অতিথি পাখি রক্ষায় বালু উত্তোলন বন্ধের দাবি - BANGLANEWSUS.COM
  • নিউইয়র্ক, দুপুর ১:২৯, ৮ই ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

অতিথি পাখি রক্ষায় বালু উত্তোলন বন্ধের দাবি

STAFF USBD
প্রকাশিত ডিসেম্বর ৬, ২০২০
অতিথি পাখি রক্ষায় বালু উত্তোলন বন্ধের দাবি

তমাল ভৌমিক, নওগাঁ :
নওগাঁর মহাদেবপুরের আত্রাই নদে মধুবনে এলাকায় আসা অতিথি পাখিদের রক্ষায় প্রতি বছরের মতো কাজ শুরু করেছেন স্থানীয় প্রাণ ও প্রকৃতি সংগঠন। অতিথি পাখিদের বিচরণ করা আত্রাই নদে লীজ না দেওয়া ওই অংশ থেকে লাখ লাখ টাকার অবৈধ্যভাবে বালু উত্তোলন করে চলেছেন। স্থানীয়দের দাবিতে প্রশাসন মধুবনে এলাকায় সরকারের ঘোষিত মৎস্য অভয়াশ্রম ও পাখি কলনি বালু মহল লীজ বন্ধ রাখে। তারপরও প্রশাসনের নাকের ডগায় একটি প্রভাবশালী চক্র ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে অবৈধ্যভাবে দিনরাত বালু উত্তোলন করছে। এর প্রতিবাদ করলেই পুলিশ প্রশাসনের মাধ্যমে হয়রানি করা হয় বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। বালু উত্তোলনসহ দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে।
জানা গেছে, গত ১০/১২ বছর থেকে সাইবেরিয়া, মঙ্গলিয়াসহ শীত প্রধান দেশ থেকে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার আত্রাই নদের মধুবন, কুঞ্জবনসহ কয়েকটি এলাকায় প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা জুড়ে সড়ালি, পানকৌড়ি, ডুবরিসহ বিভিন্ন প্রজাতির হাজার হাজার অতিথি এসে পাখি বিচরণ করে। এসব পাখিদের রক্ষায় স্থানীয় প্রাণ ও প্রকৃতি সংগঠনসহ স্থানীয়রা কাজ করে আসছে। এসব এলাকা পাখিদের অভয়াশ্রমের জন্যে প্রশাসনের কাছে ওই এলাকার বালু মহল লীজ বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছেন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এই দাবি অংশ হিসেবে চলতি বছরে প্রশাসন লীজ না দিলেও প্রশাসনের নাকের ডগায় একটি প্রভাবশালী মহল ড্রেজার মেশিন দিয়ে নামে অবৈধ্যভাবে বালু উত্তোলন করে আসছিল। গত কয়েকদিন আগে উপজেলা প্রশাসন থেকে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে বালু উত্তোলন বন্ধের নির্দেশ দিন দেন।
প্রাণ ও প্রকৃতি সংগঠনের সভাপতি কাজি নাজমুল হক জানান, সাঈদ হাসান শাকিল নদের অন্য অংশে লীজ নিয়েছেন। সরকারি ভাবে মধুবন এলাকায় সরকারি ভাবে লীজ না দিলেও সাঈদ হাসান শাকিল ও তার পার্টানার মোয়াজ্জেম হাজি একটি প্রভাবশালী মহলের যোগসাজশে পুলিশের সহযোগিতায় স্থানীয়দের ভয়ভীতি দিয়ে বালু উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে। এর প্রতিবাদ করলে থানা পুলিশের সহযোগিতায় থানায় ডেকে নিয়ে স্থানীয়দের ভয়ভীতি দেন। এতে অনেকেই এর প্রতিবাদ জানাতে সাহস পান না।
স্থানীয় মিজানুর রহমান জানান, পাখিদের ঢিল ছুড়ে তাড়িয়ে দিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে উপজেলা প্রশাসন ও থানা সংলগ্ন এই পাখি কলনি থেকে বালু দস্যুরা অবৈধ্যভাবে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে থেকে। কিন্তু প্রশাসন নীরবভূমিকা পালন করছে।
শামছুউদ্দিন মন্ডল হানান জানান, বাঁশ দিয়ে পাখি কলনি করা হয়েছে সেই অংশটি উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে ঘোষিত মাছের অভয়আশ্রম। এখানেই পাখি এসে বসে প্রতি বছর। তারপরও ওই মহল অবৈধ্যভাবে ওই প্রভাবশালীরা লাখ লাখ টাকার বালু উত্তোলন করে আসছে।
সংগঠনের সদস্য মুসছুর সরকার জানান, প্রতি বছর আত্রাই নদের ওই এলাকায় অবৈধ্যভাবে ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করায় জমিগুলো নদের মধ্যে বিলিন হয়ে যাচ্ছে অন্যদিকে পাখিদের বিচরণ অসুবিধা হচ্ছে। পাখি তাড়িয়ে দিয়ে উত্তোলনকারিরা প্রশাসন ও রাজনৈতিক মহলের যোগসাজশে অবৈধ্য ভাবে দীর্ঘ দিন থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করছেন। তাদের সংগঠন ও স্থানীয়রা দ্রুত এই অবৈধ্য বালু উত্তোলন বন্ধে প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়ে আসছেও কার্যকরি তেমন কাজ হচ্ছে না।
পাখি তাড়ানোর অভিযোগ অস্বীকার করে ঠিকাদার সাঈদ হাসান শাকিলের ম্যানেজার কায়েম উদ্দিন জানান, কয়েকদিন আগে প্রশাসনের বালু উত্তোলন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। থাকারপরও বালু উত্তেলন কি ভাবে তোলা হচ্ছে এমন প্রশ্নে ম্যানেজার জানান, মূল ঠিকাদার জানেন।
মূল ঠিকাদার সাঈদ হাসান শাকিল জানান, মূলত বালু ব্যবসা দেখেন তার পার্টনার মোয়াজ্জেম হাজি। লীজ নেওয়া অংশ ছাড়া যদি অন্য স্থান থেকে বালু উত্তোলন হয়ে থাকে তার সাথে কথা বলে অবৈধ্য বালু উত্তোলন বন্ধ করা হবে। ঠিকাদার সাঈদ হাসান শাকিলের পার্টনার মোয়াজ্জেম হাজি স্থানীয়দের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তারা দীর্ঘ দিন থেকে ওই অংশ থেকে বালু উত্তোলন করে আসছেন। হঠাৎ করে শত্রুতামূলক পাখি কলনি ঘোষণা করা হয়েছে।
মহাদেপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নজরুল ইসলাম জুয়েল জানান, পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগকারিদের অভিযোগ সত্য নয়।
মহাদেবপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা একেএম জামান জানান, ‘মা’ মাছ রক্ষায় ওই অংশকে মৎস্য অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়েছে। প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করে যদি আবারও বালু করা হচ্ছে তা জানা নেই।
মহাদেবপুর উপজেলার সহকারি কর্মকর্তা (ভূমি) আসমা খাতুন জানান, গত কয়েকদিন আগে সেখানে উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হয়েছিল এবং লীজ বহিরভূত ওই অংশ থেকে বালু উত্তোলন না করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আবার বালু উত্তোলন করা হলে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্র্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, ওই এলাকায় বালু উত্তোলনের সুযোগ নেই। তারপরও ওই এলাকা থেকে বালু উত্তোলনের কেউ অভিযোগ করেননি। অভিযোগ করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।