সতর্কতায় ব্লাড ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানো সম্ভব

Daily Ajker Sylhet

editorbd

০১ জুন ২০২৪, ০৪:৫৪ অপরাহ্ণ


সতর্কতায় ব্লাড ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানো সম্ভব

ডেস্ক রিপোর্ট: ব্লাড ক্যান্সার নামটি শুনলেই আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। একসময় ব্লাড ক্যান্সার মানেই যেন ছিল সাক্ষাৎ মৃত্যু। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে। ব্লাড ক্যান্সার এখন অনেকটাই চিকিৎসার আয়ত্তে চলে এসেছে। বেশ কয়েক ধরনের ব্লাড ক্যান্সার এখন হয়ে উঠেছে নিরাময়যোগ্য। ব্লাড ক্যান্সার এবং সেটির চিকিৎসা নিয়ে অনেকের অনেক ধরনের জিজ্ঞাসা থাকে। অনেক ভুল ধারণা, মিথ্যা, গুজবও থাকে। ব্লাড ক্যান্সার কী? ব্লাড ক্যান্সার হলো রক্ত কোষের ক্যান্সার। লিউকেমিয়া, লিম্ফোমা ও মায়োলোমা-প্রধানত এই তিনটি ক্যান্সারই হলো ব্লাড ক্যান্সার। রক্ত কোষ তৈরি হয় বোন ম্যারো বা অস্থিমজ্জায়। তৈরির পর কয়েকটি ধাপে কোষগুলো পরিণত হয়ে তারপর রক্তপ্রবাহে আসে। যদি কোনো কারণে এই কোষগুলো অতিমাত্রায় বিভাজিত হয় এবং ঠিকভাবে পরিপক্ব না হয়ে রক্তপ্রবাহে চলে আসে, তখন এরা শরীরের কোনো কাজে তো আসেই না, উল্টো নানা ধরনের উপসর্গ তৈরি করে। মূলত নানা ধরনের শ্বেত রক্তকণিকাই এতে আক্রান্ত হয় বেশি। কারণ-
ব্লাড ক্যান্সার কেন হয়? এই প্রশ্নের উত্তর নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। নানা ধরনের তেজস্ক্রিয়তার প্রভাব, রাসায়নিক বর্জ্য, ধূমপান, কৃত্রিম রং, কীটনাশক, ভাইরাস ইত্যাদিকে দায়ী করা হয়। এগুলোর প্রভাবে জিনে মিউটেশন ঘটে যায় ও কোষ বিভাজনে অস্বাভাবিক উল্টাপাল্টা সংকেত প্রবাহিত হয়। তখন কোষ বিভাজনে অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়, অপরিণত অস্বাভাবিক কোষ রক্তপ্রবাহে চলে আসে।

ব্লাড ক্যান্সার কি ছোঁয়াচে? ব্লাড ক্যান্সার ছোঁয়াচে বা সংক্রামক নয়। এটি ছোট-বড় যে কারো হতে পারে। এটা রক্তবাহিত, যৌনবাহিত, পানিবাহিত এমন কিছুই নয়। রোগীর সঙ্গে থাকলে, তাকে স্পর্শ করলে, খাবার খেলে, তার রক্ত গায়ে লাগলে, তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করলে এই রোগ ছড়াবে না।
লক্ষণ: জ্বর, রক্তশূন্যতা, ত্বকে র্যাশ, হাড়ে ব্যথা, দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত যাওয়া-এসব লক্ষণগুলো একসঙ্গে দেখা দিলে সাবধান হয়ে যাবেন। সন্দেহ করতে পারেন যে আপনার ব্লাড ক্যান্সার হয়েছে। ব্লাড ক্যান্সারের প্রকারভেদ: সাধারণত ব্লাড ক্যান্সারকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। একটি হলো অ্যাকিউট বা তীব্র এবং অন্যটি হলো ক্রনিক বা দীর্ঘস্থায়ী। তীব্র ব্লাড ক্যান্সারের ফলে শরীরে হঠাৎ অপরিণত শ্বেত রক্তকণিকার পরিমাণ বেড়ে যেতে থাকে। যেটি শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যেই সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। এটি দুই ধরনের হতে পারে-তীব্র মাইলয়েড লিউকেমিয়া এবং তীব্র লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া। অন্যদিকে দীর্ঘস্থায়ী ব্লাড ক্যান্সারের ফলে দেহে তুলনামূলকভাবে পরিণত শ্বেত রক্তকণিকার পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়। মূলত ৫০-৬০ বছর বয়সীদের মধ্যে এই রোগটি প্রায়ই দেখা যায়। এটিও দুই প্রকারের হতে পারে, দীর্ঘস্থায়ী মাইলয়েড লিউকেমিয়া এবং দীর্ঘস্থায়ী লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া। অ্যাকিউট লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়ায় সাধারণত প্লীহা, যকৃৎ বড় হয়ে যায়, অর্গান বড় হয়ে যায়, কিন্তু অ্যাকিউট মায়েলয়েড লিউকেমিয়ায় এ ধরনের কিছু দেখা যায় না। অ্যাকিউট লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া যেটাকে আমরা বলি এএলএল, এটা কম বয়সীদের বেশি হয়। যেমন-শিশু-বালকদের বেশি হয় আর অ্যাকিউট মায়েলয়েড লিউকেমিয়া একটু বেশি বয়স্কদের হয়। অ্যাকিউট লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়ায় রক্তক্ষরণ একটু কম, তবে অ্যাকিউট মায়েলয়েড লিউকেমিয়ায় তুলনামূলক একটু বেশি। এ ছাড়া আরো এক ধরনের ব্লাড ক্যান্সার দেখা যায়। যেটি শরীরের লিম্ফোনোডকে আক্রান্ত করে। একে লিম্ফোমা বলে। লিম্ফোমা প্রায় ৪৫ ধরনের হতে পারে। এর কয়েকটি লক্ষণ হলো-ঘাড়, কুঁচকির মতো শরীরের বিভিন্ন অংশ ফুলে যাওয়া। মায়েলোমা হলো প্লাজমা কোষের ক্যান্সার। এই ক্যান্সারের উৎপত্তি রক্ত থেকে হলেও তা মূলত শরীরের হাড়কে আক্রান্ত করে। নিশ্চিত হবেন কিভাবে? রক্তের ফিল্ম বা পিবিএফ পরীক্ষা করলেই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রোগ বোঝা যায় লিম্ফোব্লাস্টিক নাকি মায়েলয়েড? তবে নিশ্চিত হতে হলে বোনম্যারো পরীক্ষা করতে হবে। ফ্লো সাইটোমেট্রি বা ইমিউনোফেনোটাইপ সরকারি হাসপাতালে করা যায়। এগুলো হলো নিশ্চিতকরণ পরীক্ষা। সাইটোজেনেটিকস করা হয় রিস্ক অ্যাসেসমেন্টের জন্য। ট্রিটমেন্টের ক্ষেত্রেও সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। রোগীর ভালো হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু, কী চিকিৎসা তার জন্য ভালো হবে এসব।
চিকিৎসা: ব্লাড ক্যান্সারের মূল চিকিৎসা হলো কেমোথেরাপি। এ ছাড়া ইমিউনোথেরাপি এবং ক্ষেত্রবিশেষে রেডিওথেরাপিও প্রয়োগ করা হয়। ক্রনিক লিউকেমিয়ায় টারগেটেড থেরাপি বেশ কার্যকর। চিকিৎসার চিত্রটাই বদলে দিয়েছে নতুন নতুন টারগেটেড থেরাপির আবিষ্কার। এর সঙ্গে সাপোর্টিং চিকিৎসা হিসেবে অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিফাংগাল, অ্রান্টিভাইরাল, রক্ত পরিসঞ্চালন ইত্যাদিও ব্যবহৃত হয়। বোন ম্যারো প্রতিস্থাপন হলো তুলনামূলক কার্যকর ব্যবস্থা। তবে এই চিকিৎসা এখনো যথেষ্ট ব্যয়বহুল। আর দেশের সব প্রতিষ্ঠানে তা হয়ও না। দীর্ঘ মেয়াদে চিকিৎসা নিতে হয়। উচ্চ ব্যয় এবং দীর্ঘ মেয়াদের কারণে বেশির ভাগ সময়ই রোগীরা চিকিৎসার বিষয়ে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ে।
প্রতিরোধে করণীয়: যেহেতু ব্লাড ক্যান্সারের সঠিক কারণ প্রায়ই অজানা, তাই এটি প্রতিরোধ করা সব সময় সম্ভব হয় না। তবে স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা বজায় রাখা, কিছু রাসায়নিক এবং বিকিরণের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা, বংশগত রোগের ইতিহাস সম্পর্কে সচেতন থাকা, নিয়মিত ব্যায়াম করা, স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা, মদ্যপান ও ধূমপান না করা, কিছু সংক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করা, নিয়মিত চেকআপ করালে ব্লাড ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

সুত্র:এফএনএস ডটকম

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।