ডেস্ক রিপোর্ট :: জাতীয় নির্বাচনের মতো উপজেলা নির্বাচনেও দলীয় প্রতীক নৌকা পেতে কক্সবাজারে মরিয়া হওয়া প্রার্থীরা মাঠে চরমভাবে হেরেছেন। দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের কাছে ধরাশায়ী হয়েছেন নৌকার প্রার্থীরা।
প্রায় প্রতিটি উপজেলায় নৌকার প্রার্থীকে হারিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান হয়েছেন ভিন্ন প্রতীকে মাঠে নামা নিজ দলের নেতারা। বিজয়ীরা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী হলেও নৌকার ভরাডুবি সব মহলকে ভাবিয়ে তুলেছে।
পঞ্চম উপজেলা নির্বাচনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপে কক্সবাজারের ছয় উপজেলার পাঁচটিতে বিদ্রোহী প্রার্থীরা নৌকাকে হারিয়ে জয়ী হয়েছেন। রোববার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে রামুতে সোহেল সরওয়ার কাজল (আনারস), টেকনাফে নুরুল আলম (মোটরসাইকেল), পেকুয়ায় জাহাঙ্গীর আলম (দোয়াতকলম) এবং মহেশখালীতে শরীফ বাদশা (আনারস) প্রতীকে জয়ী হন।
এর আগে গত ১৮ মার্চ চকরিয়া উপজেলা নির্বাচনে একইভাবে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে পেছনে ফেলে আনারস প্রতীকে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হন বিদ্রোহী প্রার্থী ফজলুল করিম সাঈদী।
শুধুমাত্র সমঝোতায় উখিয়া উপজেলায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেয়েছেন নৌকার প্রার্থী অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী। তিনি ছাড়া কক্সবাজারে নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থীদের জয়জয়কার অবস্থা।
জেলা নির্বাচন অফিসের সূত্রমতে, রোববারের নির্বাচনে রামুতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে পরাজিত করে চেয়ারম্যান হয়েছেন রামু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোহেল সরওয়ার কাজল। হাড্ডাহাড্ডি লড়ায়ে জয়ের স্বাদ পান তিনি। এখানে সোহেল সরওয়ার কাজল আনারস প্রতীকে পেয়েছেন ৩১ হাজার ২৩৮ ভোট। আর নৌকা প্রতীকে উপজেলা যুবলীগ সভাপতি রিয়াজ উল আলম পেয়েছেন ২৯ হাজার ৪৯২ ভোট।
সোহেল সরওয়ার কাজল তৃতীয় দফায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে রামু উপজেলা চেয়ারম্যান হন। উপ-নির্বাচনে রামুতে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন রিয়াজ উল আলম। আপন ছোটভাই সদর আসনের এমপি সাইমুম সরোয়ার কমলের তুমুল বিরোধীতার মাঝেও নৌকা প্রতীক না পেয়ে বিদ্রোহী হিসেবে মাঠে নেমে জয় নিজের করে নিয়েছেন সোহেল সরওয়ার।
তার সঙ্গে পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মো. সালাউদ্দিন (তালা প্রতীক) আর নারী ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন যুব মহিলা লীগ নেত্রী আফসানা জেসমিন পপি (কলসি)।
টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং সাবেক এমপি অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী ও সহ-সভাপতি জাফর আহমেদকে পরাজিত করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা যুবলীগ সভাপতি নুরুল আলম (মোটরসাইকেল)।
তিনি পেয়েছেন ৩৭ হাজার ২৯৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকা পেয়েছে ২৪ হাজার ৫১ ভোট। নিজ দলের আরেক বিদ্রোহী প্রার্থী ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমেদ পেয়েছেন ১৬ হাজার ৪৭৪ ভোট।
তাকে ঠেকাতে সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি, নৌকা প্রতীকের অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী এবং জাফর আহমেদও একাট্টা হয়েছিলেন। এরপরও জয় পেয়েছেন উপজেলা যুবলীগ সভাপতি নুরুল আলম।
টেকনাফে ভাইস চেয়ারম্যান হয়েছেন মওলানা ফেরদৌস আহমেদ (তালা) আর নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান তাহেরা আক্তার মিলি (পদ্মফুল)।
পেকুয়ায় উপজেলায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন উপজেলা যুবলীগের সভাপতি বিদ্রোহী প্রার্থী দোয়া কলমের জাহাঙ্গীর আলম। তিনি পেয়েছেন ১৭ হাজার ২২৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নৌকা প্রতীকের আবুল কাশেম পেয়েছেন ১৫ হাজার ২৫৯ ভোট। এছাড়া আরেক বিদ্রোহী প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগ নেতা এস এম গিয়াস উদ্দিন পেয়েছেন ৮ হাজার ৩০৬ ভোট।
পেকুয়ায় পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন মো. আজিজুল হক (চশমা) আর নারী ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন (ফুটবল) জেলা আওয়ামী লীগ নেত্রী উম্মে কুলসুম মিনু।
মহেশখালীতে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বিদ্রোহী প্রার্থী শরীফ বাদশা। আনারস প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ৩১ হাজার ২৩২ ভোট। তার নিটকতম প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকার প্রার্থী মোহাম্মদ হোছাইন ইব্রাহিম পেয়েছেন ২৭ হাজার ৯৬৭ ভোট। এছাড়া আরেক প্রার্থী উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক সাজেদুল করিম (দোয়াত কলম) পেয়েছেন ১৫ হাজার ৮৬১ ভোট।
কিন্তু শরীফ বাদশা গত ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ে পরাজিত হয়েছিলেন। এবার উপজেলা নির্বাচনে ভিন্ন প্রতীকে নৌকাকে পরাজিত করলেন তিনি। এখানে পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন (বৈদ্যুতিক বাল্ব) আর নারী ভাইস চেয়ারম্যান মিনুয়ারা বেগম (পদ্মফুল)।
এদিকে, উখিয়ায় মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন সমঝোতায় অন্য প্রার্থীরা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেয়ায় চেয়ারম্যান পদে নৌকার প্রার্থী অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে কামরুন্নেছা বেবী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। রোববারে কেবল পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে হওয়া ভোটগ্রহণে ৩৮ হাজার ১০৭ ভোট পেয়ে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন জাহাঙ্গীর আলম।
এখানে ভোট কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগ তুলে নির্বাচন চলাকালীন দুপুর ১২টার দিকে ভোটবর্জন করেন ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী মাহবুব আলম, এআর জিহান চৌধুরী ও মোহাম্মদ রাসেল। এর আগে শুক্রবার নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান আরেক ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী নুরুল হুদা।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, কোন প্রতীক বা প্রার্থী জিতল-হারল এটা আমরা কাউন্ট করি না। আমাদের টার্গেট সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেয়া। উপজেলা নির্বাচনের বিগত দুটি ধাপে এ লক্ষ্য পূরণ করতে পেরেছি।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বলেন, উপজেলায় নির্বাচিতরা এলাকার উন্নয়নে কাজ করবেন। তাদের সঙ্গে নিয়ে শৃঙ্খলা উন্নয়নে আমরা কাজ করব। এখানে কেউ আমাদের পর বা আপন নয়। সবাই সমান। তাই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রোধ করে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে বদ্ধ পরিকর।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।