স্টাফ রিপোর্টার: দেশি পণ্যে বিদেশি স্টিকার, অস্বাভাবিক দামে পণ্য বিক্রি, বিদেশি পণ্যে ইচ্ছামতো দাম বসিয়ে বিক্রিসহ নানা অভিযোগে বিভিন্ন মার্কেটে অভিযান চালান মৌলভীবাজার জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এ সময় বিভিন্ন দোকান মালিককে জরিমানা করা হয়। জরিমানা এড়াতে ক্ষিপ্ত হয়ে জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক আল-আমিনকে জিম্মি লাঞ্চিত করে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
বৃহস্পতিবার (৩০ মে) দুপুরে ভেজালবিরোধী অভিযান চালানোর সময় এ ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালককে জিম্মি অবস্থা থেকে উদ্ধার করে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিয়মিত ভেজালবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার মৌলভীবাজার জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালকের নেতৃত্বে ভেজালবিরোধী অভিযান চালানো হয়।
এ সময় সেন্ট্রাল রোডের ব্যবসায়ীরা জেলা ভোক্তা অধিকার অধিদফতরের সহকারী পরিচালককে অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশেদুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন।
জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, দুপুরে অভিযান চালিয়ে শহরের কোর্ট রোডের রাজমহলে ইফতার সামগ্রীতে পোকা থাকায় ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এরপর সেন্ট্রাল রোডের একটি কাপড়ের দোকানে গিয়ে বিদেশি প্যান্টের দাম ২ হাজার ৪০০ টাকা দেখে কাগজপত্র দেখতে চান ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক।
পরে কাগজপত্রে ধরা পড়ে এটি দেশি প্যান্ট এবং দাম ৭০০ টাকা। তাই ওই দোকানকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এরপর সেন্ট্রাল রোডের এমবি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের পণ্যের অতিরিক্ত দাম, নিজেদের মতো দাম নির্ধারণের অভিযোগে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এরপর বিলাস ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে গিয়ে পণ্যের অতিরিক্ত দাম, বিদেশি পণ্যের দাম নিজেদের মতো করে নির্ধারণ, দেশি পণ্যকে বিদেশি ব্র্যান্ড নাম দিয়ে বিক্রি করার অভিযোগ করলে বিলাস কর্তৃপক্ষ আপত্তি জানায়। এ নিয়ে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়লে আশপাশের ব্যবসায়ীরা একজোট হয়ে জেলা ভোক্তা অধিকারের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আল-আমিনকে লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করে।
এ সময় আশপাশের ব্যবসায়ীরা দোকান বন্ধ করে রাস্তায় অবস্থান নেন। পরে ভোক্তা অধিকারের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আল-আমিনকে নিয়ে আসে পুলিশ।
ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, যখন তখন ভোক্তা অধিকারের অভিযানের কারণে আমাদের ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে। আমাদের না জানিয়ে অভিযান চালানো যাবে না।
ভোক্তা কর্মকর্তা বলেন, তাদের জানিয়ে যেতে হবে কেন। যেকোনো সময় অভিযান চালাতে পারি। তাদের অনিয়মের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান । ন্যায্য মূল্য না নিয়ে তারা অতিরিক্ত মূল্য তালিকা লাগিয়ে ভোক্তা অধিকার আইন লঙ্ঘন করছে ।
এ ব্যাপারে জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক আল-আমিন বলেন, পণ্যের অতিরিক্ত দাম, বিদেশি পণ্যে নিজেদের মতো করে দাম বসানো এবং পণ্যের গায়ে থাকা দামকে টেম্পারিং করে নিজেদের মতো দাম বসানোর অভিযোগে অভিযান চালানো হয়। কিন্তু অভিযানের সময় এমবি ও বিলাশের দোকানীরা আমাদের লাঞ্ছিত করে সরকারি কাজে বাধা দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশেদুল ইসলাম বলেন, ভেজালবিরোধী অভিযানে গেলে ভোক্তা অধিকারের সহকারী পরিচালককে লাঞ্ছিত করেন ব্যবসায়ীরা। সেই সঙ্গে তাকে জিম্মি করে রাখা হয়। পরে আমরা গিয়ে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসি।
ঈদের কেনাকাটা করতে আসা স্থানীয় ক্রেতারা বলছেন প্রতিদিন ভোক্তা অধিকার অভিযান চলাচ্ছে। আমরা তাদের অভিযান দেখে অনেক সচেতন হয়েছি। আজ এমবি, বিলাশকে জরিমানা করায় আজ তাদের লাঞ্চিত করা হচ্ছে। এই দুই দোকানের জন্য সেন্টাল রোর্ডে যানজট লেগেই তাকে তা নিয়ে ব্যবসায়ীদের ভালো কোনো উদ্যোগ নেই।
Related
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।