স্টার্টআপ ওয়ার্ল্ড কাপের চূড়ান্ত পর্বে গেজ টেকনোলজিস
১৫ ফেব্রু ২০২০, ১১:৩৫ অপরাহ্ণ

বাংলাদেশে স্টার্টআপ এবং ভেঞ্চার ক্যাপিটালবান্ধব ইকোসিস্টেম তৈরিতে ভিশন ২০২৫ উদ্বোধন করা হয়েছে। শনিবার বিশ্বের বৃহত্তম স্টার্টআপ প্রতিযোগিতা স্টার্টআপ ওয়ার্ল্ড কাপের বাংলাদেশ অঞ্চলের চূড়ান্ত পর্বে এই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। যেখানে ২০২৫ সালের মধ্যে ৪টি বিষয়বস্তুর উপর নির্ভর করে বাংলাদেশের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম বর্তমানের চেয়ে সাতগুণ উন্নীত করা হবে।
বর্তমানে শুধুমাত্র একটি এক বিলিয়ন ডলারের কোম্পানি (ইউনিকর্ন) রয়েছে এবং ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশে অন্তত ৫টি বিলিয়ন ডলার মূল্যমানের কোম্পানি অথবা ইউনিকর্ন তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। দেশে বর্তমানে এক দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলারের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম রয়েছে, যা ১০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এসব স্টার্টআপগুলো বর্তমানে প্রত্যক্ষভাবে দেড় লাখ এবং পরোক্ষভাবে প্রায় সাত লাখ কর্মসংস্থানের সুযোগ করেছে। ভিশন ২০২৫ এ ২০২৫ সাল নাগাদ প্রত্যক্ষভাবে ১০ লাখ এবং পরোক্ষভাবে ৫০ লাখ কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
মুজিববর্ষকে সামনে রেখে এবছর বৃহৎ পরিসরে ও জাঁকজমকভাবে স্টার্টআপ ওয়ার্ল্ড কাপ ২০২০, বাংলাদেশ যৌথভাবে আয়োজন করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইসিটি ডিভিশন, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল অ্যান্ড প্রাইভেট ইক্যুইটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ভিসিপিয়াব), ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স কর্পোরেশন (আইএফসি) এবং পাওয়ার্ড বাই ইজেনারেশন। কৌশলগত অংশীদার হিসেবে স্টার্টআপ বাংলাদেশ, নলেজ পার্টনার হিসেবে বুয়েটসহ এই আয়োজনে অংশীদারদের মধ্যে ছিলো সিঙ্গাপুর ভেঞ্চার ক্যাপিটাল অ্যান্ড ইক্যুইটি অ্যাসোসিয়েশন (এসভিসিএ), অ্যানুয়াল ইনভেস্টমেন্ট মিটিং (এআইএম)- ইউএই, বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ, টাই ঢাকা, এন্টারপ্রেওনার্স অর্গানাইজেশন, এফএনএস মিডিয়া, আমেরিকান অ্যালুমনি অ্যাসোসিয়েশন এবং চাকরি খুঁজবো না, চাকরি দেবো। মিডিয়া পার্টনার হিসেবে ছিলো আরটিভি। এছাড়া এই আয়োজনে প্লাটিনাম স্পন্সর হিসেবে রকমারি ও ইভ্যালি এবং গোল্ড স্পন্সর হিসেবে ছিলো চালডাল, এসএসএল ওয়্যারলেস এবং অগ্রণী ব্যাংক।
শনিবার রাজধানীর রেডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেনে আয়োজিত স্টাটআপ ওয়ার্ল্ড কাপ ২০২০, বাংলাদেশের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ‘ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফর ডাবল ডিজিট গ্রোথ’ শীর্ষক সেশনে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প এবং বিনিয়োগ উপদেষ্ঠার সামনে লক্ষ্যমাত্রাটি তুলে ধরেন পেগাসাস টেক ভেঞ্চারস এর জেনারেল পার্টনার, ভিসিপিয়াব চেয়ারম্যান ও ইজেনারেশন গ্রুপের চেয়ারম্যান শামীম আহসান। ঘোষণার পাশাপাশি এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ১০টি পয়েন্ট প্রস্তাব করা হয়।
প্রস্তাবনার মধ্যে রয়েছে নীতিমালা, অর্থায়ন, উদ্ভাবন এবং কান্ট্রি ব্র্যান্ডিং ফ্রেমওয়ার্ক। শামীম আহসান জোর দিয়ে বলেন যে, বিশ্বব্যাপী ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ড সাধারণত একটি বিনিয়োগ ফান্ড যা ট্যাক্স ছাড়মুক্ত সুবিধা পেয়ে থাকে। বাংলাদেশেও প্রভিডেন্ট ফান্ডস, গ্রাচ্যুইটি ফান্ডস এবং ইনস্যুরেন্স কোম্পানি যাতে অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ইন্সট্রুমেন্ট যেমন ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ডে বিনিয়োগ করতে পারে সেই লক্ষে নীতিমালা পরিবর্তন করে উক্ত সুবিধা দেয়া সম্ভব। এছাড়া ব্যাংকিং এবং নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ফান্ড অব ফান্ডস সুবিধার জন্যও নীতিমালা পরিবর্তনের প্রস্তাব করেন তিনি।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক ক্যাপিটাল ইনভেস্টমেন্টের জন্য ফান্ড অব ফান্ডস এবং গ্রোথ স্টেজ কোম্পানির ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের জন্য স্থানীয় ব্যাংক কর্তৃক একই ধরনের ফান্ড অব ফান্ডস সুবিধা প্রদান করা হয়। শামীম আহসান তার মূল প্রবন্ধে বুয়েট ও আইবিএর সাথে ইন্ডাস্ট্রির মেলবন্ধনের মাধ্যমে দক্ষতা উন্নয়ন, সরকারের নেতৃত্বে উদ্ভাবন, সিলিকন ভ্যালি, লন্ডন, টোকিও এবং সিঙ্গাপুরে আন্তর্জাতিক ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ও প্রাইভেট ইক্যুইটির সাথে মিলে রোডশোর মাধ্যমে কান্ট্রি ব্র্যান্ডিং এবং স্টার্টআপ ওয়ার্ল্ড কাপ দক্ষিণ এশিয়া ও স্টার্টআপ ওয়ার্ল্ড কাপ এশিয়া আয়োজনের প্রস্তাব করেন।
স্টার্টআপ ওয়ার্ল্ড কাপ বাংলাদেশ পর্বে বিজয়ী হয়েছে ‘গেজ টেকনোলজিস’, যারা সিলিকন ভ্যালিতে স্মার্টআপ ওয়ার্ল্ড কাপ ২০২০ এর চূড়ান্ত পর্বে প্রতিযোগিতায় অংশ নিবে এবং এক মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ পুরস্কার লাভের জন্য লড়বে। এছাড়া তারা সংযুক্ত আরব আমিরাতে অ্যানুয়াল ইনভেস্টমেন্ট মিটিংয়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পাবে। এছাড়া প্রথম ও দ্বিতীয় রানার্সআপ নির্বাচিত হয়েছে যথাক্রমে ‘অল্টারইয়্যুথ’ এবং ‘ট্রাক লাগবে?’। এছাড়া চতুর্থ ও পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে পোষাপেটস ও কুকআপস । সেরা ৫ স্টার্টআপকে সিলিকন ভ্যালিতে নিয়ে যাওয়া হবে এবং অংশগ্রহণকারী সকল স্টার্টআপ আইসিটি ডিভিশন পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পাবে।
অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এমপি বলেন, আমরা মুজিববর্ষ পালন করছি। এই উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছেন, যেখানে স্টার্টআপ খাতও জড়িত রয়েছে। আমি মনে করি স্টার্টআপ খাত বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে ও ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করবে। বাঙালি উদ্ভাবনী জাতি, আমরা আজ যা ভাবি সেটি কাল বাস্তবায়ন করি। আমরা প্রত্যাশা করি, বেসরকারি খাতের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে আমরা আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবো। সেজন্য স্টার্টআপসহ বেসরকারি খাতকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করা হবে।
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প এবং বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, সরকার এই খাতের জন্য নিজস্ব উদ্যোগ নিচ্ছে এবং এই খাতের উন্নয়নে সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যেই আমাদের দেশে সফল স্টার্টআপ গড়ে উঠেছে, যার অন্যতম উদাহরণ হিসেবে বিলিয়ন ডলারের ইউনিকর্ন বিকাশ। বাংলাদেশে আগামী ৫ বছরের মধ্যে বিনিয়োগবান্ধব স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম গড়ে তোলার জন্য এখানে ঘোষিত ভিশন ও লক্ষ্যমাত্রাকে স্বাগত জানাই।