৪৪ বছর পর আত্মত্যাগের স্বীকৃতি সম্মাননা পেলেন সেই তিনবন্ধু

Daily Ajker Sylhet

১৮ ডিসে ২০১৯, ০৭:৫৮ পূর্বাহ্ণ


৪৪ বছর পর আত্মত্যাগের স্বীকৃতি সম্মাননা পেলেন সেই তিনবন্ধু

মো. আখলাকুজ্জামান, গুরুদাসপুর (নাটোর):
পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার চেয়ে প্রতিবাদ করায় কারাভোগকারী নির্যাতিত সেই তিনবন্ধুকে ৪৪ বছর পর সম্মাননা প্রদান করেছে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলা প্রশাসন। ১৬ ডিসে¤¦র গুরুদাসপুর পাইলট সরকারি মডেল উচ্চবিদ্যালয় মাঠে মহান বিজয় দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রবীর বর্মন, নির্মল কর্মকার ও অশোক পালকে আত্মত্যাগের স্বীকৃতি স্বরূপ ওই সম্মাননা স¥ারক প্রদান করেন ইউএনও মো. তমাল হোসেন।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর উত্তরবঙ্গের মধ্যে এই তিনবন্ধু প্রথম প্রতিবাদ করেছিলেন। এজন্য তাদের ২৯ মাস কারাভোগ করতে হয়েছিল। জেলজুলুম ও হয়রানির কারণে যৌবনকালে তারা তাদের ভবিষ্যৎ গড়তে পারেননি। তাই সম্মাননা স¥ারক প্রদান অনুষ্ঠানে মুহুর্মুহু করতালিতে তিনবন্ধুর চোখে আনন্দের অশ্রু বয়ে যায়। তিনবন্ধুর বাড়ি পৌর সদরের চাঁচকৈড়ে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর প্রতিবাদ করায় কিভাবে নির্যাতিত হয়েছিলেন সে ইতিহাস জানালেন তারা।
পঁচাত্তরে তিনবন্ধু ছিলেন বিলচলন শহীদ সামসুজ্জোহা কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। রেডিওতে খবর শুনে তারা প্রতিবাদী হয়ে উঠেন। ‘‘রক্তের বদলে রক্ত চাই, মুজিব হত্যার বিচার চাই’’ শ্লে¬াগানে দেয়ালে পোস্টার লাগালেন আর লিফলেট বিতরণ করলেন। পরদিন সহপাঠীদের নিয়ে কলেজ মাঠেও মিছিল করেন। তখন বঙ্গবন্ধুর লাশের ওপর দিয়ে ক্ষমতায় আসে খন্দকার মোস্তাক সরকার। বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার চাওয়ায় তাদের খুঁজতে থাকে পুলিশ। পুলিশ তাদের বাড়িতেও হানা দেয়। পরিবারগুলোও পড়ে যায় চাপে। বাধ্য হয়ে গাঢাকা দেন তারা। বঙ্গবন্ধুর হত্যার তিনমাস পর জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করলে তারা এলাকায় এসে আবারও প্রতিবাদ মিছিল করেন। ৬ নভে¤¦র গুরুদাসপুর থানা পুলিশ তাদের আটক করে। থানায় এনে তাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে টর্চার করা হয়। পরদিন নেওয়া হয় নাটোর কারাগারে। এর দুই সপ্তাহ পর পাঠানো হয় রাজশাহী কারাগারে। সে সময় তাদের এইচএসসি পরীক্ষার জন্যও জামিন দেওয়া হয়নি। রাজশাহী কারাগারে বিচার বহির্ভূতভাবে তারা দুই বছর আটক থাকেন। এরপর জজকোর্টে তাদের ছয় মাসের সশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়। ২০০ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও দুই মাস জেল দেয়া হয়। সে সময় গরু বিক্রি করে তারা জরিমানার টাকা শোধ করেন। জেলখাটার পর এলাকায় এসেও মাঝে মধ্যে পালিয়ে থাকতে হয়েছে তাদের।
বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সাহসী তিন সৈনিক জানান, তাদের বিশেষ কোন চাওয়া পাওয়া নেই। প্রবীর বর্মন ও নির্মল কর্মকার বলেন, ছেলে মেয়েদের যোগ্যতা মাফিক কোনো চাকরি হলে আমাদের সংসারের টানাপড়েন কমতো। আরেক বন্ধু অশোক পাল বলেন, গান গেয়ে ও গান শিখিয়ে জীবন চালাই। বঙ্গবন্ধুর কন্যা এখন ক্ষমতায়, আমাদের বাকি জীবন চলার জন্য যদি কোনো ব্যবস্থা করেন আমরা তাতেই খুশি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তমাল হোসেন বলেন, তিন বন্ধুর আত্মত্যাগ ও দেশ প্রেম আমাকে আকৃষ্ট করেছে। প্রাথমিক ভাবে তাদের সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। আগামীতে তাদের নিয়ে বড় কিছু করার ইচ্ছা আছে।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।