ডেস্ক রিপোর্ট: নরসিংদীতে গত তিন সপ্তাহে ডায়রিয়ার প্রকোপে আক্রান্তের হার বিগত যেকোন সময়ের চেয়ে অনেক বেশি।
মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে চতুর্থ সপ্তাহ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে জেলার সবকটি সরকারি হাসপাতালে ডায়রিয়ার চিকিৎসা নিয়েছেন ৩ হাজারেরও বেশি মানুষ। এছাড়াও এই সময়ের মধ্যে জেলায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন এক শিশুসহ তিনজন। এক সঙ্গে এত সংখ্যক রোগীকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে জেলার স্বাস্থ্য বিভাগকে।
সিভিল সার্জনের কার্যালয় বলছে, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের অধিকাংশকেই চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে ১০০ শয্যা বিশিষ্ট নরসিংদী জেলা হাসপাতাল ও নরসিংদী সদর হাসপাতালে। এর বাইরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর সংখ্যা ছিল খুবই কম। শুধু এই দুই প্রধান হাসপাতালেই গত তিন সপ্তাহে তিন হাজারেরও বেশি ডায়রিয়ার রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। একদিনেই জেলা হাসপাতালে ডায়রিয়ার রোগী ভর্তি ছিল ১৫০ জন। অন্যদিকে সদর হাসপাতালের বারান্দায় রোগীদের রাখতে হয়েছে। বেড ও স্যালাইন সংকটের মধ্যে এসব রোগীদের পর্যাপ্ত সেবা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডায়রিয়ায় মারা যাওয়া তিনজনের মধ্যে পলাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও নরসিংদী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের বয়স ৪০-৫০ এর মধ্যে। এছাড়া পৌর শহরের এক শিশু তার বাসায় মারা গেছে। তাদের প্রত্যেকেরই পাতলা পায়খানা ও বমি হচ্ছিল।
নরসিংদী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) লোপা চৌধুরী জানান, মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরুর দিকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীরা আমাদের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসতে থাকেন। প্রথম দিকে প্রতিদিন গড়ে চার-পাঁচ জন করে রোগী চিকিৎসা নিতে আসলেও ১২ তারিখ থেকে এক ধাক্কায় ৮০-৮৫ জন করে রোগী আসতে শুরু করেন।
তিনি আরও জানান, তাদের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি হন অন্তত ২০-২২ জন। প্রতিদিনই এই পরিমাণ রোগী ভর্তি হতে শুরু করলে তৃতীয় সপ্তাহে গিয়ে আমরা হিমশিম খেতে শুরু করি। অন্যান্য রোগীর পাশাপাশি একদিনেই ডায়রিয়ার রোগী ভর্তি ছিলেন শতাধিক। হাসপাতালের বারান্দায়ও তাদের ভর্তি রেখে চিকিৎসা দিতে হয়েছে। তবে বর্তমানে রোগী ভর্তির সংখ্যা ওই তুলনায় কিছুটা কম।
রোগীর সঙ্গে আসা জামাল হোসেন বলেন, হাসপাতালে কোন বেড খালি নেই। এ কারণে আমার রোগীকে মাটিতে শুয়ে রাখছি। আর হাসপাতালে মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে রোগী।
নরসিংদীর সিভিল সার্জন মো. নূরুল ইসলাম জানান, গত তিন সপ্তাহে জেলাজুড়ে ডায়রিয়ার চিকিৎসা নিয়েছেন ৩ হাজারেরও বেশি মানুষ। অন্যদিকে মারা গেছেন তিনজন। তাদের মধ্যে এক শিশু তার নিজের বাসায় ও অন্য দুই ব্যক্তি শেষ মুহূর্তে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে মারা যান। ডায়রিয়ার এত রোগীকে একসঙ্গে চিকিৎসা দিতে গিয়ে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। তবে স্যালাইনসহ পর্যাপ্ত চিকিৎসা সামগ্রী আমাদের কাছে রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, শিশুসহ সব বয়সী ব্যক্তিদেরকে এখন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হতে দেখা যাচ্ছে। এই সময় ডায়রিয়ার হাত থেকে বাঁচতে বাইরের খোলা খাবার বর্জন করতে হবে এবং অবশ্যই পানি ফুটিয়ে খেতে হবে।
Related
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।