রাশেদুল হাসান কাজল, ফরিদপুর
১১ বছর বয়সে মা বাবা পরিবারের সাথে দৌড় ঝাপ করে খেলার কথা থাকলেও রবিউলের ভাগ্যটা নির্মম। কারন দীর্ঘ প্রায় ১৮ বছর ধরে শিকলবন্দী অবস্থায় বিদ্যুৎবিহীন জরাজীর্ণ পরিত্যক্ত ঘরে মানবেতর জীবনযাপন করে মানসিক ভারসাম্যহীন রবিউল ইসলাম এখন ২৯ বছরের যুবক।
রবিউল ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ময়না ইউনিয়নের পশ্চিম চরবর্ণী গ্রামের ভ্যানচালক মো. নুরুল ইসলামের ছেলে।
রবিউলের বাবা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘রবিউল আমার বড় ছেলে। ওর বর্তমান বয়স ২৯ বছর। ওর বয়স যখন ১০ বছর তখন হঠাৎ করে একদিন অসুস্থ হয়ে পড়ে। তারপর থেকে আস্তে আস্তে শরীর শুকিয়ে যায়। স্থানীয় ছাড়াও জেলা সদর থেকে শুরু করে বড় বড় ডাক্তার, কবিরাজ, ফকির, হুজুরের সব ধরনের চিকিৎসা করিয়েছি। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি। দিন দিন মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে ভাঙচুর-পাগলামি করার কারণে মাজায় ও পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছি।’
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘একদিন আমার সব ছিল। কৃষিজমি, দুইটা মুদি দোকান এখন তা আর নেই, সব শেষ। ছেলের চিকিৎসা করাতে গিয়ে আমি এখন পথের ফকির। রবিউলসহ আমার তিনটি ছেলে। মেজ ছেলে ইমরান কৃষিকাজ করে, ছোট ছেলে কোরআনে হাফেজ। আমি এখন ভ্যান চালিয়ে কোনোমতে সংসার চালাই।’
নুরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘অভাবের সংসারে কেউ খোঁজ নেন না। কয়েকদিন আগে বোয়ালমারী উপজেলার ছোলনা গ্রামের বাসিন্দা সুমন রাফি খোঁজ পেয়ে কোরবানির মাংস, চাল, ডাল, তেলসহ বিভিন্ন ধরনের খাদ্যসামগ্রী নিয়ে দেখতে এসেছিলেন। নগদ কিছু টাকাও দিয়েছেন। সুমন রাফির কারণে এবার পরিবারের সবাই মিলে কোরবানির মাংস খেয়েছেন। কষ্টের মধ্যেও ঈদটা ভালো কেটেছে। তাকে আল্লাহ যেন অনেক ভালো রাখেন।’
রবিউলের ছোট ভাই ইানামুল হোসেন বলেন, ‘আমি জন্মের পর থেকেই বড় ভাইটার এই অবস্থা দেখে আসছি।বর্তমানে ভাই যে ঘরে থাকে এখানে আমাদের মুদি দোকান, ঘর ছিল। দীর্ঘ প্রায় একযুগেরও বেশি এই ঘরেই আমার ভাইটা এইভাবে পড়ে আছে। ঘরটিতে নেই কোনো বিদ্যুৎ সংযোগ। মাজায় ও পায়ে শিকল দিয়ে বাঁধা। সারাদিন শুধু হাত দিয়ে মাটি খুঁড়ে। হাঁটতে পারে না, কথা বলতে পারে না। শরীরে কোনো কাপড়-চোপড় রাখে না।’
এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য (মেম্বার, ৬নং ওয়ার্ড) মো. মোস্তাফিজুর রহমান চু্ন্নু জানান, রবিউল মানসিক ভারসাম্যহীন। দীর্ঘ প্রায় একযুগের বেশি তাকে শিকলবন্দি করে রাখা হয়েছে। তবে তারা সাহায্য-সহযোগিতার জন্য কখনো আসেন না। তারপরও সামনে কোনো সরকারি সুযোগ-সুবিধা আসলে তাদের পরিবারে খোঁজ নেয়া হবে।
Related
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।