জাতীয় ডেস্ক:
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর) বা পঙ্গু হাসপাতাল পরির্দশে গিয়ে হেনস্থার শিকার হয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। আন্দোলনে আহত সবার চিকিৎসার খোঁজখবর না নেওয়া এবং অভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসায় ফাউন্ডেশন হলেও আর্থিক সহায়তা না পাওয়ায় আহতদের স্বজনেরা ক্ষুদ্ধ। তাদের হাতেই হেনস্থার শিকার হন উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম।
আজ বুধবার দুপুর পৌনে ১টার দিকে পঙ্গু হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে এমন অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে।
এর আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ের দায়িত্বরত ব্যক্তিদের অপসারণ না করায় গত ১৯ আগস্ট মহাখালীর ডিএনসিসি হাসপাতাল পরিদর্শনে গেলে বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের কাছে হেনস্থার শিকার হন তিনি।
জানা যায়, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক এবং স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম নিটোর পরিদর্শনে যান। তারা চতুর্থ তলার পুরুষ ওয়ার্ড প্রায় এক ঘণ্টারও বেশি সময় নিয়ে ঘুরে দেখেন এবং চলে যেতে চান। কিন্তু তিন তলার ওয়ার্ডে থাকা আহতদের দেখতে না যাওয়ায় আহতরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। নিচে এসে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি গাড়ি আটকে দেন তারা।
একই সময়ে গণঅভ্যুত্থানে আহতরা জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে অর্থ সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ তোলেন। ব্যাপক তোপের মুখে তাৎক্ষণিক দ্রুত হাসপাতাল প্রাঙ্গণ ছাড়ার চেষ্টা করেন উপদেষ্টা ও ব্রিটিশ হাইকমিশনার। তবে বিক্ষুব্ধরা তাদের গাড়ি ঘিরে আটকে রাখেন।
এ সময় গাড়ির সামনে একজন বসে পড়েন। গাড়ির ছাদে উঠে পড়েন একজন। কিছু সময় তারা গাড়িতে কিল-ঘুষিও মারতে থাকেন। নেমে আসতে বলেন গাড়ির চালককে। পরে নিরূপায় হয়ে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা এবং ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত অন্য একটি গাড়িতে করে সেখান থেকে বেরিয়ে যান।
পরে বিক্ষুব্ধরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওই গাড়ি ও প্রটোকলে থাকা পুলিশের একটি গাড়ি আটকে দেন এবং রাস্তায় অবস্থান নেন।
আহত এক শিক্ষার্থী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের এক একটা ওয়ার্ডে ৪৮ জন আহত রোগী রয়েছে। কিন্তু তারা তাদের পছন্দের বিদেশি পাঁচজন সাংবাদিক নিয়ে এসেছেন এবং আমাদের দেশিয় কোনো সাংবাদিককে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তারা (উপদেষ্টা এবং রাষ্ট্রদূত) দু-একজনের সঙ্গে কথা বলে চলে গেছেন। কিন্তু আমাদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। আমরা কথা বলতে গেলেও আমাদের বাধা দেওয়া হয়েছে।’
আন্দোলনে আহত এই যুবক বলেন, ‘সামান্য ট্রিটমেন্ট দিয়ে তিন মাস বসিয়ে রাখা হয়েছে। আমার পায়ে ৯টি অপারেশন করা হয়েছে, তারপরও এখন পর্যন্ত সুস্থ হতে পারিনি।’
এদিকে হাসপাতালের গেট বন্ধ করে অবস্থান নেওয়ায় রাস্তায় দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে রাস্তা বন্ধ করে দেয় আইন শৃঙ্খলাবাহিনী।
তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, পরিদর্শনকালে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ও ব্রিটিশ হাইকমিশনার আড়াই ঘণ্টারও বেশি সময় হাসপাতালের চার তলায় প্রত্যেকটি রোগীর খোঁজ খবর নেন এবং তাদের সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলেন।
মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন জানান, হাসপাতালের চতুর্থ তলায় পরিদর্শন শেষে বের হওয়ার সময় অনুরোধের প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা এবং ব্রিটিশ হাইকমিশনার সেখানেই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন। এ সময় ভিড়ে গায়ে হাত দেওয়ার অভিযোগ করে কয়েকজন ব্যক্তি অনাকাঙ্খিত ও অনভিপ্রেত পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।
তাদেরকে বারবার বোঝানোর চেষ্টা করলেও তারা শোনেনি। ফলে কথা না বলেই চলে আসতে বাধ্য হন উপদেষ্টা ও হাইকমিশনার।
নিটোর জানিয়েছে, যুক্তরাজ্য থেকে আসা দুই জনের চিকিৎসক টিম হাসপাতালে আহত ৮৫ জন রোগীকে দেখেছেন। আজ বুধবার পর্যন্ত ১৬ জনের সার্জারি করেছেন তারা। আগামীকাল দুজনের সার্জারি করার কথা রয়েছে। তারা আমাদের চিকিৎসা প্রটোকল ব্যবস্থা নিয়ে সন্তুষ্ট।
Related
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।