সম্পাদকীয়:
ডেঙ্গু রোগটি কি ব্যাখ্যার অযোগ্য হয়ে পড়েছে? ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা বংশ বিস্তার করে বৃষ্টিপাতের সময়। এ সময়টাই ডেঙ্গু বিস্তারের জন্য অনুকূল। কিন্তু এখন নভেম্বর শেষ হতে চলেছে, শীতের আগমনী বার্তাও পেয়ে গেছি আমরা। অর্থাৎ বৃষ্টিপাত নেই। সেক্ষেত্রে ডেঙ্গু ভয়াবহ আকার ধারণ করল কীভাবে? প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। চলতি বছর একদিনে মৃত্যুর এ সংখ্যা সর্বোচ্চ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৮৬ হাজার ৭৯১। আর মৃতের সংখ্যা ৪৫৯। এ নভেম্বরে ২৩ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ২৪,৯৭৪ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ১৪৪ জন।
উপরের তথ্যগুলো যে বাস্তবতা নির্দেশ করছে, এর বিপরীতে করণীয় কী? প্রথমত, এডিস মশার প্রজনন, এর আচরণ এবং জীবনধারায় কী কী পরিবর্তন এসেছে, সে সম্পর্কে গবেষণা জরুরি হয়ে পড়েছে। দ্বিতীয়ত, এ মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তৃতীয়ত, ডেঙ্গু আক্রান্তদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা দরকার। কথা হচ্ছে, এ তিন কাজের কোনোটাই কি আমরা সুচারুরূপে পালন করছি? নতুন ধারণা পাওয়া গেছে, এডিস মশা শুধু পরিষ্কার পানিতে নয়, দূষিত পানি, এমনকি নোনা পানিতেও বেঁচে থাকতে সক্ষম। রাতের বেলায়ও সংক্রমণ ঘটাতে পারে এ মশা। এমন অবস্থায় এডিস মশা নির্মূল করার কোনো বিকল্প নেই। অথচ এ ব্যাপারে আমরা তেমন তৎপরতা লক্ষ করছি না। বস্তুত, আমাদের স্বাস্থ্য খাতের তেমন কোনো উন্নতি ঘটাতে পারছে না স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসার ব্যাপারে বড় ধরনের কোনো অভিযোগ নেই অবশ্য। কিন্তু ডেঙ্গুর ভয়াবহ বিস্তার কেন ঘটছে, তা নির্ণয় করে প্রতিরোধের কোনো কার্যক্রম আমাদের চোখে পড়ছে না।
আমরা এ বিষয়টিকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানাই। সাধারণ মানুষের প্রতি আমাদের পরামর্শ থাকবে, জ্বর হলেই যেন তারা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। প্রকৃতপক্ষে, মানুষ যত সচেতন হবে, এ রোগের প্রকোপ ততই কমে যাবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ডেঙ্গুর ভয়াবহতা থেকে মুক্ত হবে দেশ-এ প্রত্যাশা করছি আমরা।
Related
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।