বিদেশের মাঠে শক্তিশালী দলের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের আশা উঁকি দিচ্ছে। প্রথম ম্যাচ ৯০ রানে জিতে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা সে সম্ভাবনার পালে হাওয়া লাগিয়ে দিয়েছেন অনেক বেশি করে। জিতলেই সিরিজ জয়। দুঃস্মৃতির ডাম্বুলায় সুখ স্মৃতি রচনা করার পর আবারো সুখ স্মৃতির পেছনে ছুটতে থাকা মাশরাফি বাহিনীর দিকে ধেয়ে আসছে সেই দুঃস্মৃতিই। টস হেরে আগের ম্যাচ ব্যাটিং পেয়ে তার ফায়দা নিলেও এবার টস হারের পর বাংলাদেশ দলকে আর সে সুযোগ দেয়া হয়নি। লঙ্কানরা নিজেরাই ব্যাট করতে নামে। সেই সঙ্গে ম্রিয়মাণ হতে থাকে বাংলাদেশের সিরিজ জয়ের সম্ভাবনা। কারণ শ্রীলঙ্কার আকাশে যে তখন তিনশ রান ছাড়িয়ে আরো বহুদূর যাওয়ার পুর্বাভাস। এ রকমটি যদি হয়ে থাকে তা হলে বাংলাদেশের জন্য সিরিজ জয় কঠিনই হয়ে পড়বে। কারণ ডাম্বুলার ইতিহাসে তিনশ রান করে হারের রেকর্ড যে নেই। এক সময় শ্রীলঙ্কা ১০ বল হাতে রেখেই তিনশ রান করে। শেষ দুই ওভারে যত বেশি রান করে সংগ্রহ বাড়িয়ে নেয়া। ৪৯তম ওভারে এসে কাটার মাস্টার মোস্তাফিজ যেন নিজেকে ফিরে পেলেন। গোটা ম্যাচে বেহিসাবি বোলিং করেছেন। যা ছিল তার ক্যারিয়ারের প্রথম। কিন্তু ৪৯তম ওভারে দেন ৬ রান। শেষ ওভার তাসকিনের। দেখার বিষয় একটাই রান কতটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন। উইকেটে মারকুটে গুনারতেœ। তাসকিনের পক্ষে কি আদৌ সম্ভব হবে রান নিয়ন্ত্রণ করা! প্রথম দুই বলেই ৫ রান। শেষ ৪ বলে রান তা হলে অনেক বেড়েই যাবে! ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ আর ধরে রাখা সম্ভব হবে না বাংলাদেশের। শেষ পর্যন্ত শেষ ম্যাচেই হবে সিরিজের ফয়সালা। এ রকমই ভাবনায় শেষ ৪ বল দেখছিলেন অনেকেই। তৃতীয় বলে তাসকিন দিলেন ফুলটস। খুবই বাজে বল। কিন্তু গুনারতেœ সঠিকভাবে ব্যাটে-বলে সেতুবন্ধ করতে ব্যর্থ হলেন। মিড অফে সহজ ক্যাচ ধরেন সৌম্য। উইকেট প্রাপ্তিতে নেই কারো মাঝে উল্লাসের লেশমাত্র চিহ্ন। অথচ এই তাসকিন যখন সেঞ্চুরিয়ান কুশাল মেন্ডিসকে নিজের বলে কঠিন এক ক্যাচ ধরেছিলেন, কুশালের শট তাসকিনের বাম কাঁধে লেগে ক্যাচ উঠে যায়। তাসকিন প্রথমে কিছুই বুঝতে পারেননি। বলে যখন দেখলেন বল উঠে গেছে আকাশে। দৌড়ে গিয়ে নিজেই ক্যাচ ধরেন। তারপর সে কি উল্লাস। কিন্তু এবার তা নেই। এমনকি চতুর্থ বলেও উইকেট নিয়ে সে রকম উল্লাসে মাতেননি। বলটি ছিল আবারো ফুলটস। লাকমালও ব্যর্থ হন সঠিকভাবে কাজে লাগাতে। মিড উইকেটে ক্যাচ ধরেন মোস্তাফিজ। তাসকিন শুধু হাত তুলে দূর থেকে অভিবাদন জানান মোস্তাফিজকে। পঞ্চম বল করতে আসেন। উইকেটে শেষ ব্যাটসম্যান নুয়ান প্রদীপ। তাসকিন এবার আর ফুলটস দেননি। করেন ইয়র্কার।
সরাসরি আঘাত হানেন স্ট্যাম্পে। মুহূর্তেই পাল্টে যায় মাঠের দৃশ্য। রানের পাহাড়ে চাপা পড়া বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা তাসকিনের হ্যাটট্রিকের সঙ্গে সঙ্গে যেন ছাইচাপা আগুন হয়ে ফুলকি দিয়ে উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন। তাসকিন তো পাখির মতো ডানা মেলে দুই হাত প্রসারিত করে উড়ছিলেন। এই তিনটি বলই যেন গোটা দলের মনোবল আবার চাঙ্গা করে দেয়। স্কোর বোর্ডে শ্রীলঙ্কার এক বল বাকি থাকতে সব উইকেট হারিয়ে জমা হওয়া ৩১১ রানও তখন মামুলি হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে এই রান আর কী। এটা তো সহজেই অতিক্রম করা যাবে। কিন্তু সে চেষ্টায় শামিল হতে পারেনি বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। শ্রীলঙ্কার ইনিংস শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ক্রিকেটের আজš§ শত্রু বৃষ্টি এসে আঘাত হানেন বাংলাদেশের ইনিংস। পরে আর খেলাই শুরু করা সম্ভব হয়নি। কোনো রিজার্ভ ডে না থাকাতে পরে খেলা পরিত্যক্ত হয়ে যায়। ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়ার ফলে বাংলাদেশের সিরিজ হারের কোনো সম্ভাবনা নেই। জেতার সম্ভাবনা আছে বাংলাদেশের। এ জন্য ১ এপ্রিল কলম্বোর এসএসসিতে শেষ ম্যাচ জিততে হবে বাংলাদেশকে।
তাসকিনের এই শেষ তিন বল বাদ দিলে ডাম্বুলায় বাংলাদেশের সিরিজ নিশ্চিত করা ম্যাচটি কিন্তু পুরোটাই ছিল স্বাগতিকদের নিয়ন্ত্রণে। টস জেতা থেকে শুরু করে ৪৯.২ ওভার পর্যন্ত। মাশরাফির টস ভাগ্য সব সময় বিপক্ষে যায়। এবারো তাই হয়েছে। কিন্তু প্রথম ম্যাচের মতো এবার আর টস হেরে ব্যাট করার সুযোগ পাননি। লঙ্কানরা নিজেরাই সেই ফায়দা নিতে ব্যাটিং করতে নামে। শুরুর ৭ ওভার পর্যন্ত তারা চাপে ছিল। এর মাঝে মাশরাফি আঘাত হেনে ফিরিয়ে দেন ওপেনার গুনাতিলিকাকে। এই উইকেট নিয়ে তিনি আবার সাকিবের ২২১ উইকেট ছাড়িয়ে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেট শিকার হয়ে যান। তার উইকেট সংখ্যা ২২২। শুরুতেই ওপেনারকে ফিরিয়ে দিয়ে যেখানে আরো বেশি চাপে থাকার কথা, সেখানে স্বাগতিকরা ধীরে ধীরে খোলাস ছেড়ে বের হয়ে আসতে থাকে। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে দলপতি উপুল থারাঙ্গা ও কুশাল সিলভা মিলে বাংলাদেশের বোলারদের সাধারণ মানে নামিয়ে আনেন। জুটিতে ২২ ওভারে তারা ১০৯ রান যোগ করে দলের রান তিনশ অতিক্রম করার ভিত গড়ে দেন। বোলাররা যখন ব্যর্থ জুটি ভাঙতে, তখন মাহমুদউল্লাহর চমৎকার এক সরাসরি থ্রোতে থারাঙ্গাকে রান আউট করেন। কিন্তু রানের চাকা আটকানো সম্ভব হয়নি। পেস ও স্পিন সবার বিপক্ষেই স্বাগতিক দলের ব্যাটসম্যানরা রান করছিলেন সহজেই। থারাঙ্গা ও চান্দিমাল তৃতীয় উইকেট জুটিতে আরেকটি শতরানের জুটি গড়ার পথে, জুটিতে ৮৩ রান যোগ করেন তখন চান্দিমালকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন মোস্তাফিজ।
ম্যাচে লঙ্কানরা সব দিক দিয়ে এগিয়ে থাকলেও ভাগ্যের সহায় ছিল বাংলাদেশের। টেস্ট ক্রিকেটে শূন্য রানে জীবন পেয়ে ১৯৪ রান করা কুশাল মেন্ডিস ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে এগোচ্ছিলেন সামনে দিকে। কিন্তু তাসকিন তাকে যেভাবে আউট করেন তাতে ছিল সম্পূর্ণ ভাগ্যের সহায়তা। তাসকিনের বল কুশাল মেন্ডিস ড্রাইভ খেলার পর তাসকিনের বাম কাঁধে লেগে যেভাবে ক্যাচ উঠে যায়, পরে তাসকিন করে তালুবন্দি তাকে ভাগ্যের সহায়তা ছাড়া আর কী-ই বা বলা যায়। তখনো দলের রান তিনশ ছাড়িয়ে বহুদূর যাওয়ার কথা। কুশাল আউট হওয়ার সময় দলের রান ছিল ৩৭.৪ ওভারে ৪ উইকেটে ২১৬। শ্রীবর্ধনে-গুনারতেœ সেভাবেই এগোচ্ছিলেন। শ্রীবর্ধনেকে মিরাজ তার একমাত্র শিকারে পরিণত করার পর স্বাগতিকরা আর সেভাবে এগোতে পারেনি। ৫ উইকেটে ২৭১ থেকে ৩১১ রানে অলআউট। ২৫ বলে ৪০ রানে পড়ে শেষ ৫ উইকেট। যার কারিগর ছিলেন তাসকিন। এ দিন মুশফিক চমৎকার কিপিং করে দুটি রান আউট ও শুরুতেই মাশরাফির বলে দৃষ্টিনন্দন একটি ক্যাচও ধরেন।
Related
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।