নামাজ অন্তরে প্রশান্তির শ্রেষ্ঠতম উপায় - BANGLANEWSUS.COM
  • নিউইয়র্ক, রাত ৩:৫৪, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ


 

নামাজ অন্তরে প্রশান্তির শ্রেষ্ঠতম উপায়

ADMIN, USA
প্রকাশিত ডিসেম্বর ৬, ২০২০
নামাজ অন্তরে প্রশান্তির শ্রেষ্ঠতম উপায়

মানবজাতিকে আল্লাহতায়ালা ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছেন। ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর আনুগত্য প্রকাশ করা হয় এবং আল্লাহর নৈকট্যও লাভ করা যায়। আল্লাহর প্রতি আনুগত্য প্রকাশের সর্বশ্রেষ্ঠ উপায় হলো নামাজ। দৈনিক পাঁচ ওয়াক্তে পাঁচবার বান্দা আল্লাহর সামনে উপস্থিত হয়। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইসলামের যে পাঁচটি স্তম্ভ নির্ধারণ করেছেন, নামাজ হচ্ছে অন্যতম স্তম্ভ। নামাজ এমন একটি ইবাদত যার সময় নির্ধারিত, শরিয়তে সুস্পষ্টভাবে বিবৃত এবং যার মাধ্যমে দোয়া প্রার্থনা ও ক্ষমা চাওয়া হয়।

নামাজ আদায় মানে আল্লাহর সাথে কথা বলা। প্রতিটি ওয়াক্তে বান্দা ঘোষণা দেয়- ‘হে আল্লাহ! তুমিই মহান, তুমিই শ্রেষ্ঠ, আমি তোমার কাছেই ফিরে এসেছি। অন্য কারো কাছে নয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, আমার স্মরণে নামাজ কায়েম করো’ (সুরা তাহা, আয়াত-১৪)।

নামাজের প্রতিটি স্তরে স্তরে ভিন্ন ভিন্ন অঙ্গ-ভঙ্গি প্রকাশের মাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন জিকির উচ্চারণ করা হয়ে থাকে। যেমন : কিয়াম করা, রুকু করা, সিজদা করা ইত্যাদি। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, বান্দা তার প্রতিপালকের সবচেয়ে বেশি নৈকট্য লাভ করে যখন সে সিজদা অবস্থায় থাকে। অতএব, তোমরা সিজদা অবস্থায় আল্লাহর নিকট বেশি বেশি প্রার্থনা করো (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং-১০৮৩)। অন্যত্র রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন নামাজে দাঁড়ায়, তখন সে তার প্রতিপালকের সাথে একান্তে কথা বলে এবং তার প্রতিপালক তার ও কিবলার মধ্যখানে বিরাজ করে। ফলে বান্দার প্রত্যেকটি সিজদাহ আদায় হয় আল্লাহর কুদরতি কদমে। বান্দার দাঁড়ানো হয় আল্লাহর সামনে। বান্দার বসা হয় আল্লাহর একান্ত সান্নিধ্যে। সঠিক নিয়ম মেনে তথা আল্লাহ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নির্দেশিত পন্থায় সালাত আদায় করলে শয়তান কোনো দিন কাবু করতে পারে না। কারণ আল্লাহতায়ালা সালাত ফরজ করেছেন বান্দাকে অন্যায়, অবিচার, জুলুম ও অশ্লীলতা ইত্যাদি থেকে দূরে সরিয়ে রেখে পূতঃপবিত্র করতে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর আপনি নামাজ কায়েম করুন। নিশ্চয় নামাজ অশ্লীল ও গর্হিত কাজ থেকে বিরত রাখে। আর আল্লাহর স্মরণই সর্বশ্রেষ্ঠ’ (সুরা আনকাবুত, আয়াত-৪০)।

পরিবার পরিজনকে সালাতের নির্দেশ প্রদান : সালাত আদায়ের ব্যাপারে আল্লাহতায়ালা খুব গুরুত্ব প্রদান করেছেন। যা অন্য ইবাদতের ক্ষেত্রে দেখা যায় না। সালাত নিজের ওপর যেমন ফরজ তেমনি পরিবার পরিজনের ওপর বাধ্যতামূলকভাবে আদায় করা ফরজ। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আপনি আপনার পরিবারের লোকদের নামাজের আদেশ দিন এবং নিজেও এর ওপর অবিচল থাকুন। আমি আপনার কাছে কোনো রিজিক চাই না। আমিই আপনাকে রিজিক দিই এবং আল্লাহভীরুতার পরিণাম শুভ।’ (সুরা তাহা, আয়াত-১৩২) হজরত ইবরাহিম (আ.) আল্লাহর কাছে দোয়া করে বলেছিলেন, ‘হে আমার পালনকর্তা, আমাকে নামাজ কায়েমকারী করুন এবং আমার সন্তানদের মধ্যে থেকেও। হে আমাদের পালনকর্তা! কবুল করুন আমাদের দোয়া।’ (সুরা ইবরাহীম, আয়াত-৪০)

কেয়ামতের মাঠে সর্বপ্রথম নামাজের হিসাব হবে : পৃথিবীতে মানুষ বিভিন্ন ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাত, মুস্তাহাব ইত্যাদি বিধিবিধান পালন করে থাকেন। সাথে কিছু কিছু বান্দার হক আদায় করে থাকেন। যার প্রতিটির সাওয়াব বা প্রতিদান বান্দাকে দেওয়া হবে এবং বান্দার প্রত্যেক কাজকর্মের হিসাব আল্লাহতায়ালা হাশরের ময়দানে নেবেন। আল্লাহয়াআলা বলেন, ‘পাঠ করো তুমি তোমার কিতাব, আজ তোমার হিসাব গ্রহণের জন্যে তুমিই যথেষ্ট।’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত-১৪) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘কিয়ামতের দিন তার আমলের মধ্যে সর্বপ্রথম যে বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে তা হচ্ছে তার নামাজ। যদি তার নামাজ সুষ্ঠু হয়, তবে সে সফল ও কৃতকার্য হবে। আর যদি তার নামাজ নষ্ট হয় তবে সে ব্যর্থ ক্ষতিগ্রস্ত হবে’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-৮৬৪)।

নামাজ ব্যক্তিকে পাপমুক্ত করে : নামাজ আদায়ের মাধ্যমে বান্দা পাপমুক্ত হয়ে যায়। কারণ, নামাজ এমন একটি ইবাদত যাতে বান্দা শরীরের সবকয়টি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আল্লাহর সান্নিধ্য উপস্থিত হয়। আল্লাহ বান্দার দিকে করুণার দৃষ্টি দেন। ফলে বান্দার গুনাহ মাফ করে দেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যদি তোমাদের বাড়ির সামনে একটি নদী থাকে এবং উক্ত নদীতে যদি কোনো ব্যক্তি প্রতিদিন পাঁচবার গোসল করে, তবে কি তার শরীরে কোনো ময়লা থাকবে? সাহাবায়ে কেরাম বললেন, না। এতে তার শরীরে কোনো ময়লা অবশিষ্ট থাকবে না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ঠিক এমনই। যার দ্বারা আল্লাহতায়ালা যাবতীয় গুনাহ ক্ষমা করে দেন’ (সহিহ বুখারি, হাদিস নং-৫০৩)। সালাত আদায়ের মাধ্যমে আদায়কারীর গুনাহসমূহ ক্ষমা হয়ে যায়। তবে শর্ত হলো, ওই ব্যক্তি যেন কবিরা গুনাহগার না হয়। কেননা কবিরা গুনাহ মাফ করার জন্য তওবা প্রয়োজন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কোনো মুসলিম ব্যক্তি ফরজ সালাতের সময় হওয়ার পর উত্তমরূপে অজু করে পরিপূর্ণ বিনয় ও একাগ্রতার সাথে ভালোভাবে রুকু সিজদাসহ সালাত আদায় করবে কবিরা গুনাহ না করার শর্তে তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করা হবে। আর সালাতের এ বরকত বা সুফল সবসময়ের জন্য অব্যাহত থাকবে (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং-২২৮)।

নামাজ কীভাবে আদায় করতে হবে : এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করল তখন রাসুলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদের একপ্রান্তে বসা ছিলেন। লোকটি সালাত আদায় করল। তারপর লোকটি এসে নবীজিকে সালাম দিলেন। তিনি লোকটির সালামের জবাব দিয়ে বললেন : তুমি যাও, সালাত আদায় করে এসো। কেননা তুমি সালাত আদায় করোনি। লোকটি পুনরায় সালাত আদায় করল। তারপর, এসে সালাম দিল। তিনি (সা.) তার সালামের জবাব দিয়ে বললেন : তুমি যাও, পুনরায় সালাত আদায় করে এসো। কেননা তুমি তো সঠিকভাবে সালাত আদায় করোনি। তৃতীয়বার একই কথা বললে লোকটি বললেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! আমি কীভাবে সালাত আদায় করব তা আমাকে বলে দিন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি সালাতে দাঁড়াবার পূর্বে ভালো করে অজু করে নেবে। এরপর তাকবীরে তাহরীমা বলে সালাত শুরু করবে। এরপর কোরআন শরিফ থেকে যতটুকু তোমার পক্ষে সহজ ততটুকু পাঠ করবে। এরপর রুকু থেকে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়াবে। তারপর সিজদা করবে যাতে সিজদায় প্রশান্তি আসে। এরপর সিজদা থেকে উঠে স্থিরভাবে বসবে এবং পুনরায় সিজদায় গিয়ে স্থিরভাবে সিজদা করবে। অন্য বর্ণনায় রয়েছে রুকু থেকে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়াবে (বুখারি ও মুসলিম)।

জামাতে নামাজ আদায়ের প্রতি গুরুত্ব : জামাতে নামাজ আদায় করা ওয়াজিব। আর জামাত থেকে দূরে থাকা ঈমান ও ইসলামের প্রতি অবহেলার বহিঃপ্রকাশ। জামাতে সালাত আদায়ের মাধ্যমে পরস্পরের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ প্রতিষ্ঠিত হয়। এক ইমামের পেছনে সালাত আদায় করার কারণে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য সুদৃঢ় হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জামাতে সালাত আদায় করার ফজিলত একাকী সালাত আদায় করার চেয়ে সাতাশ গুণ বেশি (বুখারি-মুসলিম)।

একাগ্রতার সঙ্গে নামাজ আদায়ের বাধ্যবাধকতা : নামাজই একমাত্র ইবাদত, যার মাধ্যমে বান্দাহ মেরাজ লাভ করার সুযোগ থাকে। আর এই সালাত আদায়ের জন্য সবার আগে প্রয়োজন একাগ্রতা। একাগ্রতা নিয়ে সালাত আদায় করলে অন্তরে প্রশান্তি আসে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই ওই সব ঈমানদারগণ সফলকাম হয়েছে, যারা খুশু-খুজুর (বিনয়-নম্রতার) সাথে সালাত আদায় করে (সুরা মুমিনুন, আয়াত-১, ২)। অর্থাৎ নামাজে ইচ্ছাকৃতভাবে অন্য কোনো কিছুকে কল্পনা না করা, সাথে সাথে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকেও স্থির রাখা। খুশু-এর ব্যাখ্যায় হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আল্লাহর ভয়ে নিজেকে ছোট মনে করে সালাত আদায় করা এবং আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্ত্বকে অন্তরের মধ্যে ধারণ করে আল্লাহকে ভয় করা।

নামাজের প্রতি নবীজির ব্যাকুলতা : নামাজের ওয়াক্ত হওয়ার সাথে সাথে সালাত আদায় করার জন্য প্রিয়নবী (সা.) অত্যন্ত ব্যাকুল হয়ে যেতেন। একদা নবী কারীম (সা.) বেলাল (রা.) কে বললেন, হে বেলাল নামাজের ইকামত দাও। এর দ্বারা আমাদের অন্তরকে প্রশান্তিতে পরিপূর্ণ করে দাও (আবু দাউদ, হাদিস নং-৪৯৮৫)।

নামাজে অলসতা পরিহার করা জরুরি : নামাজ আদায়ের সময় সালাতের গুরুত্ব অনুধাবন করে সালাত আদায় করতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো অলসতা ও লোক দেখানো মনোভাব পোষণ করা যাবে না। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় মুনাফেকরা আল্লাহর সঙ্গে ধোঁকাবাজি করে। তিনি তাদের ধোঁকায় ফেলে শাস্তি দেন এবং তারা যখন সালাতে দাঁড়ায় তখন অলসভাবে দাঁড়ায়, লোক দেখানোর জন্য। তারা আল্লাহকে অল্পই স্মরণ করে’ (সুরা নিসা, আয়াত-১৪২)। আল্লাহতায়ালা আরো বলেন, ‘দুর্ভোগ সেই সালাত আদায়কারীদের, যারা তাদের সালাত সম্পর্কে উদাসীন, যারা লোক দেখানোর জন্য তা করে।’ (সুরা মাউন, আয়াত-৪, ৫, ৬)। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তি সে, যে নামাজে চুরি করে। সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন, নামাজে কীভাবে চুরি হয়? তিনি বললেন রুকু সেজদাহকে যথাযথভাবে আদায় না করা। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং-৩১০)

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।