মো:ইউনুছ, টাঙ্গাইল:
টাঙ্গাইলের প্রায় সব জায়গায় এখন সরিষার আবাদ হয়েছে। আর সরিষা খেতের চারপাশে সারিবদ্ধভাবে মৌবাক্স স্থাপন করা হয়েছে। এসব বাক্সে পালিত মৌমাছি সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে মৌবাক্সে জমা করছে। এই মধু সংগ্রহ করছেন মৌচাষিরা। মানিকগঞ্জের পরই দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সরিষার আবাদ হয় টাঙ্গাইল জেলায়।
মৌচাষে চাষিরা একদিকে যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। অন্যদিকে দূর হচ্ছে বেকারত্ব। এমনকি অনেক শিক্ষার্থীই লেখাপড়ার পাশাপাশি লাভবান হওয়ার জন্য মৌচাষ করছে। এ মধু এখন দেশের বিভিন্ন স্থানসহ বিদেশেও বিক্রি হচ্ছে।
তবে চাষিদের দাবি সরকারের সহযোগিতা পেলে তারা এ মধুচাষে আরো লাভবান হতেন।
সরিষা ফুলের মধু যেমন খাঁটি তেমনি সুস্বাদু। মধু উচ্চমাত্রার প্রাকৃতিক এন্টিবায়োটিক হওয়ায় এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানি ও ক্রেতাদের কাছে।
জেলার বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে সরেজমিনে দেখা যায়, সরিষা খেতের পাশে সারিবদ্ধভাবে মৌবাক্স স্থাপন করা হয়েছে। আর মৌমাছিরা সরিষা থেকে মধু আহরণ করে বাক্সে জমা করছে। এই বাক্স থেকে চাষিরা মধু সংগ্রহ করে সময় পার করছেন। মৌবাক্সের চারদিকে মৌমাছি ঘোরাঘুরি করছে। ওই স্থানে মৌমাছিদের মিলন মেলা তৈরি হয়েছে।
বিগত ১০ বছর ধরে মৌচাষ করেন টাঙ্গাইল পৌর এলাকার সন্তোষ ঘোষপাড়া এলাকার আমিনুর রহমান। তিনি এ পেশায় লাভবান উল্লেখ করে বলেন, প্রতি বছরই আমি মৌবাক্স স্থাপন করেছি। এখন পর্যন্ত আমি (ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি ১ সপ্তাহ) প্রায় দেড় টন মধু সংগ্রহ করতে পারি । সরিষা খেতে বছরে ৪ মাস মধু আহরণ করে থাকি। অন্য ৬ মাস কৃত্রিম পদ্ধতিতে চিনি খাইয়ে মৌমাছিদের রাখা হয়। আশা করছি আমার প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ টাকার মতো লাভ হবে। বিভিন্ন কোম্পানির লোকজন আমাদের কাছ থেকে মধু কিনে নিয়ে যায়।
তিনি বলেন, মূলত ডিসেম্বর থেকে মধু আহরণের উপযুক্ত সময়। তখন জেলায় বিভিন্ন স্থানে ভালো সরিষা ফুল ফোটে। আকার ভেদে একটি বাক্সে ২ থেকে ৪০ কেজি পর্যন্ত মধু পাওয়া যায়। আর প্রতিটি বাক্সে খরচ হয় ২ থেকে ১২ হাজার টাকা। এ ছাড়া আমি লিচু থেকেও মধু সংগ্রহ করে থাকি।
যদি সরকার আমাদের সহযোগিতা করেন তাহলে আমরা মৌচাষে আরো লাভবান হতাম।
এ ব্যাপারে কলেজ শিক্ষার্থী শহিদুল ইসলাম বলেন, আমি লেখাপড়ার পাশাপাশি এ পেশায় নিয়োজিত। এতে আমরা বেশ লাভবান হচ্ছি। আমাদের দেখে অনেকেই সরিষা থেকে মৌবাক্সে মধু আহরণে আগ্রহী হচ্ছেন। সরিষা থেকে মধু আহরণে একদিকে যেমন বেকারত্ব দূর হয়। অন্যদিকে অল্প সময়ের মধ্যে লাভবান হওয়া যায়।
টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় এ বছর সরিষা সাড়ে ৪১ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তি/বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মধু আহরণ করা হচ্ছে।
বিস্তীর্ণ এলাকার কৃষিজমিতে সরিষা খেতে মৌবাক্স স্থাপন করেছে মৌচাষিরা। এতে একদিকে মৌচাষিরা কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে মধু সংগ্রহ করে লাভবান হচ্ছেন। অন্যদিকে স্থানীয় কৃষিজমিতে সরিষার ফলনও অন্য বছরের তুলনায় কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এখানকার মধু দেশের বিভিন্নস্থান ছাড়াও বিদেশে চাহিদা রয়েছে।
সরিষা খেতের পাশে মৌচাষ করলে সরিষার পরাগায়নের ফলে আবাদ শতকরা ১৫ থেকে ২০ ভাগ ফলন বৃদ্ধি পায়।
Related
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।