বিশেষ প্রবন্ধ: রাশিয়া, চীন, কিউবা, উত্তর কোরিয়া, ভেনেজুয়েলায় মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সীমিত বলে পশ্চিমের দেশগুলো খুবই উচ্চকণ্ঠ। আর তাদের দেশে এই স্বাধীনতা বিরাজমান বলে তারা দাবি করতে পছন্দ করে। ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার হামলার পর থেকে রাশিয়া ও তার নাগরিকদের ওপর যে অবরোধ দেওয়া হয়েছে, তা ইতিহাসে এর আগে কখনো ঘটেনি। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ক্রীড়া সংস্থায় রাশিয়ার নাগরিকদের বাদ দেওয়া হয়েছে। একাডেমিক গবেষণায় ও পূর্বনির্ধারিত একাডেমিক সম্মেলনে যোগদানের জন্য অর্থসহায়তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে; এমনকি সেখানে যোগদানের সুযোগও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে রুশ নাগরিকদের জন্য।আধুনিক অর্থনীতির প্রবাদপুরুষ জে এম কেইন্সকে পশ্চিমাদের অনেকেই ‘সিউডো-কমিউনিস্ট’ তথা ‘ছদ্মবেশী কমিউনিস্ট’ বলে গালি দিতে পছন্দ করেন। কারণ, তিনি আমেরিকার মহামন্দা কাটিয়ে উঠতে যে ব্যবস্থাপত্র দিয়েছিলেন, তাতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর সরকারের কর্তৃত্বের কথা বলেছিলেন। কিন্তু আসলে তিনি ছিলেন পুঁজিবাদী অর্থনীতির একজন প্রবক্তা।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯১৯ সালে ভার্সাই চুক্তির প্রাক্কালে ইংল্যান্ড থেকে পাঠানো দলে প্রধানমন্ত্রী, ডেভিড লয়েড জর্জের উপদেষ্টা হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন জে এম কেইন্স। জার্মানির ওপর ইংল্যান্ড-আমেরিকা গংদের চাপিয়ে দেওয়া শাস্তিমূলক ব্যবস্থার বিরোধিতা করেছিলেন প্রফেসর কেইন্স। কিন্তু তাঁর কথায় কর্ণপাত না করায় তিনি উপদেষ্টার পদ ছেড়ে দেন। তাঁর বাবার কাছে এক চিঠিতে জার্মানির ওপর এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থাকে ‘সমগ্র ইউরোপের মহাবিপর্যয়’ হিসেবে বর্ণনা করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অপরাধের জন্য জার্মানির ওপর শাস্তিমূলক ব্যবস্থাকে প্রফেসর কেইন্স বলেছিলেন ‘ইউরোপের মহাবিপর্যয়’ আর ইউক্রেন যুদ্ধের শুরুর দিক থেকেই রাশিয়ার ওপর এই নজিরবিহীন আবরোধকে আমি বলছি ‘সমগ্র বিশ্বের মহাবিপর্যয়’।
এ অবরোধ পুঁজিবাদ-প্ররোচিত অখণ্ড বিশ্বতত্ত্বেরই বিরুদ্ধে যায়। কারণ, অখণ্ড বিশ্বতত্ত্বের সারকথা হলো বিশ্বের প্রতিটি মানুষকেই শামিল করতে হবে উন্নয়নধারায়, সুযোগ দিতে হবে সব দেশের সব নাগরিককে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার। তা ছাড়া, আজ ইউক্রেনের যে শিশু ক্ষুধার জ্বালায় কান্না করছে, কাল রাশিয়ার একটি শিশুও হয়তো কান্না করবে এক ফোঁটা দুধের অভাবে। রাজনীতিকদের ভুলের জন্য, দেশের সাধারণ মানুষকে কষ্ট দেওয়ার নৈতিকতার দিক যদি বাদও দিই, এই সর্বাত্মক অবরোধ নিছক অর্থনীতির নিয়মেই সারা বিশ্বের জন্যই ব্যাপক ভোগান্তি সৃষ্টি করবে। যার ফল ইতিমধ্যেই দেখা দিতে শুরু করেছে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি মধ্য দিয়ে।
Related
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।