা দুটো কলা তাই নিশ্চিন্তে রাখতে পারেন। ডিমকে বলা হয় প্রকৃতির মাল্টিভিটামিন। এতে ভিটামিন এ রয়েছে যা আমাদের চোখ ভালো রাখে। রয়েছে ভিটামিন বি ২। এই ভিটামিন আমাদের ত্বক ভালো রাখতে সাহায্য করে। ডিমে থাকা জিংক আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। প্রতিদিন ডিম খাওয়ার অভ্যাস আপনার ওজন বাড়াতে সাহায্য করবে। খেজুরে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ফলিক অ্যাসিড ও ফাইবার রয়েছে এতে। সকালেই কয়েকটি খেজুর খেয়ে নিন। তবে এগুলো যে প্রতিদিন খেতে হবে বা সকালেই খেতে হবে এমন নয়। প্রতিদিন এগুলোর মধ্যে থেকে একটি বা দুটো আইটেম রাখতে পারেন।
দুপুরের খাবার
দুপুরের খাবারে পাতলা ডাল না রেখে ঘন ডাল রাখুন। প্রোটিনের দারুণ উৎস এটি। আয়রন, পটাশিয়াম ও ম্যাংগানিজেরও দারুণ উৎস ডাল। আমাদের অন্ত্রে প্রচুর উপকারী ব্যাকটেরিয়া আছে। প্রিবায়োটিক খাবার এসব ব্যাকটেরিয়ার জন্য উপকারী। ডাল হচ্ছে এক ধরনের প্রিবায়োটিক খাবার। ফলে সুস্থ থাকতে চাইলে ডাল খান নিয়মিত। খাবার শেষে এক বাটি টক দই খান। দুধের পুষ্টির পাশাপাশি উপকারী ব্যাকটেরিয়া মিলবে এতে।
দুপুরের খাবারে রাখতে পারেন মুরগির মাংস। সাধারণত এক টুকরো খাওয়ার অভ্যাস থাকলে সেটা একটু বাড়িয়ে নিন পরিমাণে। দুই টুকরা মুরগির মাংস খান। গরুর মাংস ও খাসির মাংস খেয়েও ওজন বাড়ানো সম্ভব। তবে এগুলো নিয়মিত না খাওয়াই ভালো। কারণ রেড মিটের সাথে নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি জড়িত। এগুলোতে যে পরিমাণ প্রোটিন থাকে, তা মুরগির মাংস, ডিম ও ডাল থেকেই গ্রহণ করা সম্ভব।
রাতের খাবার
দুপুরের খাবারের মতোই রাখতে পারেন রাতের খাবারের মেন্যু। যোগ করতে পারেন আরও নানা আইটেম।
অন্যান্য খাবার
ওজন বাড়াতে চাইলে নানা ধরনের বাদাম রাখুন খাদ্য তালিকায়। চিনাবাদাম, কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, পেস্তাবাদাম, আখরোট খেতে পারেন। বাদামে রয়েছে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, ফাইবার ও অনেক ধরনের ভিটামিন ও মিনারেল। এটাও এক ধরনের প্রিবায়োটিক খাবার।
বাদাম বা টক দইয়ের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন কিশমিশ।
ওজন বাড়ানোর আরেকটি উপায় হচ্ছে খাবারের সাথে বিভিন্ন ধরনের বীজ যুক্ত করা। মিষ্টি কুমড়ার বীজ, সূর্যমুখীর বীজ, তিসির বীজ খেতে পারেন।
কিছু সতর্কতা
আপনার ওজন আসলেই বাড়ানো দরকার কিনা সেটা আগে বুঝে নিন। যাদের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে কম, তাদের ওজন বাড়িয়ে স্বাভাবিকে আনা প্রয়োজন। কারণ ওজন কম থাকলে নানা ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।
কিছু রোগের কারণে ওজন তুলনামূলক কম হতে পারে। সেক্ষেত্রে আগে চিকিৎসা জরুরি। থাইরয়েডের সমস্যা, ডায়াবেটিস বা মানসিক রোগের কারণে ওজন কমে যেতে পারে। তাই ওজন বাড়ানোর চেষ্টা করার আগে একজন চিকিৎসককে দেখিয়ে নেবেন অবশ্যই।
কোনও কারণ ছাড়া বা কোনও চেষ্টা ছাড়া ওজন কমে যেতে শুরু করলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।
ওজন বাড়ানোর জন্য নিজেই কোনও ধরনের ওষুধ সেবন করবেন না। খাবারের পরিমাণ ও ধরনে পরিবর্তন আনলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে ধীরে ধীরে পরিবর্তন আনবেন। যে খাবারগুলো খেলে গ্যাস্ট্রিক হচ্ছে, সেগুলো বাদ দিয়ে দেবেন। এছাড়া ফাইবার সমৃদ্ধ খাবারের সঙ্গে অবশ্যই পর্যাপ্ত পানি খেতে হবে। ওজন বাড়াতে চাইলেও কিন্তু ব্যায়াম করতে হবে নিয়মিত। সপ্তাহে আড়াই ঘণ্টা ব্যায়াম একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের সুস্থ থাকার জন্য জরুরি।
Related
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।