নিউজ ডেস্ক, নিউইয়র্ক: হঠাৎ একদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নজরে এলো নওগাঁ লিখিয়ে সাহিত্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক, লেখক ও লিখিয়ে প্রকাশনীর কর্র্ণধার রবিউল ফিরোজের আঁকুতি। তাদের গ্রামে একটি অবহেলিত প্রাচীন মসজিদ রয়েছে। সেই মসজিদটি ঠিক কবে বা কে নির্মাণ করেছিল, এই তথ্য তার পিতা, পিতামহ বা নিজ গ্রামসহ আশেপাশের এলাকার কেউ বলতে পারেনা। গ্রামের বায়োজ্যেষ্ঠদের মুখের কথার ভিত্তিতে ধারণা করা হয়, মসজিদটি পাঁচশ বছরেরও বেশি পুরাতন।এই মসজিদকে কেন্দ্র করে লোকশ্রুতি আছে যে, কোন এক রাতের মধ্যেই নাকি মসজিদটিকে নির্মাণ করা হয়েছিল। শেষে মসজিদটির বর্তমান অবস্থার বেহাল দশা ও আর্থিক সংকটের কারণে পুনঃ নির্মাণ বা সংস্কার করা সম্ভব হচ্ছেনা জানিয়ে লেখা শেষ করেছেন। আমি মসজিদটির ছবিগুলো বেশ ভালোভাবে খেয়াল করলাম। তিন গুম্বজওয়ালা মসজিদ। মধ্যযুগীয় অন্যসব স্থাপনার মতই। পাশের উচু মিনারের ছবিতে আমার চোখ আটকে গেল। অপরূপ কারুকার্য করা। মিনারটা আর একটু ভালোভাবে খেয়াল করতেই সন্দেহের উদ্বেগ জন্মালো। উচু মিনারটি মসজিদের নয়। কেননা মিনারটিতে অসংখ্য প্রাণীর প্রতিকৃতি। নিশ্চয়ই এটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মঠ।
মঠ বলতে এমন একটি অবকাঠামোকে বুঝানো হয় যেখানে কোন এক বিশেষ সম্প্রদায়ের ব্যক্তিবর্গ ধর্মীয় কারণে অবস্থান করেন এবং সেখানে উক্ত ধর্মীয় বিভিন্ন গুরুগণ উপদেশ প্রদান ও শিক্ষাদান করেন। মসজিদ ও মঠ পাশাপাশি। বিষয়টা নিয়ে আমার আরও অধিক আগ্রহ জন্মায়। একটু রিসার্চ করা প্রয়োজন। কারণ দুই ধর্মের আলাদা স্থাপনা এক স্থানে কিভাবে থাকতে পারে। ইতিহাসে অনেক ঘটনা আছে যেখানে দেখা যায়, এক ধর্মের আধিপত্য হ্রাসের সঙ্গে সঙ্গে অন্য ধর্মের স্থাপনা উচ্ছেদ কিংবা নিজেদের ধর্মের প্রচার কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এখানে বিষয়টা তার ব্যতিক্রম।
ইসলামগাঁথী গ্রামের এই মসজিদ ও মঠ সম্পর্কে অনলাইনে অনেক সময় ব্যয় করেও কোন তথ্য পেলাম না (সম্পৃতি উইকিপিডিয়া সার্চ করে যে তথ্য পাবেন তা আমার সংযুক্ত করা)। রবিউল ফিরোজের সঙ্গে কথা বলে মসজিদ ও মঠের অবস্থান জেনে নিলাম। নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার বিশা ইউনিয়নে ইসলামগাঁথী গ্রাম। সঠিক তথ্য ও ইতিহাস উৎঘাটন করতে হলে অবশ্যই আগে সেখানে যাওয়া উচিৎ। আমি ইতিহাসবেত্তা কিংবা ইতিহাসের ছাত্রও নই। তবে একটা রিপোর্ট করে যদি বিষয়টা কর্তৃপক্ষের নজরে আনতে পারি। করোনা মহামারী এবং কর্মব্যস্ততায় অনেকদিন আশাটাকে ধামাচাপা দিয়ে রাখলাম। অবশেষে দশদিনের ছুটি মিলতেই ছোট মামাকে নিয়ে ২৩ শে অক্টোবর ২০২০ তারিখে বেরিয়ে পড়লাম ইসলামগাঁথী গ্রামের উদ্দেশ্যে।
নাটোরের সিংড়া বাসস্ট্যান্ড হতে রিজার্ভ মোটরসাইকেল যোগে আত্রাই রোডে চলতে লাগলাম। একটু পরপরই রোডের একপাশে আত্রাই নদী, অন্যপাশে চলনবিল উঁকি দিচ্ছিল। যদিও চলনবিলের পানি কমতে শুরু করেছে। কারণ আমি বর্ষা শেষে এসেছি। তবু এর রুপ লাবণ্যে হৃদয় জুড়িয়ে যায়। ঝিরঝির বৃষ্টি পড়ছিল। কয়েকবছর আগের কথা মনে পড়ে। সেবার এই আত্রাই উপজেলাতেই বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পতিসর কাচারী বাড়ি দেখতে গিয়েছিলাম। সেদিনও আজকের মতো ঝিরঝির হালকা বৃষ্টি হচ্ছিলো। এটাকে মন্দ ভাগ্য বলবোনা। বরং রোমাঞ্চকর যাত্রা বলবো। আজকের আত্রাই নদীর মতো সেদিন পাশে ছিলো কবিতার বিখ্যাত সেই ছোট নদী। নাগর নদী।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।