কুষ্টিয়ার মিরপুরে সরকারি গাছ নিধনের উৎসব

Daily Ajker Sylhet

১৮ ডিসে ২০১৯, ১২:৪৪ অপরাহ্ণ


কুষ্টিয়ার মিরপুরে সরকারি গাছ নিধনের উৎসব

নজরুল ইসলাম মুকুল, কুষ্টিয়া :
কুষ্টিয়া মিরপুর উপজেলায় প্রভাবশালীদের মদদে সরকারী গাছ কাটার উৎসব চলছেই। গত এপ্রিলে সড়ক বিভাগ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রায় অর্ধকোটি টাকা মূল্যমানের ছোট বড় ৭শ গাছ কর্তনের অভিযোগে মামলা হলেও গত শনি ও রবিবার গভীর রাতে একই কায়দায় উপজেলার গোবিন্দগুনিয়া গ্রামে জিকে মেইন খালের পাশর্^স্থ ২শ মিটার এলাকার আম, নিম ও পায়াজাতীয় ১৫টি এবং বলিদাপাড়া জিকে ব্রিজ সংলগ্ন এলাকার আম, কাঁঠালসহ ১৫টি গাছ কেটেছে দুর্বৃত্তরা। এঘটনায় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়ার উপ-সহকারী প্রকৌশলী/শাখা কর্মকর্তা অসীম কুমার এবং অপর শাখা কর্মকর্তা পিয়াস আহমেদ বাদি হয়ে জড়িত তিন জনের নামোল্লেকসহ অজ্ঞাত আরও ১২জনের বিরুদ্ধে সরকারী গাছ চুরির অভিযোগ এনে মামলা করেছেন মিরপুর থানায়।
সংশ্লিষ্ট সড়ক ও জনপথ, পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং সামাজিক বন বিভাগ কুষ্টিয়ার কর্মকর্তাদের অভিযোগ স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় প্রকাশ্যে ও রাতের আঁধারে এসব সরকারী গাছ কাটার ঘটনায় সুনির্দিষ্ট অভিযোগে মামলা করেও রোধ করা যাচ্ছে না গাছ কাটা। সরকারী গাছ কাটা বন্ধে দুদক কুষ্টিয়া জেলা কার্যালয়ের সরেজমিন তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশও মানা হয়নি বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদক সূত্রের অভিযোগ।
কুষ্টিয়া সামাজিক বন বিভাগ ভেড়ামারা-মিরপুর অঞ্চলের রেঞ্জ কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, একের পর এক সরকারী গাছ কাটা হচ্ছে, আমরা মামলাও করছি, কিন্তু আইনের ফাঁক ফোকর দিয়ে জড়িতরা রেড়িয়ে এসে আবারও কাটছে। এসব দেখতে গিয়ে অনেক সময় আমরা নিজেরাও স্থানীয় প্রভাবশালীদের বাধার মুখে পড়ি। প্রত্যক্ষভাবে গাছ কাটার সাথে যারা জড়িত তারা কোন কিছুই তোয়াক্কা করছেন না।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়ার উপ-সহকারী প্রকৌশলী/শাখা কর্মকর্তা অসীম কুমার জানান, সরকারী কর্মচারী হিসেবে আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে সরকারী সম্পত্তি রক্ষার চেষ্টা করি। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গাছ কাটারত দূর্বৃত্তদের হাতে নাতে ধরেও স্থানীয় প্রভাবশালীদের নানা হুমকি ও ভয়ভীতির মুখে পড়তে হচ্ছে। এমনকি সরকারী সম্পত্তি বিনষ্টের অভিযোগ এনে মামলা করেও এদের থামানো যাচ্ছে না। গত এপ্রিলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের খালপাড় হতে প্রায় তিন’শ গাছ কাটার অভিযোগে করা মামলায় পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। আসামীরা আদালত থেকে জামিনে এসে নানা হুমকি ধামকি দিচ্ছে। একই ঘটনায় শনিবার রাতেও মামলা করেছি। বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে দিনরাত গাছের গোড়ায় বসে থেকে পাহারা দেয়া কি সম্ভব ?
কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী তানিমুল হক বলেন, সড়ক বিভাগের গাছ রাতের আঁধারে প্রায় কাটছে দুর্বৃত্তরা। আসলে গাছ কাটা রোধে আইন প্রয়োগের গতি খুবই মন্থর হওয়ায় এসব হচ্ছে। গত এপ্রিলে কুষ্টিয়া-মেহেরপুর সড়কের প্রায় সাড়ে চার’শ গাছ চুরির অভিযোগে করা মামলাটি এখনও তদন্তাধীন আছে। শুনেছি আসামীরা নানা ভাবে চেষ্টা করছে মামলটি মিমাংশা করার জন্য। কিন্তু সরকারী সম্পত্তি চুরির মামলা কি কেউ মিমাংশা করা এখতিয়ার রাখে ? পুলিশের তদন্তে এমন কিছু ব্যক্তির নাম উঠে এসেছে; যে কারণে পুলিশও চাচ্ছে মামলাটি মিমাংশা হোক।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মিরপুর থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, গত এপ্রিলে সরকারী গাছ চুরির অভিযোগে করা মামলাটির তদন্ত প্রায় শেষের দিকে। কিন্তু তদন্তে এমন সব ব্যক্তির নাম জড়িত বলে উঠে এসেছে তাতে আমরা নিজেরাও বেশ বিব্রত হচ্ছি। ওই সব অভিযুক্তদের পক্ষ থেকেও মামলাটি মিমাংশার চাপ আছে। পুলিশের ওই প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হলে তিনি যেই হোন ঝামেলায় পড়ে যাবেন।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী পিযুষ কৃষ্ণ কুন্ডু বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৪জেলার কৃষি ও মৎস খাতকে উজ্জিবিত করার পাশাপশি জীব বৈচিত্র রক্ষায় বনায়নসহ নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন করে চলেছে। সরকারী অর্থ ব্যয়ে বাস্তবায়িত বনায়ন কেউ ধ্বংস করুক এটা হতে পারে না। গাছ কাটার অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। এখন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে মিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল কালাম জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেচখাল পাড়ের গাছ কাটার অভিযোগে শনিবার রাতে ৩জনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাত ৮/১০জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। কর্তনকৃত গাছ উদ্ধার করলেও এঘটনায় এখনও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। ইতোপূর্বে গত এপ্রিল মাসে কুষ্টিয়া-মেহেরপুর সড়কের গাছ কাটার ঘটনায় পানি উন্নয়ন বোর্ড, সড়ক বিভাগ ও সামাজিক বনায়ন বিভাগ কুষ্টিয়ার পক্ষ থেকে করা ৩টি মামলা এখনও তদন্তাধীন আছে। তদন্ত শেষ হলে আদালতে প্রতিবেদন দেয়া হবে। ওই মামলার আসামীরা আদালত থেকে জামিনে আছেন।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।