সম্পাদকীয়:
একটি মামলার তদন্ত করতে গিয়ে জনশক্তি রপ্তানি খাতের বিশাল দুর্নীতির চিত্র বেরিয়ে এসেছে। দেখা গেছে, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) অনেক কর্মকর্তা বড় ধরনের দুর্নীতিতে জড়িত হয়ে পড়েছিলেন এবং তাদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। বরং তাদের বাঁচাতে গিয়ে কতিপয় চুনোপুঁটি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মামলায় বর্ণিত অভিযোগ পুনঃতদন্ত হলে ফেঁসে যাবেন মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী, মন্ত্রীর বেশ কয়েকজন আত্মীয়স্বজন, বিএমইটির তৎকালীন ডিজি ও মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা। তারা দেশের রেমিট্যান্স খাতকে পঙ্গু করে দিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করেছেন। তারা সবাই মিলে তৈরি করেছিলেন একটি সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের একজনকে গত বছর আওয়ামী লীগের নেতা শেখ হেলাল তদবির করে পছন্দানুযায়ী জায়গায় বসিয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ এখন দুর্নীতি দমন কমিশন ও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের টেবিলে স্তূপ হয়ে আছে।
নিয়োগ পাওয়ার পর তিনি শ্রমিক নিয়োগের বিষয়টি একাই কুক্ষিগত করে রেখেছিলেন। তারই অদক্ষতা ও দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থতার কারণে এ বছর ৩১ মে’র মধ্যে মালয়েশিয়ায় যেতে পারেননি ১৮ হাজার শ্রমিক। যেসব সহযোগী রিক্রুটিং এজেন্সি ওই শ্রমিকদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে, তাদের বিরুদ্ধে তিনি কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। ৫ আগস্টের আগে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পক্ষে যেসব শ্রমিক বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছিলেন, এই কর্মকর্তার ইশারায় তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছিল সেখানকার সরকার। সবচেয়ে বড় বিষয়, এই কর্মকর্তার অদক্ষতা ও অসততার কারণে বিদেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজার সংকুচিত হয়ে পড়েছে।
জনশক্তি খাত এদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান ভিত। বস্তুত কৃষি, বস্ত্র খাত ও রেমিট্যান্স-এই তিন ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে আমাদের অর্থনীতি। সুতরাং, জনশক্তি রপ্তানি খাতের কোনো দুর্নীতিই বরদাশত করা যাবে না। বিদেশে বাংলাদেশের জনশক্তির বাজার যত সম্প্রসারিত হবে, এদেশের অর্থনীতির জন্য ততই মঙ্গল। অথচ আলোচ্য দুর্নীতির বাইরেও আমরা জানি, এ খাতে দীর্ঘদিন থেকে নানা ধরনের দুর্নীতি ঘটে চলেছে। উপযুক্ত গমনেচ্ছুরা বিদেশের শ্রমবাজারে যেতে পারছে না যেমন, তেমনি নিয়মের বাইরে গিয়ে প্রার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর যাবতীয় দুর্নীতি উদ্ঘাটন করে প্রকৃত দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে যেমন, তেমনি ভবিষ্যতে জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রটিকে স্বচ্ছ ও নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ক্রিয়াশীল রাখতে হবে।
Related
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।