অনলাইন ডেস্ক:
চলতি বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছে জাপানে পরমাণু বোমা হামলায় জীবিতদের নিয়ে গড়ে ওঠা পরমাণু অস্ত্রবিরোধী সংগঠন নিহন হিদাঙ্কিও। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে বোমার আঘাত থেকে বেঁচে যাওয়া মানুষদের নিয়ে সোচ্চার তৃণমূল সংগঠনটি স্থানীয়ভাবে ‘হিবাকুশা’ নামেও পরিচিত।
স্থানীয় সময় শুক্রবার ( ১১ অক্টোবর ) বেলা ১১টা (বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩ টা) নরওয়ের রাজধানী অসলোর নোবেল ইনস্টিটিউট থেকে এবারের শান্তিতে নোবেল বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হয়। নরওয়েজিয়ান নোবেল ইনস্টিটিউট এবার শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য মোট ২৮৬ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের নাম নিবন্ধন করেছিল। এর মধ্যে ১৯৭ জন ব্যক্তি। আর প্রতিষ্ঠান ৮৯ টি।
গত বছর শান্তিতে নোবেল পেয়েছিলেন ইরানের কারাবন্দী মানবাধিকারকর্মী নার্গিস মোহাম্মদি। দেশটিতে নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে তাঁর লড়াইয়ের স্বীকৃতি হিসেবে তাঁকে এই সম্মানে ভূষিত করা হয়।
মূলত পরমাণু অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব অর্জনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা জন্য ও ভুক্তভোগীদের সাক্ষ্যের মাধ্যমে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সংগঠনটিকে এই পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে বোমার আঘাত থেকে বেঁচে যাওয়া মানুষদের নিয়ে কাজ করা এই তৃণমূল আন্দোলনটি স্থানীয়ভাবে ‘হিবাকুশা’ নামেও পরিচিত। পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব অর্জনের প্রচেষ্টার জন্য এবং সাক্ষ্য সাক্ষ্যের মাধ্যমে প্রদর্শনের জন্য শান্তি পুরস্কার পাচ্ছে যে পারমাণবিক অস্ত্র আর কখনো ব্যবহার করা উচিত নয়।
নোবেল পুরস্কারের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ১৯৪৫ সালের আগস্ট মাসে জাপানে পারমাণবিক বোমা হামলার প্রতিক্রিয়া হিসেবে এই সংস্থাটি বিশ্বব্যাপী আন্দোলন গড়ে তোলে। এর সদস্যরা পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের বিপর্যয়মূলক মানবিক পরিণতি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে। ধীরে ধীরে সংস্থাটির আন্দোলন একটি শক্তিশালী আন্তর্জাতিক আদর্শ গড়ে ওঠে। সংস্থাটি পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহারকে নৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য বলে ঘোষণা করেছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, পারমাণবিক হামলার আঘাত থেকে বেঁচে ফেরা এই ঐতিহাসিক সাক্ষীরা তাদের ব্যক্তিগত উপাখ্যান ও নিজস্ব অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে শিক্ষামূলক প্রচারণা চালিয়েছে এবং পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার ও ব্যবহারের বিরুদ্ধে জরুরি সতর্ক সৃষ্টি করে সারা বিশ্বে পারমাণবিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিরোধিতা তৈরি করতে সাহায্য করেছেন।
এর আগে, নারী অধিকার রক্ষা, নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধ লড়াই ও মানবাধিকার রক্ষায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৩ সালে শান্তিতে নোবেল পান ইরানের নারগিস মোহাম্মদি। ইরানে নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে এবং সবার জন্য মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় নারগিস মোহাম্মদির লড়াইয়ের স্বীকৃতি হিসেবে তাঁকে শান্তিতে নোবেল দেওয়া হয়। নারী অধিকার ও মানবাধিকার রক্ষার লড়াইয়ে চড়া মূল্য দিতে হয়েছে। তাঁকে ইরান সরকার ১৩ বার কারাবন্দী করেছে। বিভিন্ন অভিযোগে ৩১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে এবং ১৫ বার তাঁকে দোররা মেরে শাস্তি দিয়েছে।
এদিকে, চলতি বছর এখন পর্যন্ত চিকিৎসা, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন ও সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। এ বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার লেখক হান কাং। ‘প্রগাঢ় কাব্যিক গদ্যে ঐতিহাসিক ক্ষত তুলে ধরা এবং মানবজীবনের নাজুক পরিস্থিতির উন্মোচনের জন্য’ তাঁকে বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাবান পুরস্কারের জন্য বেছে নিয়েছে নোবেল কমিটি।
চলতি বছর রসায়নে নোবেল বিজয়ী হয়েছেন তিন বিজ্ঞানী। তাঁরা হলেন—ডেভিড বেকার, ডেমিস হাসাবিস ও জন এম জাম্পার। প্রোটিনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করার কারণে তাঁদের এ বছর নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে। এ ছাড়া, কৃত্রিম ‘নিউরাল নেটওয়ার্কের সাহায্যে মেশিন লার্নিংকে সক্ষম করে তোলার’ মৌলিক আবিষ্কারের জন্য এ বছর পদার্থে নোবেল পেয়েছেন এআই গডফাদার হিসেবে পরিচিত জিওফ্রে হিনটন এবং জন হপফিল্ড। তার আগের দিন চিকিৎসায় নোবেল জেতেন ভিক্টর অ্যামব্রোস ও গ্যারি রাভকুন। মাইক্রো-আরএনএ আবিষ্কার এবং পোস্ট-ট্রান্সক্রিপশনাল (জিনের প্রতিলিপির পর) জিন নিয়ন্ত্রণে মাইক্রো-আরএনএর ভূমিকা আবিষ্কারের জন্য যৌথভাবে তাঁদের এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
Related
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।