গদ্য ছন্দের ব্যবহার অপব্যবহার - BANGLANEWSUS.COM
  • নিউইয়র্ক, রাত ১:৪২, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ


 

গদ্য ছন্দের ব্যবহার অপব্যবহার

প্রকাশিত মার্চ ২২, ২০১৮
গদ্য ছন্দের ব্যবহার অপব্যবহার

কিন্তু যখনই আলাপকালে এই কাব্য সিদ্ধির পরিধি আলোচনায় লিপ্ত হয়েছি তখনই জানতে পেরেছি যে, এরা এমনকি ছন্দ সমন্ধে প্রাথমিক ধারণাটুকুও রাখে না। ছন্দের দুর্বলতা ঢাকতেই গদ্য ছন্দ অবলম্বন করে যা লিখছে সেটাকেই আধুনিক কবিতার আঙ্গিক বলে দুর্বলতা ঢাকতে চাইছেন। গদ্যের রহস্যময় ছন্দ রয়েছে এটা তাদের আয়ত্তেও নেই। অথচ নিকট দূর প্রায়শ পূর্বসুরির সমালোচক অস্বীকারের মধ্যে এদের সাহিত্যে বিজয় দেখতে পাই।’
(আল মাহমুদ, দিশেহারা কবির দল, কবির আত্মবিশ্বাস)
বেশ কিছু দিন যাবৎ মনে হচ্ছে, সাম্প্রতিক কালের কয়েকজন তরুণ কবিরা ছন্দ নিয়ে ভাবছেন। ভাবনার নেপথ্যে কি কারণ কাজ করছে সেটা এখনো অজানা। কবিতা লিখতে গেলে অবশ্যই ছন্দ জানতে হয়। আর তাই কবি মাত্রই ছন্দ জানবেন সেটাই স্বাভাবিক। আমাদের দেশে তুলনামূলকভাবে কবির সংখ্যা বেশি। তবে ভালো কবির সংখ্যা বলতে গেলে হাতেগোনা। মার্কিন কবি রবার্ট ফ্রস্ট তার একটি কাব্য গ্রন্থ প্রকাশ করতেন আটÑদশ বছর পরে। একটি কবিতার পেছনে অনেক দিন ধরে অমানুষিক পরিশ্রম করতেন। আমাদের তরুণ কবিরা অপেক্ষার প্রহর গুনতে নারাজ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম শুধু নয়, জীবনানন্দ দাশও অনেক দুর্বল কবিতা লিখেছেন। অবশ্য তাঁদের সফল কবিতার সংখ্যা বেশি বলেই এখন অবধি স্মরণীয় হয়ে আছেন। আমাদের দেশে কবিতার পাঠকের সংখ্যাও তুলনামূলকভাবে বেশ কম। তবে যারা প্রকৃত কবিতা পাঠক তারাই মূলত কবি। জীবনানন্দ দাশ মনে করতেন ‘সবাই কবি নয়, কেউ কেউ কবি।’ কিন্তু তার অনুজ কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর মতামত আবার জীবনানন্দ দাশের মতের বিপরীত। তার মতে সবাই কবি। যা হোক, আমার কাছে কেউ জানতে চাইবে না যে, ছন্দ বলতে কি বোঝায়? নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর সহজ সাধারণ মন্তব্য হলো ‘ছন্দ হলো কবিতার শরীরে দোলা লাগাবার অস্ত্র।’ পাশাপাশি তার সমসাময়িক কবি বন্ধু অরুন কুমার সরকার মনে করতেন কবির কাজ হলো স্মরণীয় বাক্য তৈরি করা। ছন্দ কবিতাকে স্মরণীয় করে রাখতে সহায়তা করে। এখন প্রশ্ন হলো- সাম্প্রতিক কালের তরুণ কবিরা এসব মতামত কি একেবারেই ভুলে গেছেন? আমার ব্যক্তিগতভাবে সেরকম মনে হয় না। এদের অনেকে ছন্দে লেখেন, ছন্দ যে জানেন তার প্রমাণ পেয়েছি তাদের একাধিক কবিতায়। তাদের সংখ্যা এতই কম যে, পাঠকের ওপর তেমন তারা বিশ্বাস স্থাপন করতে পারছেন না। অনেক পাঠক প্রায়ই অভিযোগ করেন যে, আজকাল কবিদের কবিতা তারা বুঝতে পারছেন না। অনেকে হয়তো বলবেন, কবিতা না বোঝা আর বোঝার সংগ্রাম তো কবিতা সৃষ্টির আদিকাল থেকেই চলে আসছে। তাহলে এ আর নতুন কী? পঞ্চাশ দশকে বুদ্ধদেব বসুরও মনে হয়েছিল তরুণ কবিদের কবিতা তিনি আর বুঝতে পারছেন না। সেই কারণে পত্রমারফত পঞ্চাশের কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়কে জানিয়ে ছিলেন যে, তিনি কবিতা পত্রিকা বন্ধ করে দেবেন। কারণ তাদের কবিতা তিনি বুঝতে পারছেন না। তবে শেষাবধি এই কারণেই কি বুদ্ধদেব বসু ‘কবিতা’ পত্রিকা বন্ধ করেছিলেন কি না বলতে পারব না। নির্দ্বিধায় বলা যায় একটা কারণ ছিল গদ্য ছন্দের অপব্যবহার। সাম্প্রতিক কালের তরুণদের কবিতা সমন্ধে পাঠকদের এক ধরনের বিরূপতা রয়েছে। কেন সেই বিরূপতাÑ বলছি সূত্রাকারে :-
১. আজকের বেশির ভাগ কবিরা গদ্য ছন্দে লিখছেন। এই সমস্ত কবিতাবলি পড়ার পর মনে রাখা দুষ্কর হয়ে পড়ছে। অর্থাৎ কবিতার মধ্যে কোনো স্মরণীয় বাণীর অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। একজন ভালো কবির প্রাথমিক দায়িত্ব হলো স্মরণীয় বাণী তৈরি করা। কবি এজরা পাউন্ড ও সেটাই মনে করতেন। যাকে টি, এস এলিয়ট বলেছেন, গবসড়ৎরধনষব ংঢ়ববপয।
২. এই সমস্ত তরুণ কবিদের ছন্দ জ্ঞান কম। যার ফলে প্রচলিত ছন্দে কবিতা লিখতে তারা ভয় পাচ্ছেন। ফলে গদ্য ছন্দের নামে ক্রমাগত কবিতা লিখে যাচ্ছেন। তাই কবিতা ক্রমশ তার পাঠক হারাচ্ছে।
এখন দেখা যাক, এ অভিযোগের বিষয়বস্তু কতখানি সত্যতা নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এটা ঠিক যে, অনেক প্রবীণ কবি এখনো প্রচলিত ছন্দে কবিতা লিখছেন। তারাও মাঝে মধ্যে এমন ছন্দে কবিতা লিখছেন- যার ফলে তাদের কবিতার ছন্দ বিশ্লেষণ করাটা কঠিন হয়ে পড়ে। যে আল মাহমুদ গুনে গেঁথে কবিতা লেখার জন্য বিখ্যাত, তিনিও মাঝে মধ্যে গদ্যছন্দে বা মুক্তছন্দে কবিতা সৃজন করেন। তখন সেই কবিতাকে প্রচলিত ছন্দে বিশ্লেষণ করা যায় না। তবে আশাপ্রদ বিষয় এই যে, আমাদের বিশিষ্ট কবিরা ছন্দের ঐতিহ্য রক্ষা করেই কবিতা লিখছেন। শুধু আল মাহমুদ কেন শামসুর রাহমানও এদিক থেকে পিছিয়ে নন। তাতে আমরা উপকৃত হয়েছি এ ভেবে যে, আমাদের কবিতায় ছন্দ নামক বস্তুটা একেবারে গোল্লায় যায়নি। যেমন চল্লিশ দশকেই একদল কবি সমালোচক বলার চেষ্টা করলেন জীবনানন্দ দাশ ভুল ছন্দে কবিতা লিখছেন। এদের মধ্যে কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্তও ছিলেন। তিনি এও মনে করতেন যে, জীবনানন্দ দাশ একজন গ্রামীণ কবি। অথচ বিস্ময়কর বিষয় এই যে, তার সম্পাদিত বিখ্যাত ‘পরিচয়’ পত্রিকায় জীবনাননন্দ দাশের গদ্য কবিতা ‘ক্যাম্পে’ প্রকাশিত হয়েছিল। যদিও অনুজ কবি আবুল হোসেন তাঁর ‘বনলতা সেন’ কাব্যগ্রন্থের ওপর আলোচনায় (চতুরঙ্গ চৈত্র ১৩৪৯Ñ১৯৪৩) বলেছেন, ‘একান্ত রূপেই এইটা কৃষি যুগের ছন্দ’। আসলে ছন্দ নিয়ে বিতর্ক ছিল, আর কবিতা সৃজন অব্যাহত থাকলে সেটা থাকায় স্বাভাবিক। তবে বেশির ভাগ তরুণ কবি প্রস্তুতিহীন অবস্থায় কবিতা লেখা শুরু করেছেন। বিপদটা এখানেই। চল্লিশ দশকের বিশিষ্ট কবি ও ছান্দসিক নীরন্দ্রেনাথ চক্রবর্তী কবিদের সতর্ক করে দিয়েছিলেন এই বলে-
‘কথা হলো প্রথাগত ছন্দ জেনে রাখা ভালো। কিন্তু তার দাসকৃতি করা ভালো নয়। বই পড়তে হবে ছন্দ সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার জন্য। তবে লিখতে হবে নিজের মত করে। ছন্দ শেখার পর এটা আবার ভুলে যেতে হবে। ছন্দ কাজ করবে ভেতরে ভেতরে। আর স্পষ্ট ভাবে তাকে ডেকে আনার দরকার নেই।’
নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর এ মন্তব্য বিশ্লেষণ করলে দুটি জিনিস পাওয়া আমাদের সহজ হচ্ছে। প্রথমত, কবিকে বই পড়েই ছন্দ বুঝতে হবে। দ্বিতীয়ত, সেটা বুঝেই অবশ্যই সাধনার পথে যেতে হবে। তাহলে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে কবিকে ছন্দ বাধ্যতামূলকভাবেই জানতে হবে। এ ছাড়া তার সাফল্যের অন্য কোনো পথ নেই। কিন্তু এই মন্তব্যের বিপরীত চিন্তা-চেতনা দেখা যাচ্ছে আজকের বেশির ভাগ তরুণ কবিদের মধ্যে। তবুও আশাপ্রদ দিক যে, একেবারে নেই তা নয়। বেশ কয়েকজন তরুণ কবিদের কবিতার ছন্দের সুদক্ষ ব্যবহার আমাদের আশান্বিত করেছে। তাই এখন মনে হচ্ছে সমালোচকরা হয়তো যতটা ভয়াবহভাবে দেখানোর চেষ্টা করছে, আসলে ঠিক ততটা নয়। বলাবাহুল্য এঁরা ছন্দে হাত পাকিয়েই এসেছেন। কয়েকজন কবির কবিতা ধারাবাহিক ভাবে তুলে ধরছি-
অক্ষরবৃত্ত আট-ছয় মাত্রা :-
প্রথম জন্মের দাগ, অতঃপর বালি
অতঃপর মাটি আমি থুয়েছি নিরালে।
সযত্নে থুয়েছি আমি গুঞ্জরের মালি
তনুবতী কন্যা তুমি যে রঙ ফিরালে-
(অনার্য মাদুলী : বায়তুল্লাহ কাদেরী)

অক্ষরবৃত্ত আট-দশ মাত্রা :-
মাঠের কুয়াশা জালে জেগে থাকে তারাদের চোখ
তোমার চোখের পাশে আরো চোখ আরো নব রাত
কী সুবাস ঢেলে দাও অবিরত বাড়াও দুহাত
আমিও তোমার মনে গড়ে দেবো জোছনা আলোক
(চাঁদের দোসর তুমি : জাকির আবু জাফর)

মাত্রাবৃত্ত ছয় মাত্রার :-
দুই মলাটের একটিই বই
প্রতিজ্ঞা ছিলো হাতে হাতেই সে
ঘুরতে থাকবে
আমিই চরম স্বপ্ন বর্ণ
এক হাত থেকে আর হাত দিয়ে
উড়তে থাকবে।
(মলাট বিদ্ধ : জাফর আহমদ রাশেদ)

মুক্তক অক্ষরবৃত্ত-
গভীর রাত্রি। কেউ জেগে নেই। জেগে আছে তোমার প্রণয়
যা পেয়েছিলাম একবার ঠোঁটে।
ইদানীং দেখি তারাই কেবল মাছির মত জালাচ্ছে আমাকে
আর দৈবের মত বিস্ময়
লেগে থাকে আমাদের বিচ্ছেদের শেষ পোশাকে-
স্মৃতির সূর্যরা আজো হৃদয়ের কাচে দিবস রজনী ফোটে।
(পরিতাপ : খুরশীদ আলম বাবু)

স্বরবৃত্ত ছন্দ :-
তুইতো মেয়ে দস্যি মেয়ে
প্রেমতলিরই নাপাক মাটি
তুই তো মেয়ে পরাণ টলের
পোকা ধরা সরের বাটি।
তুইতো মেয়ে অচলারই ছলচাতুরী
রেললাইনের আনা দরের মোয়ামুড়ি।
(ভর দুপুরের স্মৃতি: মঈন শেখ)

কৃষ্ণচূড়া কি করে তুই হলি এত লাল?
কোন লালিমায় লাল হয়েছে লাল শিমুলের ডাল?
অরুণ আভা ক্যামনে হলো লাল রঙেতে মাখা?
সেই ইতিহাস সব অন্তরে দেখছি আজো রাখা।
(কৃষ্ণচূড়ার লাল : শাহাদাৎ সরকার)
ওপরের উদাহরণকৃত কবিতার আংশিক পাঠে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে, এরা সকলেই ছন্দ দক্ষ শুধু নয়, কবিতা লেখার কলা কৌশল বিষয়েও অভিজ্ঞ। কবিতায় ছন্দ আছে কি নেই এ বিষয়ে মতবিরোধ কবিদের মধ্যে থাকবেই। আর এটা শাশ্বত সত্য যে, ছন্দ না জেনে একজন কবি দীর্ঘকাল কবিতা লিখতে পারবেন না। চল্লিশ দশকের সমর সেন অবশ্য তাঁর উজ্জ্বল উদাহরণ। তাঁর অনুজ কবি অরুণ কুমার সরকার মনে করতেন আসলে চালাকির দ্বারা কোনো মহৎ কবিতা লেখা যায় না। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় অধ্যাপকরা এ কথা মানতে চান না। আজও তাঁকে (সমর সেন) মহৎ কবি বানানোর জন্য গবেষণায় লিপ্ত আছেন।
অথচ বিস্ময়কর বিষয় হলো- এই যে ভালো কবিতায় গদ্যের সচল-শক্তিশালী প্রবাহ থাকাটাই অত্যন্ত দরকারি। মার্কিন কবি এজরা পাউন্ড (টি এস এলিয়ট যাকে গুরু বলে মানতেন। বিখ্যাত ডধংঃব ষধহফ কবিতার সংস্কারক হিসেবে ইংরেজ কবিদের ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছেন।) মনে করতেন কবিতা অবশ্যই সুলিখিত (ডবষষ ডৎরঃঃবহ) হতে হবে।
প্রয়াত কবিÑসমালোচক আবদুল মান্নান সৈয়দ একবার এক সাহিত্য সভায় বলেছিলেন-
‘গদ্য না লিখলে ভালো কবিতা লেখা যায় না। আরো বলেছিলেন, সত্যি বলতে কি? আজকের বেশির ভাগ তরুণ কবিরা গদ্য লেখার বিষয়ে দীপ্র বিমুখ। কবির গদ্য লেখার দক্ষতা দেখেই প্রমাণ করে কে কত বড় কবি। আমি গদ্য লিখেছি কবিতার প্রয়োজনে।’
মান্নান সৈয়দের কথার মধ্যে সেদিন যেন টিএস এলিয়টের মন্তব্যের প্রতিধ্বনি শুনতে পেয়েছিলাম। কারণ নোবেল লরিয়েট কবির কবিতার সমর্থনে মান্নান সৈয়দের কাব্যগ্রন্থের চেয়ে সমালোচনামূলক লেখাই বেশি। আমাদের আরেক কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার উজ্জ্বল উদাহরণ। কবিতার প্রয়োজনে তাঁরা অনেক গদ্য লিখেছেন। কবি সৈয়দ শামসুল হকও একই কথা বলেছেন তাঁর মার্জিনে মন্তব্য গ্রন্থে। আগ্রহী কবি-পাঠকেরা পড়ে দেখতে পারেন। তবে এটা সত্যি যে, গদ্য কবিতার বিপদ যে শুধু আনাড়ি তরুণ কবিরা এনেছেন তা ঠিক নয়। কারণ আমাদের দেশের সাধারণ পাঠকেরা ছন্দ বলতে এখনো কবিতার অন্তমিলকেই বোঝেন। আসলে গদ্য কবিতা আমাদের কাব্য সাহিত্যে কোনো অপরিচিত আঙ্গিক নয়। প্রাচীন সংস্কৃত সাহিত্যে গদ্য কবিতার অস্তিত্ব ছিল। বাইবেলের একটি অংশ সলেমনের গান রচিত হয়েছিল গদ্য ছন্দে। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই ছন্দের প্রশংসা করেছিলেন। কারণ তার মনে হয়েছিল গদ্য ছন্দ ছাড়া অন্য কোনো ছন্দে এ গানের মূল সুর ধরা যেত না। যেমন জীবনানন্দ দাশের বিখ্যাত কবিতা ‘ক্যাম্পে’ ছন্দই যেন গদ্যে নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল। এই কবিতা যদি মাত্রাবৃত্ত ছন্দে লেখা হতো – তাহলো কি মানাতো? এই জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গদ্য ছন্দকে ভাবছন্দ বলে অ্যাখায়িত করেছেন। আর কবিতায় অন্তমিল না থাকলে আমাদের কোমলমতি পাঠকরা ধরে নেন সেটা গদ্য কবিতা। বলাবাহুল্য, পাঠকেরা কবিতা বোঝার জন্য সামান্যতম কষ্ট করতে রাজি নন। কবিতা বুঝতে গেলে পাঠককে সহৃদয়তার সাথে এগিয়ে আসতে হবে। কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী তার একটি কবিতায় তরুণ কবিদের পরামর্শ দিয়েছেন, ছন্দে হাত পাকিয়ে তারা যেন স¤্রাটের মতো গদ্য ছন্দের সভায় যায়।
কিন্তু আমাদের কেন যেন মনে হয়েছে, আগের তুলনায় ছন্দহীন প্রেক্ষিত অথবা গদ্য ছন্দের অপব্যবহার বেড়ে গেছে। সাধারণ পাঠকের কবিতা সম্পর্কে একধরনের নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করেই চলেছেন। এই মনোভাব দূর করার দায়িত্ব কবিদের ওপরেই বর্তেছে। কবি যশপ্রার্থীকে সব ছন্দে দক্ষতা অর্জন করেই কবিতা লেখার ক্ষেত্রে সাধনার পথ ধরে অগ্রসর হতে হবে। এ ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই। যারা বলেন ছন্দ মানি না, তাদের না মানার মধ্যেও রয়েছে চূড়ান্ত অজ্ঞতা। না জানলে মানার প্রশ্ন অবান্তর। সুতরাং আগে তো জানতে হবে। তারপর মানা না মানার অবকাশ। এই কারণে তাদের লেখা পড়লেই মনে হয় টিএস এলিয়টের সেই অমর বাণী, No poet, No Artiste can not complete meaning alone.

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।