বাঘ ও এক কটাই এর গল্প - BANGLANEWSUS.COM
  • নিউইয়র্ক, রাত ১:০২, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ


 

বাঘ ও এক কটাই এর গল্প

banglanewsus.com
প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২২
বাঘ ও এক কটাই এর গল্প


মীর লিয়াকত:::

পাকিস্তানী আমলের একটা শোনা গল্প। ঢাকার চিড়িয়াখানায় তখন বাঘের সংকট। প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খাঁ চিড়িয়াখানা সফরে আসছেন। তার বংশধর পা-চাটা মোনায়েম খান চিড়িয়াখানাকে সাজাচ্ছেন। নিজেই তদারকি করছেন। কোথায় বাঘ- থাকবে, কোথায় সিংহ থাকবে, কোথায় পিঞ্জর তৈরী হবে, কিভাবে গেট নির্মিত হবে ইত্যাদি।
এদিকে  চড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ  জানালো দু একটা বাঘ ছাড়া বাঘ সংগ্রহ করা যাচ্ছে না অমনি মোনায়েম খাঁ ক্ষেপে উঠলেন। তার হুকুম যেভাবে হোক প্রেসিডেন্টকে বাঘ দেখাতে হবে। তার সাথে বিদেশী মেহমান থাকবে। সবার নাকি রয়েলবেঙ্গল টাইগার দেখার খায়েশ। কর্তৃপক্ষ বাঘের জন্য গলদঘর্ম হলেন কিন্তু বাঘ পাওয়া গেল না।
তারা গর্ভনর মোনায়েম খাঁকে বললেন ‘স্যার আমরা ব্যবস্থা করছি যেভাবে হোক।’ তিনি সন্তুষ্ট হলেন। কারন কি করতে হবে প্রধান কর্তাকে ডেকে সব বলে তিনি নিশ্চিন্ত থাকলেন। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিলেন চিড়িয়াখানায় শূন্যপদে লোক নিয়োগ করা হবে।  পাঁচ জনকে নিয়োগ দেয়া হলো। তাদের কাজে যোগদানের দিন চিড়িয়াখানার কর্তা ব্যক্তিরা দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে এসে বললেন, ‘সবাইকে বাঘের ড্রেস পরে বাঘের খাঁচায় চক্কর দিতে হবে।’ এটা কি সম্ভব? নিয়োগপ্রাপ্তরা বেঁকে বসলো। কর্তা ব্যক্তি বললেন ‘ঠিক আছে, এ কাজ করলে তোমাদের পাঁচ জনকে মাসিক বেতন দশগুন বৃদ্ধি করে দেয়া হবে এবং এক বছরের বেতন অগ্রিম দেয়া হবে। এ কথা শুনে পাঁচজনই রাজি হয়ে অগ্রীম নিয়ে চলে গেলো। পরদিন কাজে এসে বাঘের পোষাক পরে চার পায়ে দাঁড়িয়ে খাঁচার মধ্যে চক্কর দিতে থাকলো। টেপ রেকর্ডে বাঘের গর্জন টেপ করে টেপ ছেড়ে দেয়া হলো। বোঝা গেল এরা সত্যিই সত্যিই বাঘ। গর্ভনর মোনায়েম খাঁ এসে দেখে খুব খুশি হলেন। প্রেসিডেন্ট আসার দিন পাঁচজনকে ভাগ করে এদিক ওদিকে খাঁচায় রাখা হলো। তাদের পাঁচজনের মধ্যে একজনের নাম ছিল কটাই। সে খুব খুশি।
এমনিতেই চাকরী বাকরী পাওয়া যায় না। এতো বেশি বেতনে এ রকম কাজ তো ভালই। সে খাঁচায় চক্কর দিতে দিতে ‘হালুম হুলুম’ করতে লাগলো। দর্শকের দিকে দ্রুত ছুটে গিয়ে ভয় দেখাতে লাগলো। এদিকে প্রেসিডেন্ট এসে গেছেন বিদেশী মেহমানসহ। পাশে পা-চাটা গর্ভনর মোনায়েম খাঁ কথায় কথায় হিঃ হিঃ করে হাসছেন। তখনো প্রেসিডেন্ট কটাইর খাঁচার সামনে পৌঁছেননি। এদিকে হয়েছে কি Ñ কটাইর পাশের খাঁচায় ছিল ইয়া বড় একটা সিংহ। মাঝখানের দরজাটাও খুলে আছে। সিংহটা কটমট করে ওর দিকে তাকাচ্ছে দেখে ভয়ে চুপসে গেলো কটাই।
নিশ্চই সিংহটা ওকে চিনে ফেলেছে। এখনি হয়তো এসে ওর ঘাড় মটকে দেবে। দশদুগুনে বিশ হাজার টাকার চাকরীতো যাবেই সেই সাথে পৈত্রিক প্রানটাও বুঝি এবার যায়! হায়! হায়! এখন কটাই কোথায় যায় ? এই ভাবনায় কটাই পাগল প্রায়!
কটাই ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে তাকাচ্ছিল সিংহের দিকে। সিংহটা নড়েচড়ে উঠলো। প্রেসিডেন্টও এ সময় তার বহরসহ পাশের খাঁচায় বানর দেখছেন। ঠিক ঐ সময় কটাই আব্বাগো বলে প্রানান্ত চিৎকার করে উঠলো। সাথে সাথে সিংহটা এক লাফে কটাই এর খাঁচায় ঢুকে পড়লো। কটাই বুঝলো এই বুঝি সিংহ তার ঘাড় মটকে দিল! কিন্তু না! সিংহ তড়িঘড়ি করে বললো
‘আরে বেটা চিল­াস ক্যান! তুই হলি বিশ হাজার টাকা বেতনের বাঘ, আর আমি চলি­শ হাজার টাকা বেতনের সিংহ। তুই যা আর আমিও তা। চুপ থাক হারামজাদা!’
কটাই খাঁচার বাইরের দিকে তাকিয়ে দেখলো প্রেসিডেন্টসহ সবাই খাঁচার সামনে দাঁড়িয়ে। ওর চিৎকার শুনে সবাই খাঁচার সামনে জড়ো হয়েছেন। প্রেসিডেন্ট বললেন,
‘কি হে মোনায়েম খাঁ, তোমার বাঘ, সিংহ দেখি মানুষের মতো চিৎকার করে? ইয়ে কিয়া হ্যায়।’
মোনায়েম খাঁ বললো,
‘ইয়ে তো সুন্দরবনকা অরিজিন্যাল বাঘ হ্যায়। লেকিন বাত কিয়া সমজ মে নেহি আতা! চিড়িয়াখানার সব লোগকা চাকরী খেয়ে ফেলতা হ্যায়! আপ ফিকির মত করিয়ে। কালই হাম দেখ লেঙ্গে।’
ফিরে অতিথিদের বললেন
‘বাঙ্গাল মুলুক সে বহুত আজীব চিড়িয়া রেহতা হ্যায়। ইসি লিয়ে ইসি মুলুক মে হাম ডরতা হ্যায়। ইয়ে বাঘ ভি কয়ি যাদু কা বাঘ হো সেকতা। চলিয়ে চলিয়ে। জলদি জলদি ইধারসে ওয়াপস পিন্ডি যানা পাড়ে গা। বাঙ্গাল বহুত খতরনাক আদমী হ্যায়।’
মোনায়েম বললো
‘হামতো আপকা ঠ্যাংকা জুতা হ্যায় হুজুর।’
প্রসিডেন্ট মেহমানদের নিয়ে দ্রুত হেলিকপ্টারে উঠে চিড়িয়াখানা ত্যাগ করলেন, গল্পটা শেষ এখানেই।
আসলে পা-চাটা কুকুরদের কখনো বিশ্বাস করতে নেই। এরাই একদিন পতন ডেকে আনে। আমাদের সমাজেও সর্বদা পা-চাটা কুকুর থেকে সাবধান থাকা উচিত। কারন এরা পারে না এমন কোন কাজ নেই। খোঁজ নিয়ে দেখুন, পেয়ে যাবেন আশেপাশে অবলীলায়- কখনো একায় একায়- কখনো জোড়ায় জোড়ায়- আবার কখনো গন্ডায় গন্ডায়!

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।